পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, বিশ্বাসযোগ্য পরিসংখ্যান তৈরি করা এক ধরনের বিনিয়োগ। তাই পরিসংখ্যান তৈরিতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখতে হবে।
তিনি বলেন, ‘তথ্যের সুরক্ষা ও নৈতিকতার বিষয়েও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করতে হবে।’
সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় ও বিশ্ব পরিসংখ্যান দিবস-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) উদ্যোগে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহযোগিতায় এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্ব পরিসংখ্যান দিবস ২০২৫-এর এবারের প্রতিপাদ্য ‘সবার জন্য মানসম্মত পরিসংখ্যান’। এ বিষয়ের মাধ্যমে মূলত মানসম্মত ও যথাযথ পরিসংখ্যান প্রস্তুত ও প্রকাশের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি সোনালী দায়ারাত্নে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘সরকারি পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা, স্বচ্ছতা ও মান বজায় রাখা অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম ভিত্তি। বর্তমানে বিবিএস আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশ করছে। তবে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে আরও স্বচ্ছতা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘নতুন নীতিমালা অনুযায়ী কোনো উচ্চপর্যায়ের অনুমোদন ছাড়াই বিবিএস এখন থেকে নিজস্ব উদ্যোগে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি ও অন্যান্য সূচক প্রকাশ করতে পারবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডাটা শুধু সরকারের জন্য নয়- বিনিয়োগকারী, উদ্যোক্তা, গবেষক, গণমাধ্যমকর্মী এবং সাধারণ জনগণের জন্যও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই ‘ডাটা ফর এভরিওয়ান’ প্রতিপাদ্যের মাধ্যমে সবাইকে পরিসংখ্যান সচেতন হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সরকারি পরিসংখ্যান দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় বেশি নির্ভরযোগ্য। বিবিএস এখন আগের চেয়ে প্রযুক্তিনির্ভর ও সক্ষম প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছে।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মহাপরিচলক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিবিএসের পরিচালক কবির উদ্দিন আহাম্মদ।
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক, অধ্যাপক এ কে এনামুল হক, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান সমিতির (বিএসএ) সভাপতি অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাহাদৎ হোসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. জাফর আহমেদ খান।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১০ সাল থেকে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর বিশ্বব্যাপী দিবসটি উদযাপন হয়ে আসছে। বাংলাদেশেও দিবসটি যথাযোগ্যভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে উদযাপন করা হচ্ছে।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় র্যালির আয়োজন করা হয়েছে। র্যালিটি পরিসংখ্যান ভবন থেকে শুরু হয়ে কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় পরিসংখ্যান ভবনে এসে শেষ হয়।
এছাড়া দিবসটি পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জাতীয় পর্যায়ে সেমিনার আয়োজন, ক্রোড়পত্র ও স্মরণিকা প্রকাশ এবং র্যালি আয়োজন, আলোচনা সভাসহ নানা কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস ও বিশ্ব পরিসংখ্যান দিবস একীভূত করে সোমবার দিবসটি উদযাপিত হয়েছে।