ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ করছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন বিভিন্ন অঙ্গনের তারকারা।
তারকাদের মধ্যে রয়েছেন ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। শনিবার রাতে ফেসবুকে এক ভিডিও পোস্ট করে সে তালিকায় যুক্ত হন আলোচিত নায়ক অনন্ত জলিল।
ভিডিওতে ধর্ষণের প্রতিবাদ জানালেও এর জন্য নারীদের পোশাককেই দায়ী করেছেন ব্যবসায়ী নায়ক।
তার এ পোস্ট নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেছেন তারকাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এমন বাস্তবতায় আগের ভিডিও থেকে সমালোচিত অংশ ফেলে আবার পোস্ট করেন।
এর ক্যাপশনে তিনি বলেন, ‘গতকালকের ভিডিওতে আমি মূলত মেয়েদেরকে শালীনতা বজায় রাখার জন্য বলতে চেয়েছি। অনেকেই বিষয়টিকে পজিটিভভাবে নিয়েছেন। আবার অনেকেই নেগেটিভভাবে নিয়েছেন।’
‘আমি কোনো বিতর্কে জড়াতে চাই না। তাই আমি উক্ত বিষয়টি কারেকশন করে দিলাম। কেউ ভুল বুঝে থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।’
এর আগের ভিডিওতে ধর্ষণকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, ‘তোমাদের সামনে তোমাদের স্ত্রী-কন্যাকে যদি কেউ র্যাপ (ধর্ষণ) করে, তাহলে তোমার কেমন লাগবে? তুমি একটা অমানুষ; তোমার ভালোই লাগবে বোধ হয়। না হলে অন্যের মা, বোনকে র্যাপ করতে পারতে না।’
‘কবে তোরা নিজেকে মানুষ মনে করবি? তোর জন্য তোর বাবা-মা কলঙ্কিত।’
ভিডিওতে মেয়েদের উদ্দেশে অনন্ত বলেন, তিনি ‘একজন ভাই হিসেবে’ কিছু কথা বলতে চান। এরপর তিনি পোশাকের বিষয়টি টেনে আনেন।
‘খোঁজ দ্য সার্চ’ দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা অভিনেতা বলেন, ‘সিনেমা, টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়াতে অন্য দেশের মেয়েদের অশ্লীল, অশালীন ড্রেসআপ দেখে নিজেরা একই ড্রেসআপ করে ঘোরাফেরা করো। তোমাদের ড্রেসের দিকে তাকিয়ে তোমাদের ফিগার দেখে বখাটে ছেলেরা বিভিন্নভাবে মন্তব্য করে এবং র্যাপ করার চিন্তা তাদের মাথায় আসে।’
‘তোমরা কি নিজেদেরকে মডার্ন মনে করো? এটা কি মডার্ন ড্রেস নাকি অশালীন ড্রেস?’
‘মডার্ন ড্রেসের’ সংজ্ঞা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘মহান আল্লাহ তায়ালা তোমাকে যে সুন্দর চেহারাটা দিয়েছেন, সে চেহারাটা দেখা যাবে। কিন্তু যে শরীরটা আছে, সেটা ঢেকে রাখতে হবে। পাশের এক ভদ্র মেয়েকে জিজ্ঞেস করে দেখো যে, তোমাকে কত বাজে লাগে দেখতে।’
‘ছেলেদের মতো একটা টি-শার্ট পরে রাস্তায় বের হয়ে যাও। মডার্ন মেয়ে তুমি। তারপর ইজ্জত শেষ করে যখন বাসায় যাও হয় আত্মহত্যা করো, না হয় মানুষের সামনে মুখ দেখাতে পারো না। তখন কোথায় থাকে এই মডার্নগিরি?’
অনন্ত মনে করেন, ‘শালীন ড্রেস’ পরলে ছেলেরা মেয়েদের দিকে শ্রদ্ধার চোখে তাকাবে, সম্মান দেবে।
ভিডিওর একপর্যায়ে ধর্ষণকারীদের ‘প্রিয় ভাই’ সম্বোধন করেন এ অভিনেতা। তিনি বলেন, ‘আমার প্রিয় ভাইয়েরা, তোমাদের আগে আমি তুই করে বলেছি এ জন্য আমি দুঃখিত। কিন্তু তোমরা একটু চিন্তা করে দেখ তোমরা যা করছ, তা ঠিক কি না।’
ভিডিওর শেষ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করে তিনি বলেন, ‘আপনি আমাদের অভিভাবক। আপনাকেই এই ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ডের আইন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।’
শনিবার রাতে অনন্তের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে পোস্ট হওয়া ভিডিওটি মুছে দেয়া হয় রোববার বিকেলে।
আগের ভিডিওটি সাত লাখের বেশি বার দেখা হয়েছে। পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ শেয়ার করেছে।
কমেন্টে ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ তাকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন। তবে অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন, গায়িকা এলিটা করিমসহ অনেকে ব্যাপক সমালোচনা করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে।