বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দেড়শ প্রজাতির ভেষজে সমৃদ্ধ নাটোরের ১৫ ‘ঔষুধি গ্রাম’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ২১ অক্টোবর, ২০২৫ ২১:৩৭

দেশের একমাত্র ঔষধি পল্লী এখন নাটোরের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। প্রায় দিনই দর্শনার্থীরা আসছেন এই পল্লীতে এবং মুগ্ধতা নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এই পল্লীতে বছরে শুধু অ্যালোভেরাই উৎপাদন হচ্ছে ১৫ হাজার টন। এছাড়া শিমুল মূল, অশ্বগন্ধাসহ উৎপাদন হচ্ছে ১৪০ ধরনের ভেষজ। উৎপাদিত এসব ভেষজের বাজার মূল্য অন্তত শত কোটি টাকা।

নাটোর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর-খোলাবাড়িয়া ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম জুড়ে এই ভেষজ পল্লীর অবস্থান। ইউনিয়নের প্রধান সড়কের প্রায় একই সমতলে থাকা ভেষজ পল্লী ছবির মতো সুন্দর।

জানা যায়, ১৯৯৫ সালের দিকে খোলাবাড়িয়া এলাকার আফাজ পাগলা তার কবিরাজি কাজে ব্যবহারের জন্য স্বউদ্যোগে ভেষজ উদ্ভিদের চাষাবাদ শুরু করেন। এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো গ্রামে। শেষে সারা ইউনিয়ন জুড়ে। শুধু আবাদি জমিই নয়, গ্রামের প্রতিটি বাড়ির আনাচে-কানাচে, রাস্তার ধারে, নদীর পাড়ে চোখে পড়ে ভেষজ উদ্ভিদের রকমারি গাছ। তবে সব সৌন্দর্য ছাড়িয়ে অ্যালোভেরা গাছ সবচেয়ে দৃষ্টি নন্দন।

নাটোর সদর উপজেলা কৃষি অফিসের হিসাবে, লক্ষ্মীপুর-খোলাবাড়িয়াতে ১৪০ প্রকার ভেষজ উদ্ভিদ জন্মে। এর মধ্যে অ্যালোভেরা ছাড়াও শিমুল মূল, অশ্বগন্ধা, মিশ্রি দানা, বিটরুট, রোজেলা ও শতমূল প্রসিদ্ধ। ভেষজ উদ্ভিদের মোট ১৫৫ হেক্টর আবাদি জমির মধ্যে ৭০ হেক্টরে ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা চাষ হচ্ছে।

৫০ হেক্টর আবাদি জমি থেকে পাওয়া যাচ্ছে এক হাজার ২০০ টন শিমুল মূল। ১২ হেক্টরে বিটরুট এবং পাঁচ হেক্টর মিশ্রি দানার আবাদি জমি থেকে পাওয়া যাচ্ছে ৫০ টন করে ভেষজ। ১০ হেক্টর থেকে পাওয়া যাচ্ছে ১২ টন অশ্বগন্ধা। ইউনিয়নের দুই হাজার কৃষক ভেষজ উদ্ভিদ চাষের সঙ্গে জড়িত।

মূলত বর্ষার শেষে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে এক বিঘা জমিতে অ্যালোভেরার ১০ হাজার চারা রোপণ করা হয়। এই আবাদি জমি থেকে পরবর্তী দুই বছর অনায়াসে অ্যালোভেরার পাতা সংগ্রহ করা যায়।

সেচের ব্যবস্থা রেখে সারিবদ্ধ এসব গাছ থেকে রোপণের ৩ মাস পর থেকে পাতা সংগ্রহ শুরু হয়। চাষাবাদ, পরিচর্যা ও সেচের কাজে সারা বছর জমিতে ১০০ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। জৈব সার ছাড়াও পরিমাণ মতো ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, দস্তা ও বোরিক এসিড প্রয়োজন হয়। পাতার কালো দাগ পড়া রোধে ব্যবহার হয় চুন।

পাতা ছিদ্রকারী মশাসহ অন্যান্য কীটপতঙ্গ দমনে সম্প্রতি ছত্রাক নাশক টাইকোডার্মা ও সেক্স ফেরোমেন ব্যবহারে সম্প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে কৃষি বিভাগ ও কৃষকরা। বিঘাপ্রতি অ্যালোভেরার গড় উৎপাদন প্রায় ৩০ টন।

উৎপাদিত ভেষজ উদ্ভিদ শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে তৈরি করা হচ্ছে নানা রকম ভেষজ ওষুধ। এর বিপণন কাজ চলছে এলাকার ৪টি স্থানে গড়ে ওঠা প্রায় একশটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।

ভেষজ উৎপাদনকারী কৃষক, সমবায় নেতা ও কবিরাজ মো. জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘অ্যালোভেরা সংরক্ষণে একটি হিমাগার নির্মাণ ও সাবান-শ্যাম্পুসহ প্রসাধনী তৈরির কারখানা নির্মাণে উদ্যোক্তা খুঁজে বের করা হলে আমরা উপকৃত হব।

খোলাবাড়িয়া হাজীগঞ্জ বাজার ভেষজ উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীনে গ্রামে একটি ঔষধি উদ্ভিদ গবেষণা সেন্টার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এর ফলে আমাদের উৎপাদিত ভেষজ পণ্যের গুণাগুণ ও মান নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। পাশাপাশি প্রসাধন ও ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের আগমন ঘটবে। ফলে ভেষজ পল্লী আরও সমৃদ্ধ হবে।

নাটোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নীলিমা জাহান বলেন, ভেষজ পল্লীর প্রায় ১০ হাজার মানুষ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিপণন কিংবা কৃষি শ্রমের সঙ্গে জড়িত। ভেষজ পল্লীর পরিধি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নাটোর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. হাবিবুল ইসলাম খান বাসসকে বলেন, ভেষজ পল্লীতে হিমাগার, প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র, গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা সম্ভব হলে- কৃষকরা লাভবান হবেন। সমৃদ্ধ হবে দেশের একমাত্র এই ঔষধি পল্লী।

এ বিভাগের আরো খবর