আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) স্থায়ী তহবিল থেকে অন্তত ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে জামায়াতে ইসলামীর চার নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
আইআইইউসি পরিচালনায় সরকার গঠিত বোর্ড অব ট্রাস্টিজ গঠিত অডিট কমিটি এই অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে।
এরমধ্যে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমির ও সাতকানিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য আ ন ম শামসুল ইসলাম ৬৩ লাখ টাকা, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান উল্লাহ ও জামায়াতের আইআইইউসি শাখা আমির মাহবুবুর রহমান ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা, কামাল উদ্দিন ৬০ লাখ টাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) তৌফিকুর রহমান সাড়ে ৩৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এই টাকার বিপরীতে অডিট কমিটি খরচের কোনো ভাউচার পায়নি।
আইআইইউসি পরিচালনায় সরকার গঠিত বোর্ড অফ ট্রাস্টিজ নিয়োজিত অডিট কমিটি গত ৯ মাসের হিসাব থেকে এসব টাকার হিসাবের গড়মিল পেয়েছে।
অভিযুক্ত শামসুল ইসলাম বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। আহসান উল্লাহ ছিলেন অর্থ কমিটির চেয়ারম্যান এবং মাহবুবুর রহমান ব্যবসায় অনুষদের ডিন ও কামাল উদ্দিন একটি বিভাগের পরিচালক ও তৌফিকুর রহমান ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) ছিলেন।
সরকারি গঠিত বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ড. আবু রেজা নদভী বলেন, ‘অডিট কমিটি গত ৯ মাসের হিসাব অডিট করে ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে। এর আগের হিসাব করলে সাবেক চেয়ারম্যানসহ অন্যান্যরা মিলে কত টাকা আত্মসাত করেছেন, তার ধারণা পাওয়া যাবে। এরইমধ্যে আমরা এই বিষয়ে থানায় মামলা করেছি।’
টাকা আত্মসাতের অভিযোগে থানায় মামলা
এদিকে আইআইইউসি সাড়ে ৩৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) তৌফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত রোববার রাতে সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ নগরের চান্দগাঁও এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে তৌফিকুর রহমানকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
এর আগে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান সহকারী পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) মো. ইয়াসিন আবু হাসান বাদী হয়ে সীতাকুণ্ড থানায় মামলা করেন।
মামলার এজাহারে ইয়াসিন আবু হাসান উল্লেখ করেন, তৌফিকুর রহমান ২০০৯ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) পদে কর্মরত ছিলেন। চলতি বছরের ৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নতুন ট্রাস্টি বোর্ড দায়িত্ব গ্রহণ করে। এরপর থেকে তৌফিকুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেন। তার সঙ্গে কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করলে তিনি চাকরি করবেন না বলে জানিয়ে দেন।
সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক বলেন, চাকরিকালে হিসাব শাখার ক্যাশিয়ার মো. শহিদুর রহমানের কাছ থেকে ৩৪ লাখ ৫২ হাজার ৬৫৫ টাকা তুলে নেন তৌফিকুর রহমান। এ টাকা জমা না দিয়ে তিনি কর্মস্থলে না আসায় তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা করে কর্তৃপক্ষ। পরে সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন তিনি কারাগারে আছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন শামসুল ইসলামকে একাধিবার ফোন করা হলেও তার নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। অর্থ কমিটির চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ ফোন রিসিভ করেননি।