ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর জন্য সরকারী উদ্যোগে তৈরি ‘ইউনিক আইডি’র তথ্য পূরণের ক্ষেত্রে পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)।
স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের তথ্য ছক পূরণের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়েছে।
এই নতুন উদ্যোগে প্রতিটি শিক্ষার্থীর মৌলিক ও শিক্ষা সংক্রান্ত সব তথ্য থাকবে এক জায়গায়।
মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
কোভিড -১৯ মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের তথ্য ছক পূরণের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জমা দেয়ার এ কর্মসূচী বাধাগ্রস্ত হয়েছিল।
ব্যানবেইসের দেয়া নতুন পাঁচটি নির্দেশনা বিজ্ঞপ্তিতে তুলে ধরা হয়েছে।
১. শিক্ষার্থীদের পূরণকৃত তথ্য ছকের তথ্য জন্মনিবন্ধন কর্তৃপক্ষের ডেটাবেজে পাঠানোর পর ইউনিক আইডি পাবার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অনলাইন জন্মনিবন্ধন প্রয়োজন হবে। শিক্ষার্থীদের ম্যানুয়েল জন্মনিবন্ধন থাকলে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের ডেটাবেজ থেকে তাদের ইউনিক আইডি পাওয়া যাবে না।
২. শিক্ষার্থীদের বাবা অথবা মায়ের যে কোনো একজনের জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) নম্বর, নাম, জন্ম তারিখসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে হবে। এনআইডি নম্বর দেয়া হলে এক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদের প্রয়োজন নেই।
৩. শিক্ষার্থীদের রক্তের গ্রুপ তথ্য ফরমে দেয়া বাধ্যতামূলক নয়। এক্ষেত্রে রক্তের গ্রুপ পরবর্তী সময়ে দেয়া যেতে পারে।
৪. ২০২১ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদেরও তথ্য ছক পূরণ করতে হবে। তথ্য ছক পূরণের পর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের মাধ্যমে ডাটা এন্ট্রির কাজ শুরু করতে হবে।
৫. তথ্য ছক পূরণের বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী বা অভিভাবকের কাছ থেকে অর্থ নেয়া যাবে না । এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে যাতে কোনো রকমের হয়রানি বা ভোগান্তি সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে।
ইউনিক আইডি কেন?
দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর জন্য একটি ‘ইউনিক আইডি’ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর মৌলিক ও শিক্ষা সংক্রান্ত সব তথ্য থাকবে।
এজন্য ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ‘ইউনিক আইডি তথ্য ফরম’ চূড়ান্ত করেছে ব্যানবেইস।
স্ট্যাবলিশমেন্ট অফ ইন্টিগ্রেটেড এডুকেশনাল ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আইইআইএমএস) প্রকল্পের আওতায় তৈরি করা চার পৃষ্ঠার এই ফরমে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ শুরু হবে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক মো. শামসুল আলম।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ফরমের প্রথম পৃষ্ঠার একটি অনুলিপিতে দেখা গেছে, এতে শিক্ষার্থীদের মৌলিক বিভিন্ন তথ্যের জন্য সুনির্দিষ্ট ঘর রয়েছে।
ফরমে শিক্ষার্থীর নাম, জন্ম নিবন্ধন নম্বর, জন্মস্থান, জেন্ডার, জাতীয়তা, ধর্ম, অধ্যয়নরত শ্রেণি, রোল নম্বর, বৈবাহিক অবস্থা, প্রতিবন্ধিতা (ডিজঅ্যাবিলিটি), রক্তের গ্রুপ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কি না, মা-বাবার নামসহ বেশ কিছু তথ্যের ঘর রয়েছে।
এর মধ্যে কয়েকটি ঘরে উল্লেখ করা ‘অপশন’ ফেসবুকে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ফরমে জেন্ডারের ক্ষেত্রে পুরুষ/মহিলার পাশাপাশি ‘অন্যান্য’ অপশনও রাখা হয়েছে। ধর্মের ক্ষেত্রে ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ছাড়াও ‘নট আ বিলিভার’, 'রিফিউজ টু ডিসক্লোজ' ও ‘অন্যান্য’ অপশন রয়েছে।
বৈবাহিক অবস্থার অপশন হিসেবে অবিবাহিত, বিবাহিত, বিধবা, বিপত্নীক ছাড়াও স্বামী-স্ত্রী পৃথক বসবাস, তালাকপ্রাপ্ত, বিবাহবিচ্ছেদের ঘর রয়েছে।
অধ্যাপক শামসুল আলম নিউজবাংলাকে জানান, শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলে এই আইডি জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) রূপান্তরিত হবে।
তিনি বলেন, ‘কোনো শিশু জন্মগ্রহণ করলেই সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের অফিস অফ রেজিস্ট্রার জেনারেলের আওতায় তার জন্মনিবন্ধন হয়। আর ১৮ বছর পূর্ণ হওয়া সবার জন্য আছে জাতীয় পরিচয়পত্র। কিন্তু যারা প্রাইমারি, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী, অর্থাৎ যাদের বয়স ১৮ এর নিচে তারা কিন্তু এই সিস্টেমের বাইরে। এজন্য তাদের সিস্টেমের মধ্যে আনতেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ব্যানবেইসকে দায়িত্ব দিয়েছে।’
তিনি জানান, এই প্রকল্পের আওতায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর মৌলিক ও শিক্ষা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে ডেটাবেজ তৈরি করে ইউনিক আইডি দেয়া হবে। এ ছাড়া, প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিকে যারা অধ্যায়ন করছে, তাদের তথ্য সংগ্রহ করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষার্থীর তথ্য সংগ্রহের এই ফরম তৈরির বিষয়ে অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘সব কিছুই নাগরিকের মৌলিক উপাত্ত কাঠামো (সিটিজেন কোর ডেটা স্ট্রাকচার, সিসিডিএস) অনুযায়ী করা হয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় অনুবিভাগ ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে। আর আমাদের এই প্রকল্পের কমিটিতে এটুআই, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রতিনিধিরাও ছিলেন।’