যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় চলছিল টিভি সিরিজ ‘মেয়ার অফ ইস্টটাউনের’ শুটিং। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে ১৩ মার্চ হঠাৎ প্রোডাকশনের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সিরিজটিতে গোয়েন্দা চরিত্রে অভিনয় করছিলেন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী কেট উইন্সলেট। প্রোডাকশান বন্ধ হওয়ায় সে সময় লন্ডনের বাড়িতে ফিরে আসতে হয় তাকে। সেখানেই অবস্থান করছেন গত পাঁচ মাস ধরে।
দীর্ঘ এ সময় অভিনয় থেকে দূরে থাকাটা মেনে নিতে পারছেন না আলোচিত অভিনেত্রী। এ নিয়ে দ্য হলিউড রিপোর্টারের কাছে প্রকাশ করেছেন নিজ অভিব্যক্তি।
কেট বলেন, ‘করোনাভাইরাস নিয়ে শুরুতে কোনো ধারণা ছিল না আমাদের। মানুষের শরীরে এর প্রভাব কী হবে, তাও জানতাম না আমরা। এ কারণে ভয়টা বেশি ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমি খুব বাস্তবিক ও বিবেচক প্রকৃতির। জরুরি পরিস্থিতির সঙ্গে দ্রুত খাপ খাওয়াতে পারি।’
ভাইরাসসৃষ্ট মহামারী নিয়ে ২০১১ সালে ‘কনটেইজন’ নামের একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন স্টিভেন সোডেরবার্গ । ৪৪ বছর বয়সী ব্রিটিশ অভিনেত্রী কেট ওই চলচ্চিত্রে অন্যতম মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন ।
গত বছরের শেষের দিকে চীনের উহান থেকে দ্রুতই ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। কনটেইজনে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকায় ভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই সতর্ক ছিলেন কেট।
করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে কড়া সতর্ক ব্যবস্থা নেন এ অভিনেত্রী। তিনি বলেন, ‘মানুষ আমাকে পাগল ভাবত। কারণ সপ্তাহ কয়েক ধরে ফিলাডেলফিয়ার রাস্তাঘাটে আমি মাস্ক আর গ্লাভস পরে ঘুরে বেড়াচ্ছি। মুদির দোকানে যাচ্ছি। সবকিছু হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করছি। ১৩ মার্চ হঠাৎ সব কিছু পাল্টে যায়। তখন সবাই মাস্ক পরার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।’
তিনি বলেন, ‘আমার কাছের দুজন বন্ধু করোনায় আক্রান্ত হয়। একজন লস অ্যাঞ্জেলেসে থাকে। সে বেশ ভাগ্যবান। চিকিৎসা শুরুর ৭২ ঘণ্টা পর প্লাজমা ব্যবহারের পর থেকে ভালো আছে সে।'
'আরেকজন থাকে লন্ডনে। সে একজন ডায়ালেক্ট কোচ। তাকে হাসপাতালে ১১ সপ্তাহ থাকতে হয়েছিল। ফুসফুস, রক্ত ও রক্তচাপের পরীক্ষার ফল ভালো এলেও এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি সে। শ্বাসকষ্ট ও অবসন্নতা যাচ্ছে না তার।’
সবকিছু ঠিকঠাক চললে চলতি মাসেই ‘মেয়ার অফ ইস্টটাউনের’ শুটিং শুরু হওয়ার কথা। এ বিষয়ে কেট বলেন, ‘সেপ্টেম্বরে কাজ আবার শুরু হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘ বিরতির কারণে মনে হচ্ছে অভিনয় করতে ভুলে গেছি। তবে শারীরিক দূরত্ব মেনে শুটিং করা কখনো কখনো অসম্ভব হয়ে পড়বে।’
মাত্র পাঁচ বছর বয়সে অভিনয় করার আগ্রহ জাগে কেটের। সেই স্মৃতির কথাও দ্য হলিউড রিপোর্টারকে জানান নামী এই অভিনেত্রী।
তিনি বলেন, ‘ইংল্যান্ডের বার্কশায়ারের খুব ছোট্ট একটি ঘরে মা-বাবা আর তিন ভাইবোনের সঙ্গে বড় হয়েছি। এত স্বচ্ছল ছিলাম না আমরা। আমাদের ঘরের দেয়াল কাগজের মতো পাতলা বস্তু দিয়ে তৈরি। পাশের ঘরের শব্দ খুব সহজে শোনা যেত। এমনকি প্রতিবেশীর কথাবার্তাও শোনা যেত।’
তিনি বলেন, ‘একদিন আমি টয়লেটে ছিলাম। ঘরের নানা ধরনের শব্দ ভেতর থেকে শুনতে পাচ্ছিলাম। মা বোনকে বকা দিচ্ছে, তাও শুনছিলাম। সে সময় মনে হলো, মা ঘরের ভেতর যা করছে, একটা ভিডিও ক্যামেরায় সে সবকিছু যদি শুট করা যেত, তাহলে মনে হবে তিনি অভিনয় করছেন। আসলে কিন্তু তিনি অভিনয় করছেন না।'
কেট বলেন, ‘অভিনয় নিয়ে খুব বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল না আমার। বাবা অভিনেতা ছিলেন। নানা-নানী-মামা সবাই অভিনেতা ছিলেন। তারা অভিনয় পেশাটাকে উপভোগ করছে, তা আমি বুঝতাম।'
'সারা জীবন তারা এ কাজই করেছেন। তেমন টাকা-পয়সা না থাকা নিয়ে মা-বাবা উদ্বেগে থাকতেন না। আমিও তাদের মতো টাকা-পয়সা নিয়ে ভাবিনি। আমার শুধু মনে হয়েছে, আমি হয়তো থিয়েটার অভিনেত্রী হব। আর যদি ভাগ্যবান হই, তাহলে বড়জোর টিভিতে অভিনয় করব।’
কেট উইন্সলেটের চলার পথ অবশ্য থিয়েটার বা টিভিতে থেমে থাকেনি। অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতারা তার সঙ্গে কাজ করেন।
২০০৮ সালে ‘দ্য রিডার’ চলচ্চিত্রে সেরা অভিনেত্রী ক্যাটাগরিতে অস্কার পান কেট। এ ছাড়া ‘সেন্স অ্যান্ড সেনসিবিলিটি’, ‘টাইটানিক’, ‘আইরিস', ‘ইটারনাল সানশাইন অফ দ্য স্পটলেস মাইন্ড', ‘লিটল চিলড্রেন’ ও ‘স্টিভ জোবস’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য অস্কার মনোনয়ন পান তিনি।