বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এইচএসসির ফলাফল বিপর্যয়ের অনুসন্ধান

  • শিউলি আফরোজ সাথী ,মাগুরা   
  • ২০ অক্টোবর, ২০২৫ ২০:০৬

শিক্ষার্থীদের মোবাইল আসক্তি, শ্রেণিকক্ষে অনুপস্থিতি, ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা নীতি, রাজনৈতিক বিবেচনায় অদক্ষ শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষকদের প্রাইভেট বাণিজ্যসহ নানা কারণে এ বছর সারাদেশে এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় যশোর বোর্ডের অধীন মাগুরা জেলার তিনটি কলেজে একজনও পাশ করেনি। অধিকাংশ কলেজের শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করতে ব্যর্থ হয়েছে।

দৈনিক বাংলার পক্ষ থেকে পরীক্ষার ফল বিপর্যয়ের মূল কারণ খুঁজতে যেয়ে মাগুরার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুসন্ধান করলে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য উঠে আসে । এ বছর যশোর বোর্ডের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পাশের হার ৫০.২০ শতাংশ। জনসাধারণের মতে বিগত সরকারের আমলে লেখাপড়া নিয়ে যে প্রহসন চলেছে তা কাটিয়ে উঠতে শিক্ষার্থীদের একটু সময় লাগবে। দীর্ঘদিন ধরে পড়ালেখা থেকে শিক্ষার্থীরা অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। আসক্ত হয়ে পড়েছে মোবাইলে। ঘুষ দুর্নীতির কারণে অযোগ্য শিক্ষক দ্বারা বেশিরভাগ কলেজ পরিচালনা করা হতো। এ বছর মাগুরা জেলার পাশের হার ৩৭ শতাংশ।

মাগুরার অধিকাংশ কলেজের ফলাফল খারাপ হয়েছে। তার মধ্যে তিনটি কলেজের একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি। কলেজ তিনটি হল- মাগুরা সদর উপজেলার বজরুক শ্রীকুন্ডী কলেজ, রাওতড়া হৃদয়নাথ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মোহাম্মদপুর উপজেলার বীরেন শিকদার আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

এই তিনটি কলেজ থেকে অংশ নেওয়া কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি বলে অভিভাবকরা চরম হতাশায় ভুগছেন। সচেতন মহলের মাঝে চলছে নানা গুঞ্জন। জেলার শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে তোলা হচ্ছে নানা প্রশ্ন।

মাগুরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আলমগীর কবির জানান, পাশের হার শূন্য হওয়া তিনটি কলেজই নন এমপিও ভুক্ত। যার কারণে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষিত শিক্ষক, পাঠদান পদ্ধতি ও একাডেমিক তদারকির অভাব রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, মোহাম্মদপুর উপজেলার বীরেন সিকদার আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের সমস্ত কার্যক্রম চালানো হতো মাগুরা ২ আসনের এমপি শ্রী বীরেন শিকদারের নন প্রশিক্ষিত কিছু দলীয় লোকজন দ্বারা। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে দলীয় লোকজনকে এই কলেজে চাকরি দেওয়া হয়। এমনও গুঞ্জন আছে কোনো কোনো শিক্ষক প্রভাব খাঁটিয়ে দিনের পর দিন ক্লাস না নিয়ে শুধু হাজিরা খাতায় সই করে বেতন তুলতে যেত। বাকি অন্যান্য কলেজে ও প্রায় একই অবস্থা।

এ বছর মাগুরার সব কলেজগুলোর মধ্যে সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের ফলাফল মোটামুটি ভালো হয়েছে। এ কলেজের পাশের হার ৭২ শতাংশ। ৮৮৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৬৩৮ জন। জিপিএ -৫ পেয়েছে ৭৩ জন। এছাড়া সদর উপজেলার অন্যান্য কলেজগুলোর ফলাফল খুব একটা ভালো হয়নি। সরকারি মহিলা কলেজের ৬৬৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ২০৭ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ জন। মাগুরা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের ৪৫৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৭০ জন। আলোকদিয়া কলেজে ৩৪৮ জনের মধ্যে পাশ করেছে ৭২ জন।

ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মাগুরা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর রিজভী জামান দৈনিক বাংলাকে জানান, সরকারি কলেজের এইচএসসির ফলাফল মোটামুটি ভালো হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য কলেজের ফলাফল খারাপ হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে, তার মধ্যে মোবাইলে আসক্তি, দক্ষ শিক্ষকের অভাব এবং কর্তৃপক্ষের কিছু গাফিলতি রয়েছে। আরো একটি বড় কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা।

মাগুরা সরকারি মহিলা কলেজের এইচএসসির ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ জানতে চাইলে অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. জহিরুল ইসলাম পাটোয়ারী বলেন, বিভিন্ন সময় বাইরের কলেজের নানা রকম পরীক্ষার ছিট পড়ে মহিলা কলেজে যার ফলে প্রায়ই তাদের ক্লাস বন্ধ রাখতে হয়। এরপর থেকে টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে কাউকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে না। তাছাড়া অভিভাবকদের ও সন্তানদের লেখাপড়ার বিষয়ে উদাসীনতা লক্ষ্য করা গেছে। অভিভাবক সমাবেশ ডাকলে মাত্র ৪-৫ জন অভিভাবক আসেন কলেজে।

এ ব্যাপারে মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কাজী শামসুজ্জামান কল্লোল বলেন, বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক কারণে কলেজে ক্লাসের থেকে অনুষ্ঠান বেশি হয়েছে। এছাড়া নানা কারণে টেস্ট পরীক্ষা অনেক আগে অর্থাৎ গত নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে যেটা হওয়ার কথা ছিল ফেব্রুয়ারি মাসে। আর টেস্ট পরীক্ষার পরে কোনো শিক্ষার্থী কলেজে আসে না। যার কারণে বিগত বছরে শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো ক্লাস করতে পারেনি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই ইংরেজি এবং আইসিটিতে ফেল করেছে।

মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী কাজী আফিফা এবং হোসনেয়ারা জানান, অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা কলেজে এসে ফোন দেখে আবার অনেকে ক্লাস বাদ দিয়ে বাইরে চলে যায়। আবার অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা ইংরেজি এবং আইসিটি কম বোঝে বলেই এত বেশি ফেল করেছে।

শুধু কলেজ নয় অনেক হাই স্কুলেও দেখা যায় আইসিটি অনেকেই বুঝতে পারে না ক্লাসে কম্পিউটারের সাহায্যে প্রাক্টিক্যালি যেভাবে ক্লাসগুলো নেওয়ার কথা থাকে সেভাবে শিক্ষা দেওয়া হয় না ফলে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে ।

এছাড়াও শিক্ষার্থীরা আরো জানায়, অনেক সময় শিক্ষকরা ক্লাসে এসে ক্লাসের পড়া বাদ দিয়ে নানা রকম গল্প করেন এবং ফোন টিপে সময় নষ্ট করে চলে যান । আবার অনেকে বাইরে কোচিং করায় সময়মতো ক্লাসে আসে না অনেক শিক্ষক। যার কারণে পরেরদিন শিক্ষার্থীরা কলেজে যাওয়ার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করে।

ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ সম্পর্কে মাগুরা প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল খারাপ হওয়ার প্রধান কারণ দক্ষ শিক্ষকের অভাব। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে টাকার বিনিময়ে অদক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়াই শিক্ষার্থীরা যথাযথভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

এ ব্যাপারে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, শিক্ষার্থীদের বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে হবে সেই সাথে কলেজে যাওয়া বাধ্যতামূলক করে যথাযথ পাঠদানের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার্থীরা যেন কলেজ বাদ দিয়ে শুধু কোচিংয়ের দিকে না ঝুঁকে । আর ক্লাস চলাকালীন কোনো শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর হাতে মোবাইল ফোন থাকবে না।

অভিভাবক মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, অনেক শিক্ষক আছেন যারা পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে কিছুই বোঝেন না যার কারণে বইয়ের বাইরে শিক্ষার্থীদের কোনো শিক্ষা দেয়া হয় না। এর কারণে সিলেবাসের বাইরে কোনো প্রশ্ন আসলে শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারে না।

অন্যান্য অভিভাবকরা বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থা আগের মত করা হোক অর্থাৎ বইয়ের মধ্যে সব গল্প থাকবে সেখান থেকে পড়ে যেন শিক্ষার্থীরা সব উত্তর খুঁজে পায়। মোবাইল দেখে যেন কোনো উত্তর খুঁজতে না হয়। মোবাইলে উত্তর খোঁজার বাহানায় অনেকে টিকটক করে আবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে চ্যাট করে সময় নষ্ট করে।

এ বিভাগের আরো খবর