অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনের গাওয়া ‘সর্বত মঙ্গল রাঁধে’র কপিরাইট নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এর জেরে গানটির মিউজিক ভিডিও ইউটিউব ও ফেসবুক থেকে সরিয়ে নিয়েছে আয়োজক ‘আইপিডিসি আমাদের গান’।
তারা ২১ অক্টোবর তাদের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে গানটি প্রকাশ করার পর তা অল্প সময়েই ছড়িয়ে পড়ে।
গানটি ভাইরাল হওয়ার পরপরই ‘সরলপুর’ নামের একটি বাংলাদেশি ব্যান্ডের লিড ভোকালিস্ট মার্জিয়া আমিন তুরিন ফেসবুকে এক খোলা চিঠিতে গানটির কপিরাইট নিজেদের দাবি করেন।
এর আগে তারা চঞ্চল-শাওনের গাওয়া গানটির সঙ্গীত পরিচালক সোলস ব্যান্ডের লিড গিটারিস্ট ও ভোকাল পার্থ বড়ুয়া এবং ‘আইপিডিসি আমাদের গান’ এর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন কপিরাইট ইস্যুতে।
তারা গানটি ইউটিউব ও ফেসবুক থেকে সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধও জানান। এ অনুরোধে গানটি সরিয়ে নেয় ‘আইপিডিসি আমাদের গান’।
‘আইপিডিসি আমাদের গান’ বলছে, তাদের উদ্দেশ্য বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের গান, লোকজ গান সবার সামনে তুলে ধরা। এর অংশ হিসেবে চঞ্চল-শাওনের গাওয়া গানটি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এর আগেও এ ধরনের দুটি গান করেছে তারা।
‘সরলপুর’ ব্যান্ডের সদস্য ও লিড ভোকালিস্ট মার্জিয়া আমিন তুরিন তার ফেসবুকে গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্যে ওই খোলা চিঠি লেখেন।
এতে তিনি বলেন, ‘আমরা সরলপুর ব্যান্ড ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশে সঙ্গীত চর্চা করে আসছি। এ পর্যন্ত ৫০টির মতো মৌলিক গান তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন কনসার্ট, টেলিভিশন লাইভ শোতে আমাদের আনরিলিজ ট্র্যাক হিসেবে ১০/১২টি গান ইতিমধ্যেই শ্রোতামহলে দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে।
‘এর মধ্যে আমাদের কীর্তন ধারার একটি মৌলিক গান ‘যুবতি রাধে’ মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে এবং খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সম্প্রতি, গানটি নিয়ে মানুষের মাঝে নানা ধরনের বিভ্রান্তিও ছড়িয়ে পড়েছে যে এটি ময়মনসিংহ গীতিকা থেকে সংগৃহীত একটি গান।'
খোলা চিঠিতে মার্জিয়া আমিন তুরিন বলেছেন, ‘মূলত গানটি আমাদের ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ভোকাল ও গিটারিস্ট তারিকুল ইসলাম তপনের লেখা ও সুর করা। এ গানটি সরলপুর ব্যান্ড শুরু থেকেই পরিবেশন করে আসছে।
‘কিন্তু বিভিন্ন সময় আমাদের গানটি অনেকেই নিজের বলে প্রকাশের চেষ্টা করে এসেছেন। যার ফলে ২০১৮ সালে আমরা গানটির কপিরাইট সংগ্রহ করি।'
এ বিষয়ে পার্থ বড়ুয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেস্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
চঞ্চল চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, 'এ গানের ৭-৮ টা ভার্সন ইউটিউবে আছে। এমন অবস্থায় যে কেউ ভাববে গানটির কোনো কপিরাইট ইস্যু নেই। গানটা অনেক আগের গান, কেউ হয়তো সুর বদলাতে পারে। বা কিছু কথা বদলাতে পারে। কিন্তু গানের মালিকানা যে কেউ দাবি করতে পারে- তা চিন্তা করা যায় না।'
তিনি বলেন, ‘গানটা করার আগে যদি কোনো ক্লু পাওয়া যেত এর কপিরাইট সম্পর্কে; পার্থ দা বা আইপিডিসি তাদের সে স্বীকৃতি দিত। সুমি মির্জার গাওয়া গানটিও তারা (সরলপুর ব্যান্ড) এভাবে সরিয়ে দেয়। কিন্তু তারপরও ইউটিউবে সুমি মির্জার কণ্ঠে একই গানের আরো দুই-তিনটি ভার্সন আছে। তাহলে কপিরাইট ইস্যুতে সে গানগুলো কেমন করে ইউটিউবে আছে?’
চঞ্চল বলেন, ‘আমাদের গানটা মানুষের ভালো লেগেছে বলেই ভাইরাল হয়েছে। সে কারণেই তারা এটা সরিয়ে নিয়েছে। যেন এটা আর না শোনা হয়। আমার মনে হয়, গানটা না সরিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টা মিটমাট করে ফেলা যেত।'
এ প্রসঙ্গে মেহের আফরোজ শাওন নিউজবাংলাকে বলেন, 'গতকালের ঘটনার পর আমি নিজে গানটা নিয়ে জানার চেষ্টা করলাম। যতদূর জানতে পারলাম গানটা শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন এবং দ্বিজকানাই নামের একজন বাউল সাধকের লেখা। এ ধরনের শেকড়ের গানগুলো আসলে কোথাও লেখা থাকে না। বাউলদের মুখে মুখেই থাকে।
‘এ ধরনের গান নিয়ে কিছু সমস্যা হয়। পরে যখন কোনো শিল্পী গানগুলো গায় তখন কিছুটা এদিক-ওদিক করে নেন। কিন্তু তাহলে কি গানটা তার নিজস্ব হয়ে যায়?’
শাওন আরো বলেন, ‘গানটা একটা প্রচলিত গান। যেখানে সম্ভবত সরলপুর কিছু অংশ নিজের মতো লাগাতেও পারে। ওনাদেরও দাবি একজন বাউল সাধকের থেকে গানটি পেয়েছেন ২০০৮ সালে, তারপর বাকি অংশ নিজেরা লিখেছেন।
‘এখন আমার প্রশ্ন, তারা যে বাউল সাধকের কাছ থেকে গানটা পেয়েছেন, সে সাধকের নাম কেন কোথাও তারা উল্লেখ করেনি? আমার মনে হয়, এ ধরনের শেকড়ের গানের, মৌলিক গানের কপিরাইট হওয়া উচিত নয়।'