দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ (এমজিআই)-এর জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ‘ফ্রেশ অনন্যা স্যানিটারি ন্যাপকিন’ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব উওমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ (ডব্লিউজিএস) ক্যাম্পাসে জ্ঞান চর্চা এবং সামাজিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে যৌথভাবে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন সম্পর্কে সচেতনতা কর্মসূচির অংশ হিসেবে ফ্রেশ অনন্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন করেছে। সেইসাথে ফ্রেশ অনন্যা এবং ডিপার্টমেন্ট অব উওমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ যৌথভাবে ক্যাম্পাসের প্রফেসর মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী অডিটোরিয়ামে ‘মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন অ্যান্ড হেলথ অ্যাওয়েরনেস প্রোগ্রাম’ শীর্ষক একটি সেমিনার আয়োজন করে।
যৌথ উদ্যোগটি দেশের সবচেয়ে অগ্রণী বিদ্যাপীঠ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকাকে এবং মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন-এর মতো সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ডিপার্টমেন্ট অব উওমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ-এর উদার মনোভাবকে তুলে ধরে। এ ধরনের আয়োজন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এর ইতিবাচক প্রভাব ছড়িয়ে দিবে। সেমিনারে ডিপার্টমেন্ট অব উওমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ-এর চেয়ারপারসন ও এসোসিয়েট প্রফেসর ড. সাবিহা ইয়াসমিন রোজি এবং প্রফেসর ড. সানজিদা আখতার উল্লেখ করেন যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি আসলেও, নারীস্বাস্থ্য নিশ্চিতে মেনস্ট্রুয়েশন-এর মতো একটি সম্পূর্ণ বায়োলজিক্যাল বিষয়কে এখনও প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখা হয়। তারা ফ্রেশ অনন্যা-কে এরকম একটি চিন্তাশীল এবং বাস্তবধর্মী বিষয়ে এগিয়ে আসার জন্য ধন্যবাদ দেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা অনুষদের মাননীয় ডিন প্রফেসর ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান তার বক্তব্যে নারীদের জন্য একটি নিরাপদ ও উম্মুক্ত সমাজের আশাবাদ ব্যক্ত করেন, যেখানে মেনস্ট্রুয়েশন-এর মতো ‘সম্পূর্ণ স্বাভাবিক’ একটি বিষয়ে তারা আরও আত্মবিশ্বাসী হতে পারবে। সমাজ গঠনে নারীরা উপহারস্বরূপ এবং তাদের ভূমিকা অপরিসীম বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়াও তিনি আরও সুদৃঢ় পারিবারিক বন্ধন গড়ে তুলতে এবং বাবা-মেয়ে, ভাই-বোনদের মধ্যে জড়তা কাটিয়ে খোলাখুলি কথা বলার জন্য আহবান জানান, যেন পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সম্মানবোধ বৃদ্ধি পেয়ে সকল প্রতিবন্ধকতা কেটে যায়।ফ্রেশ অনন্যা নিয়ে আসার পেছনে দুইটি মূল উদ্দেশ্য হিসেবে, বিশেষ করে নারীস্বাস্থ্য নিশ্চিতের মাধ্যমে প্রাত্যহিক জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য এবং সামাজিকভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলার কথা উল্লেখ করেন এমজিআই ডিরেক্টর ব্যারিস্টার তাসনিম মোস্তফা। এই সব পরিবর্তন একটি ব্র্যান্ড-এর একার পক্ষে সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান, সিস্টেম এবং সাংস্কৃতিকভাবে সবাইকে একসাথে আরও বিবর্ধিত হওয়ার কথা বলেন তিনি। ফ্রেশ অনন্যা থেকে আরও বড় পরিসরে কর্মসূচি গ্রহণের পাশাপাশি নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় ও সহজলভ্য পণ্য নিয়ে আসার কথাও তিনি জানান।সেমিনারে অন্যান্য আয়োজনের মধ্যে ছিল ড. তাজকিয়াতুল ইসলাম মহুয়া-এর মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন সেশন এবং ড. রুবাইয়াত ফেরদৌস-এর মেন্টাল হেলথ সেশন। এরপর প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে নারী শিক্ষার্থীদের সৌজন্য উপহার হিসেবে স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়া হয়। এছাড়াও আমন্ত্রিত শিক্ষার্থীদের জন্য মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন-এর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে নারীস্বাস্থ্য সচেতনতা নিশ্চিতে বাস্তবধর্মী প্রস্তাবনা তুলে ধরতে একটি রচনা-লিখন কর্মসূচির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। ২০২৫ সালে ‘রিপ্রোডাকটিভ হেলথ জার্নাল’-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের মাত্র ২৮.৬% কিশোরী যথাযথ মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন মেনে চলে। তাদের জন্য তাই এখন থেকেই সামাজিক সচেতনতা, সহজলভ্যতা নিশ্চিতে বিভিন্ন যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।ফ্রেশ অনন্যা-ই বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র স্যানিটারি ন্যাপকিন, যাতে রয়েছে ডাবল লেয়ারড অ্যাডভান্সড অ্যাবজর্পশন টেকনোলজি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে পার্টনারশিপ, সচেতনতার ক্ষেত্রে নানান আয়োজন এবং ক্যাম্পাস-এ ভেন্ডিং মেশিন স্থাপনের মতো নানামুখী কর্মসূচির মাধ্যমে ফ্রেশ অনন্যা নারীর ক্ষমতায়ন এবং পিরিয়ড-স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আলোচনা স্বাভাবিক করে তুলতে দেশজুড়ে কাজ করে যাবে, যেন কোন নারীই স্কুল অথবা কাজের ক্ষেত্রে কোন সুযোগ গ্রহণে পিছিয়ে না পড়ে।