বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘চা-চপ’: উপাচার্যকে আক্রমণে সাবধান করল ঢাবি

  •    
  • ১৭ জুন, ২০২১ ২৩:৪০

‘গঠনমূলক সমালোচনা সহ্য করার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শ্রদ্ধাশীল। একইসঙ্গে, কেউ যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সমালোচনার রীতিনীতি ও মূল্যবোধ উপেক্ষা করে ব্যক্তিগত আক্রমণ বা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মানহানি ঘটায় তাহলে দেশের আইন যে তার প্রতিকার দেয় সে বিষয়েও কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের সমালোচনার ক্ষেত্রে সাবধান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞপ্তিতে ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য বোঝাতে উপাচার্য চা চপের কম দাম বলে যে হাস্যরস করেছিলেন, সেটি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না করলেও সেদিনের বক্তব্যর প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, ‘গঠনমূলক সমালোচনা সহ্য করার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শ্রদ্ধাশীল। একইসঙ্গে, কেউ যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সমালোচনার রীতিনীতি ও মূল্যবোধ উপেক্ষা করে ব্যক্তিগত আক্রমণ বা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মানহানি ঘটায় তাহলে দেশের আইন যে তার প্রতিকার দেয় সে বিষয়েও কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল।’

সেই প্রসঙ্গটি সামনে এসেছে একটি ইংরেজি দৈনিকের একটি প্রতিবেদনের পর।

তবে আড়াই বছর ধরে যে বক্তব্য নিয়ে তোলপাড়, সেটি নিয়ে এখন বিশ্ববিদ্যালয় কেন অতি সংবেদনশীল হয়ে গেল, তা নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পায়নি নিউজবাংলা।

বিষয়টি নিয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা দেননি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে আইনি পদক্ষপ নেয়া হবে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন এসেছে এবং এটা ভুল, সেটা উল্লেখ করেছেন তিনি।

উপাচার্য বলেন, “আমার মনে হয় না আজকের বিজ্ঞপ্তিতে 'সমালোচনা করলে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে' এরকম কিছু বুঝানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে এ রকম কিছু উল্লেখ থাকারও কথা না। এখন যারা এভাবে শিরোনাম করছে এটি তাদের মূল্যবোধ এবং নৈতিকতার বিষয়। আমাদের কাজ তথ্যগুলোর স্পষ্টকরণ। আমরা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সেটি করেছি।’

‘চা চপের’ সেই বক্তব্যের প্রসঙ্গে

বিজ্ঞপ্তিতে উপাচার্যের তুমুল আলোচিত সেই বক্তব্য তুলে না ধরে সেদিনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়, ‘২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে টিএসসিতে নবীন শিক্ষার্থীদের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপাচার্য মহোদয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরেন। তিনি ক্যাম্পাসের মানবিক, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক গৌরবময় অধ্যায়ের কথাও বলেন। আর্থিক সঙ্গতি, পারিবারিক পেশা, জাতি, ধর্ম-সংস্কৃতি ও জন্মস্থান নির্বিশেষে প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমতাভিত্তিক অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গির কথাও তিনি উল্লেখ করেন।

‘সহজ, সরল, সাধারণ ও সাবলীল জীবনাচারের গুরুত্বের কথাও উপাচার্য বলেন। অনুষ্ঠানস্থল টিএসসির গৌরবময় ভূমিকাও প্রসঙ্গক্রমে চলে আসে। তিনি নবাগত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হাস্যরসে ক্যাফেটেরিয়ার সাধারণ, স্বল্পমূল্যের খাবার মেন্যু ও সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধার অবারিত সেবাকার্যক্রমের কথাগুলোও বলেন। বস্তুত সর্বজনীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক, সমতাভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ঐতিহ্য হিসেবে উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের নিজেদের জীবনে এসবের প্রতিফলনের পরামর্শ দেন।’

ওই বক্তব্যের উপাচার্য উল্লেখ করেন যে, কম দামের চা চপ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যগুলোর একটি। আর তার অন্যান্য কথার মধ্যে এই বিষয়টিই বেশি গুরুত্ব পায়। আর প্রায় আড়াই বছর ধরেই ব্যাপক আলোচনায় আছে সেই প্রসঙ্গটি।

বিজ্ঞপ্তিতে সেই বক্তব্য সামনে আসার প্রসঙ্গ তুলে বলা হয়,‘পরে জানা গেল, একটি টেলিভিশনের ক্যামেরাবিহীন এক সাংবাদিক অনাহূতভাবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে উপাচার্যের বক্তব্যের মূল অংশ কাটছাট করে এবং ক্ষেত্র বিশেষে বাক্য ও শব্দ অবলোপন করে ক্যাফেটেরিয়ার বিভিন্ন খাবার আইটেমের মূল্যমান সংক্রান্ত বক্তব্যের অংশবিশেষ নিয়ে ১৫-২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল করে।’

সেই সাংবাদিক পরে সেজন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘একজন শিক্ষক হিসেবে উপাচার্য বিষয়টিকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছেন।’

টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ার খাবার মেন্যুর নজিরবিহীন স্বল্পমূল্য বিষয়ে উপাচার্যের মন্তব্য ‘বিবিসি বাংলা’ পরিচালিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সত্য প্রমাণ হয় বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়অ।

দুই বছর পর সেই প্রসঙ্গ কেন?

সম্প্রতি ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার উপাচার্যের একটি কার্টুন ছেপেছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

ইংরেজি দৈনিকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তুলনা করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাকালে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় যখন গবেষণা করছে, তখন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাস্তার ওপর বাঁশ দিয়ে বহিরাগতদের চলাচল সীমিত করতে ব্যস্ত।

প্রতিবেদনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ক্যাফেটরিয়াতে স্বল্প মূল্যে পাওয়া চা, চপ, শিঙাড়া নিয়ে ২০১৯ সালে নবীন শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপাচার্যের দেয়া বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা করা হয়।

এর প্রতিবাদে জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সেদিনের বক্তব্যকে খণ্ডিতভাবে প্রচার করা হয়েছে। যমুনা টেলিভিশনের এক সাংবাদিক উপাচার্যের বক্তব্যের মূল অংশ কাটছাঁট করে ক্যাফেটরিয়ার বিভিন্ন খাবার আইটেমের মূল্যমান-সংক্রান্ত বক্তব্যের অংশবিশেষ নিয়ে ১৫-২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও তৈরি করে। যা ভাইরাল হয়ে যায়।’

‘সেদিন উপাচার্য মূলত নবাগত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হাস্যরসে ক্যাফেটরিয়ার সাধারণ, স্বল্পমূল্যের খাবার মেন্যু ও সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধার অবারিত সেবা কার্যক্রমের কথা বলেছিলেন।’

এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সম্প্রতি কোনো কোনো দায়িত্বশীল মহল বিভিন্নভাবে বিষয়টি যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করছে, যা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত।

ইংরেজি দৈনিকের প্রতিবেদনে করোনা মহামারির সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা তুলে ধরে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে সাড়া দেয়নি। কোভিড-১৯ টেস্টিং কার্যক্রম শুরু করে বেশ দেরিতে। কিছুদিন পর আবার ল্যাব বন্ধ করে দেয়।

এই বক্তব্যকে বিভ্রান্তিকর দাবি করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোনো বিলম্ব ছাড়াই ১৯ মার্চ ২০২০ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞানী, জিন প্রকৌশলী ও প্রাণরসায়নবিদদের নিয়ে প্রথম ‘COVID-19 (Pandemic) রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন কমিটি’ গঠন করা হয়।

‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব উদ্যোগে বায়োসেফটি নিশ্চিত করে তিন সপ্তাহে তৈরি করা হয় কোভিড-১৯ টেস্টিং ল্যাব। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন পাওয়ার পর ৫ মে ২০২০ এটির উদ্বোধন করা হয়। সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং কয়েকজন শিক্ষক দ্বারা এটি পরিচালিত হতে থাকে। কোভিড-১৯ টেস্টের জন্য হাসপাতাল বা ডেডিকেটেড ল্যাবের মতো কোনো ল্যাব ও প্রশিক্ষিত জনবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল না। এ পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানিয়ে টেস্টিং কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করা হয়েছিল; ল্যাব বন্ধ করে দেয়া হয়নি। ১০ দিন পর যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে, জনবল সংগ্রহ করে পুনরায় টেস্টিং সেবা কার্যক্রম শুরু হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘অস্বীকার করার উপায় নেই, অক্সফোর্ড বা জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মৌলিক গবেষণা পরিচালনা করে টিকা/ঔষধ আবিষ্কার বা টেস্টিং কিট উদ্ভাবন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করতে পারেনি। তবে এর কারণ বোধকরি অনেকেই জানেন।’

এ বিভাগের আরো খবর