সংবাদ প্রকাশের পর আইডি নম্বর পেয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রথম বর্ষের (১৮তম আবর্তন) শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার তাদের আইডি নম্বর ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
নিউজবাংলায় সংবাদ প্রকাশের পর মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বিভাগ থেকে আইডি নম্বর জানতে পারে। এতে কিছুটা হলেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে শিগগিরই তাদের হাতে আইডি কার্ডের হার্ড কপি তুলে দেয়ার দাবিও জানানা তারা।
প্রায় আড়াই মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২০২৩ সেশনে ভর্তি হলেও এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড পাননি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। চলতি বছরের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হলেও তাদের আইডি কার্ড সরবরাহ করা হয়নি। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন বিভাগে দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা শুরুর তারিখও ঘোষণা করা হয়েছে। এক সেমিস্টার শেষের পথে থাকলেও আইডি কার্ড হাতে না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এ নিয়ে মঙ্গলবার খবর প্রকাশ করে নিউজবাংলা। ‘আড়াই মাসেও পরিচয়পত্র পাননি জবি শিক্ষার্থীরা’ শিরোনামের ওই খবর প্রকাশের পরপরই নড়েচড়ে বসে জবি কর্তৃপক্ষ। এর ঠিক একদিন পেরোতেই বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের তোড়জোড় দেখা গেছে। আইডি কার্ড না পেলেও আপাতত শিক্ষার্থীরা তাদের আইডি নম্বর নিজ নিজ বিভাগের অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বিগত বছরগুলোতে শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড প্রিন্টের কাজটি করত রেজিস্ট্রারের দপ্তর। তবে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি সেলকে এই দায়িত্ব দেয়া হলেও রেজিস্ট্রারের অনুমতি ছাড়া তারা কাজটি করতে পারে না। অন্যদিকে এই দীর্ঘ সময়ে কোনো দপ্তরই আইডি কার্ড প্রিন্টের ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়নি। এ সমন্বয়হীনতার ভুক্তভোগী হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড না থাকায় বিভিন্ন সময় ভোগান্তি পোহাতে হয় বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। গণপরিবহনে ভ্রমণসহ বিভিন্ন কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড প্রদর্শন করে ছাত্র হিসেবে সুবিধা না নিতে পারায় তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সমাজকর্ম বিভাগের সেলিম ভূইয়া নামের এক শিক্ষার্থী অভিযোগ জানিয়ে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড না থাকায় বাসে হাফ পাস দিতেও সমস্যা হয়। আমাকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে কেউ বিশ্বাসই করতে চায় না। সফট কপি প্রিন্ট করে লেমিনেটিং করে নিয়েছি, কিন্তু অনেক সময় সেটি অনেকে মানতে চায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের এত দিন হয়ে গেল, এখনও কর্তৃপক্ষ আমাদের আইডি কার্ড হাতে দিতে পারল না। এটা এই বিশ্বিবদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে খুব কষ্টের একটি বিষয়।’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান মুনিয়া বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ডটা আমাদের খুবই প্রয়োজন। এখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুবই খারাপ। এই সময়ে অন্তত আইডি কার্ডটা থাকলে আমাদের কিছুটা হলেও রেহাই মিলত।’
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সালসাবিল ইসলাম প্রত্যাশা বলেন, ‘অবরোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বাস চলে না। আমাদের লোকাল বাসে আসতে হয়। সেক্ষেত্রে আইডি কার্ডটার প্রয়োজনীয়তা আমরা অনুভব করি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করে আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী তিথী ইসলাম বলেন, ‘আইডি নম্বর পেয়েছি। এখন বৃত্তির কাগজপত্র জমা দিতে পেরেছি। খুব দ্রুত আইডি কার্ডটা দিয়ে দিলে চলাফেরায় সমস্যা দূর হতো।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার আচার্য্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আইডি নম্বর অ্যাকাডেমিক শাখায় পাঠানো হয়েছে। তারা প্রতিটি বিভাগ ও ইন্সটিটিউটে পাঠিয়ে দেবে। আশা করছি, খুব শীগগিরই শিক্ষার্থীরা আইডি কার্ডও নিজ নিজ বিভাগ থেকে সংগ্রহ করতে পারবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আইডি নম্বর দেয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে আইডি কার্ডও পৌঁছে যাবে। বৃত্তির কাগজপত্রের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শাখায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানানো হয়েছে।’