কিশোর কুমার দুই বাংলার মানুষের কাছে এক জনপ্রিয় নাম। অভিনেতা অশোক কুমারের ছোট ভাই কিশোর ১৯৪৬ সালে অভিনয় দিয়ে বলিউডে পাও রেখেছিলেন। তবে অভিনয় তাকে ধরে রাখতে পারেনি।
গানের সুরেই জীবন পার করতে চেয়েছিলেন তিনি। ১৯৪৮ এ ‘জিদ্দি’ সিনেমায় ‘মারনে কি দুয়ায় কিউ মাঙ্গু’ গানের মধ্য দিয়ে তার সঙ্গীত জীবন শুরু।
এর পরপরই গানের পাশাপাশি সিনেমায় অভিনয়ের জন্য অনেক প্রস্তাব পান কিশোর কুমার। ভাই অশোক কুমারের ইচ্ছা ছিল কিশোর কুমার তার মতোই অভিনেতা হবেন। তবে অভিনয়ে আগ্রহ না থাকায় ইচ্ছা করেই পরিচালক ও প্রযোজকদের কাছে নিজের নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করতেন কিশোর কুমার।
১৯৪৬ থেকে ১৯৫৫ সালের মধ্যে ২২টি সিনেমায় তিনি অভিনয় করেন। তার মধ্যে ১৬টিই বাণিজ্যিকভাবে সফলতা পায়নি। ১৯৫৫ সালের পর কিশোর কুমার অভিনয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তারপরের ২৫টির বেশি সিনেমা বাণিজ্যিকভাবে সফলতা পায়।
তিনি একাধারে গায়ক, সুরকার, পরিচালক ও অভিনেতা ছিলেন।
কিশোর কুমার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভক্ত ছিলেন। চাইতেন তার সঙ্গীত জীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাজের প্রতিফলন ঘটাতে। নিউজিল্যান্ডের কান্ট্রি মিউজিকের অন্যতম অগ্রদূত টেক্স মরটন ও আমেরিকার জিমি রজারসের গানও প্রভাবিত করেছিল কিশোর কুমারকে।
ধর্মেন্দ্র, রাজেশ খান্না, দেব আনন্দ, দিলিপ কুমার, ঋষি কাপুর, অমিতাভ বচ্চন, মিঠুন চক্রবর্তী সহ ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অনেক অভিনেতার জন্য গান গেয়েছেন কিশোর কুমার। তবে তার বেশিরভাগ গান ছিল রাজেশ খান্নার জন্য।
‘রূপ তেরা মাস্তানা’, ‘জিন্দেগি এক সাফার’,‘ছু কার মেরে মান কো’ তার অন্যতম হিন্দি গান।
বাংলা গানের মধ্যে ‘সেই রাতে রাত ছিল পূর্ণিমা’, ‘আজ এই দিনটাকে মনের খাতায় লিখে রাখো’, ‘আশা ছিল ভালোবাসা ছিল’, ‘ভালোবাসা ছাড়া আর আছে কি’ – এ ধরনের অনেক গান নতুন প্রজন্মের কাছেও জনপ্রিয়।
৫৮ বছর বয়সে ১৯৮৭ সালের ১৩ অক্টোবর পৃথিবী থেকে বিদায় নেন কিশোর কুমার। এর আগের দিন তিনি তার জীবনের শেষ গান রেকর্ড করেন; সহশিল্পী ছিলেন আশা ভোসলে। গানটির শিরোনাম ‘গুরু গুরু’। ‘ওয়াক্ত কি আওয়াজ’ সিনেমায় মিঠুন চক্রবর্তীর জন্য এ গান রেকর্ড করা হয়।
কিশোর কুমারের অপ্রকাশিত একটি গান ‘তুম হি তো ওয়ো হো’ ২০১২ সালে নিলামে বিক্রি হয় ১৮ লাখ টাকায়। গানটি তার মৃত্যুর তিন দিন আগে রেকর্ড করা হয়।
আজ ১৩ অক্টোবর এ শিল্পীর ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী।