ঝুলে থাকা পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে নীলক্ষেত ও সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করে অবস্থান নেয়ার পর এবার অনশনে বসেছেন এক শিক্ষার্থী।
পরীক্ষা চালু করার সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত নীলক্ষেতে অনশন চালিয়ে যাবেন বলে জানান সরকারি বাঙলা কলেজের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক। তিনি ইসলাম শিক্ষার চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী, অনার্স শেষ বর্ষের আর একটি পরীক্ষা বাকি আছে তার।
ফারুক বলেন, ‘স্থগিত হওয়া চলমান পরীক্ষা যেন দ্রুত নিয়ে নেয়া হয়, সে জন্য আমি অনশনে বসেছি। আমার আর একটা পরীক্ষা আর ভাইবা বাকি৷ পরীক্ষাটা আজকে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
‘আমরা চাই সন্ধ্যার মধ্যে পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আসুক।’ এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত না এলে তার এই অনশন অব্যাহত থাকবে।
হয় পরীক্ষা না হয় মৃত্যু
নীলক্ষেত মোড়ে কাফনের কাপড় পরে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন পাঁচ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে একজন তিতুমীর কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সাব্বির।
কাফনের কাপড় পরে আন্দোলনে কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই পরীক্ষা আমাদের জীবনমরণের প্রশ্ন। গ্র্যাজুয়েশন আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের দুইটা বছর নষ্ট হয়েছে। তারপরও আমরা পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। হুট করে সকল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়, যখন আমাদের মাত্র একটা পরীক্ষা বাকি।
‘আমরা কী পুতুল যে আমাদের নিয়ে তামাশা করা হবে। একটা মানুষের জীবন নিয়ে যখন খেলা করা হয়, তখন তার জীবনের কোনো মূল্য থাকে না। রাষ্ট্র আমাদের সঙ্গে খেলা করছে। এটি আমাদের সঙ্গে একপ্রকার প্রহসন। হয় পরীক্ষা হবে, নয় আমাদের মৃত্যু হবে।’
কাফনের কাপড় পরে নীলক্ষেতে অবস্থান নিয়েছে সাত কলেজের একদল শিক্ষার্থী। ছবি: নিউজবাংলা
জরুরি বৈঠকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে জরুরি অনলাইন সভায় বসেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
বৈঠক থেকে অল্প সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে জানিয়েছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের।
শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল এই বৈঠকে অন্যদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রোভিসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের সমন্বয়কসহ সাত কলেজের অধ্যক্ষরা।
এর আগে ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বুধবার দুপুর ১২টার দিকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও দাবিদাওয়া নিয়ে সন্ধ্যা ৬টায় ভার্চুয়াল সভাটি হবে।
এসব আশ্বাসে কান দেননি আন্দোলনাকীরা। বরং নীলক্ষেতের পাশাপাশি সায়েন্সল্যাবেও অবস্থান নেয় তারা। জানায়, পরীক্ষা চালু রাখার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত আসার আগ পর্যন্ত আন্দোলন থামাবেন না তারা। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠকে বসেছেন শিক্ষামন্ত্রী।
নীলক্ষেতের পাশাপাশি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছেন সায়েন্সল্যাবেও। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
নীলক্ষেতের পাশাপাশি সায়েন্সল্যাবে শিক্ষার্থীরা
চলমান ও আসন্ন সব পরীক্ষা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার এবং হল খুলে দেয়ার দাবিতে নীলক্ষেতের পর সায়েন্সল্যাব অবরোধ করছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
দুপুর ১২টার দিকে সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নেয় সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। এর আগে সকাল ৯টা থেকে নীলক্ষেত অবরোধ করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল তারা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, পরীক্ষার সময় বা তারিখ প্রকাশ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা।