কবীর সুমনের ইচ্ছা, মৃত্যুর পর তার সব সৃষ্টিকর্ম যেন ধ্বংস করে ফেলা হয়। বলেছেন, এটা না করলে তাকে অপমান করা হবে। আর এই কাজের দায়িত্বও তিনি দিয়েছেন একজনকে। চান, তার মরদেহ যেন দান করা হয় চিকিৎসার কাজে।
৭১ বছর বয়সী এই গায়ক, গীতিকার, কম্পোজার ফেসবুকে ‘ইচ্ছাপত্র’ লিখেছেন। মৃত্যু কামনা করছেন না তিনি। তবে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে, এই বোধ থেকেই এই লেখা।
শুক্রবার বেলা দুইটার দিকে নিজের ফেসবুক পেজে এই ‘ইচ্ছাপত্র’ পোস্ট করে একটি ব্যাখ্যাও দেন সুমন।
এতে সুমন লেখেন, ‘আমার সমস্ত পাণ্ডুলিপি, গান, রচনা, স্বরলিপি, রেকর্ডিং, লেখার খাতা, পেনড্রাইভ যেন কলকাতা পৌরসভার গাড়ি ডেকে তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়, সেগুলো ধ্বংস করার জন্য।
‘আমার কোনো কিছু আমার মৃত্যুর পর যেন পড়ে না থাকে। আমার ব্যবহার করা যন্ত্র, সরঞ্জাম যেন ধ্বংস করে ফেলা হয়। এর অন্যথায় আমার অপমান করা হবে।'
মৃত্যুর এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার মৃন্ময়ী তোকদার নামে এক নারীকে দিয়ে গেছেন।
স্ট্যাটাসের নিচে মৃন্ময়ী কমেন্ট করে বলেন, 'আমি সাধ্যাতীত চেষ্টা করব আমার দায়িত্ব পালনের।'
সুমন চাইছেন মৃত্যুর পর তার দেহ সৎকার নয়, ব্যবহার হবে চিকিৎসার গবেষণায়।
সুমন লেখেন, ‘আমার মৃতদেহ যেন দান করা হয় চিকিৎসা কাজের জন্য। কোনো স্মরণসভা নয়, শোক সভা নয়, প্রার্থনা সভা যেন না হয়।’
কবীর সুমনের ইচ্ছাপত্র। ছবি তার ফেসবুক থেকে নেয়া
সজ্ঞানে, সচেতন অবস্থায় এই সিদ্ধান্ত
প্রখ্যাত এই গায়ক জানান, সজ্ঞানে, সচেতন অবস্থায়, স্বাধীন ভাবনা চিন্তা ও সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে এই নির্দেশনা দিয়েছেন।
বলেছেন, ‘কখন কী ঘটে যায়, আবেগহীনভাবে সবাইকে জানিয়ে রাখছি। কারণ, হঠাৎ কিছু ঘটে গেলে কঠিন সমস্যা দেখা দেয়।’
এই ইচ্ছাপত্রকে ‘এটা এক প্রবীণ মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞপ্তি’ উল্লেখ করে সুমন লেখেন, ‘অনেক অভিজ্ঞতার পর অনেক ভেবেচিন্তে লিখছি, যাতে ফেসবুকে এটা অনেকেই জেনে যান।’
ভক্তদের আবেগের বশবর্তী হয়ে উপদেশ-পরামর্শ না দেয়ার কথাও বলেন সুমন। বলেন, ‘আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি, যাব।’
জীবনে কোনো হতাশা, দুঃখ, ব্যর্থতাবোধ, অবসাদ নেই জানিয়ে সুমন লেখেন, ‘আমি সানন্দে বেঁচে আছি।… আমি জানি আমি সানন্দে, খুশি মনে মারা যাব।’