বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লন্ডন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সুমিতের ‘নোনা জলের কাব্য’

  •    
  • ১২ অক্টোবর, ২০২০ ২৩:১৯

লন্ডন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ৬৪তম আসরে সিনেমাটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হতে যাচ্ছে অক্টোবরের ১৩-১৭ তারিখ। এর কিছুদিন পরেই সিনেমাটির এশিয়ান প্রিমিয়ার হবে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, বুসান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে।

‘নোনা জলের কাব্য’ সিনেমা তৈরির পুরো যাত্রাটা দেড় বছরের। নানা বাধাবিপত্তি পেরিয়ে তরুণ নির্মাতা রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত পরিচালিত এ সিনেমাটি ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি পাওয়া শুরু করেছে।

লন্ডন ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, যেখানে বিশ্বের অন্যতম বাছাই করা সিনেমা প্রদর্শন করা হয়, তার ৬৪তম আসরে সিনেমাটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হতে যাচ্ছে অক্টোবরের ১৩-১৭ তারিখ। এর কিছুদিন পরেই সিনেমাটির এশিয়ান প্রিমিয়ার হবে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, বুসান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে।      

সিনেমার পেছনের গল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে সুমিত বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে পড়ার সময় কৌতুহল বশত তানভীর মোকাম্মেলের চলচ্চিত্র নিয়ে এক প্রশিক্ষণে অংশ নেই। ক্যামেরার পেছনের গল্প আমাকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করে। এ আকর্ষণ থেকেই নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে চলচ্চিত্র নির্দেশনা বিষয়ে পড়তে যাই।   

‘২০১৪ তে একটি ফুল ফিচার ফিল্মের স্ক্রিপ্ট লিখতে বলা হয় আমাকে। লিখতে বসে আমার মন চলে যায় বাংলাদেশের এক জেলেপাড়ায়, যেখানে ২০০৮ এ সিডর পরবর্তী সময়ে ঘুরতে গিয়েছিলাম।    

‘সেখানের প্রান্তিক জেলেদের দুঃসাহসিক জীবনের গল্প, সমুদ্রের সঙ্গে লড়াই আমাকে আকর্ষণ করে। প্রায় দুই বছর ধরে গবেষণা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের পর লেখা হয় নোনা জলের কাব্যর স্ক্রিপ্ট।‘   

সিনেমার তৈরির গল্প নিয়ে জানতে চাইলে সুমিত আরো বলেন, ‘এ ধরনের চিত্রনাট্যের জন্য আর্থিক সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা বাংলাদেশে নেই। একটা স্ক্রিপ্টকে লম্বা সময় ধরে বিকাশ করার জন্য কেউ সাহায্য করতে চায় না। এ অবস্থায় আমাকে কো-প্রোডাকশনের জন্য ভাবতে হলো।   

‘গোয়ার ফিল্ম বাজার কো-প্রোডাকশন মার্কেটে স্ক্রিপ্টটি বিদেশি প্রযোজক, পরিচালক ও সিনেমার সঙ্গে জড়িতদের সামনে স্ক্রিপ্ট প্রিচ করার সুযোগ হয় ২০১৬ সালে।’

সেখান থেকে ফরাসি প্রযোজক ইলান জিরার্দ এ স্ক্রিপ্ট নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হন জানিয়ে সুমিত বলেন, ‘এর পরের কয়েক মাস ধরে স্ক্রিপ্টটি ফরাসি জাতীয় অনুদান, স্পাইক লি রাইটিং গ্রান্ট এবং বাংলাদেশ থেকে জাতীয় চলচ্চিত্র অনুদান ও মেড ইন বাংলাদেশ অনুদান পাই আমরা। এসব আর্থিক সহায়তা নিয়ে ২০১৭ এর বর্ষাকালে শুটিং শুরু করি।’   

সিনেমার কলাকুশলীদের নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পটুয়াখলী ও চট্টগ্রামে দুই মাস ধরে সিনেমার শুটিং চলে। ফজলুর রহমান বাবু, শতাব্দী ওয়াদুদ, তিতাস জিয়া, তাসনোভা তামান্না, অশোক ব্যপারী এতে অভিনয় করেন।  

সিনেমাটোগ্রাফার চানানুন চতরুংরোজ ও তারেক মাসুদের মাটির ময়নার প্রোডাকশন ডিজাইনার সিল্ভান নাহমিয়াসকে নিয়ে শুটিং চলতে থাকে। বাংলাদেশের প্রোডাকশন কোম্পানি হাফ স্টপ ডাউন এ সিনেমায় নির্মাণ সহযোগিতা দেয়।

সুমিতের কাছে নিউজবাংলার প্রশ্ন ছিল- তরুণ নির্মাতাদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশি সিনেমার যাত্রা কি পারবে কিছুটা হলেও দেশের সিনেমার বর্তমান চিত্র পাল্টাতে?

জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার মতে শুধু নির্মাতাদের দিয়ে হবে না। আমার মতো নির্মাতারা যদি দ্বিতীয় সিনেমা বানাতে না পারে বা পরবর্তী কাজের জন্য দেশ থেকে কোনো সহায়তা না পায়, তাহলে পরিচালনাকে পেশা হিসেবে নিয়ে পরিবর্তনটা করার সুযোগ হবে না। যারা সিনেমা তৈরিতে সত্যিকার অর্থেই আগ্রহী ও যাদের যোগ্যতা আছে তাদেরকে সরকারি-বেসরকারিভাবে সহায়তা করতে হবে।’

কী কী ভাবে তারা সহায়তা করতে পারে জানতে চাইলে সুমিত বলেন, ‘যেমন সিনেমা ডেভেলপমেন্ট ল্যাব তৈরি করা, অনুদানগুলো আরো শক্তিশালী করা, ফিল্ম বাজার বা ফেস্টিভ্যালগুলোর সাথে যোগাযোগ করার রাস্তা তৈরি করে দেয়া। এসব করলে আমার মনে হয় আমাদের ইন্ডাস্ট্রিটা দাঁড়াবে।’

তাকে আরো প্রশ্ন করা হয়, সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে ব্যবসায়িক রূপ দিতে সরকারি বা বেসরকারি সংস্থাগুলোকে বিনিয়োগে আগ্রহী করতে নির্মাতারা কী করতে পারে?

উত্তরে সুমিত বলেন, ‘যেখানে ব্র্যান্ড ভ্যালু বা সম্মান আছে, ব্যবসাকে বাড়ানোর সুযোগ আছে সেখানে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ করে। নির্মাতারা যেটা করতে পারেন, কিছু সময় নিয়ে ভালো সিনেমা তৈরি করতে; যেগুলো ব্যবসায়িকভাবে অথবা আন্তর্জাতিক ফেস্টিভ্যালগুলোতে সফলতা পাবে। তখন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোও চিন্তা করবে এমন সিনেমার সঙ্গে যদি আমার ব্র্যান্ডকে জুড়ে দেই তাহলে প্রতিষ্ঠানের প্রচার ও ব্যবসায়িক লাভ দুটোই হবে।   

‘কিন্তু সরকারের দায়িত্ব জাতির মননশীলতা গড়ে তোলা। তার জন্য সরকার যেটা করতে পারে তা হলো, সিনেমাগুলো প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে দেয়া। বাংলাদেশে শুধুমাত্র স্টার সিনেপ্লেক্সে যদি সিনেমা দেখতে হয় তাহলে এ বিকাশটা হবে না। সিনেমা প্রদর্শন করতে হবে ৬৪ জেলা শহরে।‘

‘একটা সিনেমা লন্ডন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে যাচ্ছে, বুসানে যাচ্ছে কিন্তু আমাদের দেশে এর কোনো উদযাপন নেই’, ক্ষোভের সঙ্গে বলেন তরুণ এ পরিচালক।

তিনি আরো বলেন, একজন পরিচালক হিসেবে তিনি সিনেমা বানিয়ে যাবেন। সিনেমাগুলো যদি কিছুটা আলোড়ন তৈরি করতে পারে, তখন তিনি দেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে দাঁড় করানোর সাহায্য পাবেন উপরের মহল থেকে। 

এ বিভাগের আরো খবর