টানা পতনের বৃত্ত থেকে বের হওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে দেশের দুই পুঁজিবাজারে। এ নিয়ে পরপর তিন সপ্তাহ ধরে অল্প হলেও বেড়েছে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইর প্রধান সূচক।
বৃহস্পতিবার শেষ হওয়া সপ্তাহে অবশ্য সূচকের চেয়ে বেশি নজর কেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। কদিন আগে দুশ-তিনশ কোটির ঘরে নেমে যাওয়া ডিএসইর মোট লেনদেন এই সপ্তাহে ছুঁয়েছে হাজার কোটির ঘর। সব মিলে পুরো সপ্তাহের হিসাবে সূচকের বড় কোনো উত্থান না হলেও লেনদেন নিয়ে সন্তুষ্ট ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।
মতিঝিলের একটি ব্রোকারেজ হাউজের বিনিয়োগকারী হানিফ মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেসব বিনিয়োগকারী এতদিন চুপচাপ বসে ছিলেন তারাও সজাগ হতে শুরু করেছেন। সূচক ও লেনদেন কিছুদিন বাড়লেই অনেক বিনিয়োগকারী আবার সক্রিয় হবেন। বাজার যেভাবে নিচে নেমেছে এখান থেকে লাভ হওয়ার কতটা সম্ভাবনা আছে তা বিনিয়োগকারীরা ঠিকই জানেন।’
তবে সেজন্য এক/দুই সপ্তাহ নয়, কয়েক মাস ধরে বাজার ইতিবাচক ধারায় থাকার ওপর জোর দেন এই বিনিয়োগকারী।
‘দেখুন, এখন চীনে বিএসইসি বিনিয়োগ সম্মেলন করছে। অনেকেই বলছেন চীন থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আসবে। আসুক বা না আসুক মানুষের মধ্যে ইতিবাচক ধারণাটা তৈরি হলেই মার্কেট ঘুরে দাঁড়াবে এটা নিশ্চিত,’ যোগ করেন হানিফ।
সদ্য শেষ হওয়া সপ্তাহের বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, পাঁচ কর্মদিবসে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে চার হাজার ৪৪৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড় লেনদেন হয়েছে ৮৮৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। লেনদেনের এই পরিমাণ আগের সপ্তাহের গড় লেনদেনের চেয়ে ৪৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি। ডিএসইতে এর আগের সপ্তাহে চার কর্মদিবসে মোট লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় লেনদেন ছিলো ৬১৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা। গড় কিংবা মোট লেনদেন নিয়ে নিউজবাংলার কাছে সন্তুষ্টির কথা জানান বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারী।
দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজারের সঙ্গে থাকা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী শিমুল বলেন, ‘পুঁজিবাজারে লেনদেন ভালো হওয়া মানেই বাজার ভালো হওয়ার লক্ষণ।
‘অনেকদিন ধরে বাজারে খারাপ সময় যাচ্ছে। তবে শেয়ার মার্কেটের ইতিহাস বলে- কিছুদিন খারাপ থাকার পর আবার বাজার ভালো হয়। আমাদের দেশের বাজার অবশ্য কোনো নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা করে না। এখানে যারা প্লেয়ার তারা অ্যাকটিভ হলেই বাজার ভালো হয়।’
তাহলে কি আপনার হিসাবে প্লেয়াররা আবার অ্যাকটিভ হচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চারদিকে একটা খবর শুনতেছি যে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে নাকি বাজার অনেক ভালো থাকবে। অনেক বড় বড় বিনিয়োগকারী আবার বাজারে ফিরতে শুরু করেছে বলেও শুনেছি। দেখুন, লেনদেন তো হাজার কোটিও হলো একদিন। আমাদের মতো ক্ষুদ্ররা তো এতো লেনদেন করতে পারে না।’
এদিকে ডিএসইতে গত সপ্তাহের শুরুর দিকে বাড়তে দেখা যায় সব সূচক। তবে শেষ দুদিনের মূল্য সমন্বয়ে তা স্থায়ী হতে পারেনি। সপ্তাহের শুরুর দিনে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্সের অবস্থান ছিলো পাঁচ হাজার ৪৯৭ পয়েন্টে। বৃহস্পতিবার দিনশেষে তা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫০৭ পয়েন্টে।
অর্থাৎ পুরো সপ্তাহে ডিএসইএক্স বেড়েছে ৯ দশমিক ২২ পয়েন্ট। পাশাপাশি ডিএসইর এসএমই ইনডেক্স প্রায় ৩০ পয়েন্ট বেড়ে সপ্তাহ শেষে অবস্থান নিয়েছে ১ হাজার ৫০৮ পয়েন্টে। তবে এ সপ্তাহে কমেছে ডিএসইর নির্বাচিত ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ সূচক।
লেনদেন ইতিবাচক থাকার সপ্তাহেও কমেছে ডিএসইর বাজার মূলধন। গত সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিলো ৬ লাখ ৭১ হাজার ৬৩ কোটি টাকা, যা সপ্তাহ শেষে এসে দাঁড়ায় ৬ লাখ ৬৩ হাজার ৬৫২ কোটি টাকায়। অর্থাৎ পুরো সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন খোয়া গেছে ৭ হাজার ৪১১ কোটি টাকা।
এদিকে পুরো সপ্তাহে লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ২২০টির, কমেছে ১৫৪টির। আর অপরিবর্তিত ছিলো ২২টি কোম্পানির শেয়ার দর।
পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থাকে মন্দের ভালো বলছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, লেনদেনের এই ধারা বজায় থাকলে সাইডলাইনে থাকা বড় ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আবারও বাজারমুখী হবে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন মনে করেন, এভাবে চলতে থাকলে দু-তিন মাসের মধ্যে পুঁজিবাজার ইতিবাচক জায়গায় যাবে। তবে এই বাজারেও কিছু শেয়ার নিয়ে কারসাজি শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সেসব শেয়ার না কেনার পরামর্শ দেন তিনি।
‘যদি আপনি মনে করেন আমার বিবেচনায় আমি শেয়ারটি কিনবো, তাহলে ওটি কিনে বিপদে পড়লে দোষ শুধুই আপনার’, মন্তব্য করেন তিনি।