বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন গেরুয়া গ্রামে মসজিদে মাইকে ঘোষণা দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে ২৫০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
রোববার রাত পৌনে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা জেফরুল হাসান চৌধুরী সজল আশুলিয়া থানায় মামলাটি করেন। এতে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।
শুক্রবার সন্ধ্যার পর গেরুয়া গ্রামে এই হামলা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়, ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে বিরোধের জেরে দুই পক্ষে উত্তেজনা তৈরি হয়। এর জেরে এই ঘটনা ঘটে।
এর এক পর্যায়ে স্থানীয় মসজিদে মাইকে বলা হয়, গ্রামে ডাকাত পড়েছে। এলাকাবাসী যেন ছুটে আসে।
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় গেরুয়াসহ আশেপাশের এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকছেন পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী।
মসজিদে এই খবরে দল বেঁধে আসে এলাকার মানুষ। অন্যদিকে খবর পেয়ে ছুটে আসে শিক্ষার্থীদের দলও।
পরে রাত ১০ টা পর্যন্ত থেকে থেমে চলে সংঘর্ষ। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন গেরুয়া গ্রামবাসী ও ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষও হয়। ফাইল ছবিপরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে ছাত্ররা। তারা ঘটনার শাস্তির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গেরুয়া যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানায়, যদিও পরে এই দাবি থেকে সরে আসে।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুর রশিদ মামলা নথিভুক্তর কথা জানিয়ে বলেন, ‘ছাত্রদের উপর হামলার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ২৫০ জনকে আসামি করে বিকেলে লিখিত অভিযোগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে রাতে মামলা নথিভুক্ত হয়।’
যদিও দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান ৩০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ২০০ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেয়ার কথা জানান।
নিউজবাংলার অনুসন্ধান বলছে, সেদিন ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে ঘটনাটি ঘটলেও এর পেছনে আরও বেশ কিছু কারণ আছে।
- আরও পড়ুন: ওভাবে কথাটি বলিনি: জাবি প্রক্টর
দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসের আশপাশে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি অংশের আধিপত্য স্থাপনের চেষ্টা পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে ইন্ধন দিয়েছে। ঘটনার দিন ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজকদের এক জনকে জিম্মি করে চাঁদা দাবির অভিযোগও উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।
১১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ক্রিকেট টুর্নামেন্টে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা অ্যালেক্সের (পিয়াস ইজারাদার) দলের প্রতিপক্ষ ছিল পাশের জামসিং গ্রামের একটি দল। ৪৪তম আবর্তনের শিক্ষার্থী অ্যালেক্স বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।
ক্রিকেট খেলার সময় স্লেজিং করাকে কেন্দ্র করে বাগ্বিতণ্ডা হয় দুই টিমের খেলোয়াড়দের। একপর্যায়ে জামসিং দলের খেলোয়াড়দের হাতে মার খান অ্যালেক্স ও আরেক ছাত্র।
হামলায় গুঁড়িয়ে দেয়া হয় একটি মোটরসাইকেলএ ঘটনার পর অ্যালেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে জাবি ছাত্রলীগের (মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি) সাংগঠনিক সম্পাদক অভিষেক মণ্ডলের (৪১তম আবর্তন) নেতৃত্বে অন্তত ৪০ জন ছাত্রকে নিয়ে ফিরে আসেন গেরুয়া গ্রামে। টুর্নামেন্টের আয়োজক কমিটি জামসিং গ্রামের তরুণদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে, এমন অভিযোগ তুলে বাতিঘর ক্লাবে ভাঙচুর চালান তারা। এছাড়া পুরো বাজারের সব দোকান বন্ধ করে দেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এর আট দিন পর গত শুক্রবার বিকেলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটির এক সদস্য নজরুল ইসলাম কাজুকে তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যান। গেরুয়া বাজারের যে বাসায় ছাত্রলীগ নেতা অভিষেক ও অ্যালেক্সরা থাকেন সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় কাজুকে।
এরপর কাজুকে উদ্ধার করতে ওই বাসা ঘিরে ফেলেন গ্রামের বেশ কয়েকজন। অভিষেক ও আরও কয়েকজন এ সময় কৌশলে পালিয়ে গেলেও গ্রামবাসীর বেধড়ক পিটুনির শিকার হন অ্যালেক্স, জুবায়েরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১২ ছাত্র। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের চারটিসহ মোট পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
এরপর মসজিদে ঘোষণা আসে ডাকাত পড়ার।
গেরুয়া বাজারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক এলাকায় এখনও রয়েছে পুলিশের কড়া পাহারা, থমথমে পুরো এলাকা।