বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আন্তর্জাতিক বাজারে সাড়া ফেলেছে নরসিংদীর কীটনাশকমুক্ত কাকরোল

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ২ অক্টোবর, ২০২৫ ১৮:২৮

সবজির জেলা হিসেবে পরিচিত নরসিংদী এখন জনপ্রিয় গ্রীষ্মকালীন সবজি কাকরোল (কাঁকড়া) উৎপাদন ও রপ্তানির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে সাড়া ফেলেছে।

একসময় শুধু স্থানীয় বাজারে সীমাবদ্ধ থাকা নরসিংদীর কাকরোল বর্তমানে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি হচ্ছে। স্বাস্থ্যসচেতন ভোক্তা ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে এর বৃহৎ আকার, আকর্ষণীয় চেহারা ও উন্নত স্বাদ বিশেষ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

বেলাবো উপজেলার বারৈচা বাজার এখন কাকরোল ব্যবসার জমজমাট কেন্দ্র। মৌসুমে প্রতিদিন শত শত টন কাকরোল এখানে আসে। শ্রমিকরা আকারভেদে বাছাই করে ঝুড়ি, বস্তা ও ক্রেটে প্যাকেজ করেন। কৃষকরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন কোটি টাকার লেনদেন হয়, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করছে।

নরসিংদীর ছয় উপজেলার মধ্যে শিবপুর ও বেলাবো কাকরোল উৎপাদনে শীর্ষে। গ্রাম থেকে বাজারে আসা কাকরোল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বড় শহরে সরবরাহ করা হয়, ফলে কৃষক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা সবাই লাভবান হচ্ছেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নিয়মিত কাকরোল রপ্তানি করলেও সাম্প্রতিক সময়ে বিমান পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় চালান কিছুটা কমেছে। তবুও আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে।

পাইকারি বাজারে আকার অনুযায়ী কাকরোল কেজিপ্রতি ৪০–৪৫ টাকায় বিক্রি হয়। কৃষকরা সরাসরি বাজারে এনে আরও বেশি মুনাফা পান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য অনুযায়ী, এ বছর নরসিংদীতে ১,৪৮৫ হেক্টর জমিতে ২৮,৪৭৮ মেট্রিক টন কাকরোল উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০০ মেট্রিক টন বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে। উৎপাদন আরও বাড়াতে আধুনিক প্রযুক্তি, সার ও উন্নত বীজ সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

কৃষকরাও জানাচ্ছেন, উৎপাদন খরচ বেড়েছে বটে, তবে লাভ এখনও সন্তোষজনক। শিবপুরের সবুজপাহাড় গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের (৪৫) বলেন, ‘কাকরোল চাষে বিনিয়োগ কম, কিন্তু মুনাফা বেশি। আমি ২০ শতাংশ জমিতে ৮০ হাজার টাকা খরচ করে ইতিমধ্যে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় করেছি। বাকি ফসল থেকে আরও ৩৫–৪০ হাজার টাকা আয়ের আশা করছি।’

বেলাবোর বিন্নাবাইদের ফাতেমা বেগম (৩৮) জানান, ‘আমি ৩২ শতাংশ জমিতে কাকরোল চাষ করেছি। এর আয়ে সংসার চলে এবং সন্তানদের পড়াশোনার খরচ মেটাতে পারছি।’

শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া (৫৫) বলেন, “সার ও শ্রমিকের খরচ বেড়েছে, তবুও কাকরোল চাষ লাভজনক।”

বারৈচা বাজারের আড়তদার আবুল হাসান জানান, “দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা এখানে এসে আকার ও মানভেদে প্রতি কেজি ৩৫–৪৫ টাকায় কাকরোল কিনে থাকেন।”

স্থানীয় কৃষকদের বিশ্বাস, নরসিংদীর এই সাফল্য প্রমাণ করে যে পরিকল্পিত সহায়তা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাংলাদেশের সবজি খাত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বড় উৎস হতে পারে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মুহাম্মদ আব্দুল হাই বলেন, “আমরা কৃষকদের সবজি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছাতে কাজ করছি। কাকরোল এখন আর শুধু স্থানীয় ফসল নয়; কীটনাশকমুক্ত ও মানসম্পন্ন উৎপাদনের মাধ্যমে এটি জাতীয় অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম।”

এ বিভাগের আরো খবর