খাদ্যপণ্যে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আগের মাস জুলাইয়ে তা ছিল ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আর গ্রামাঞ্চলে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৭১ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) রোববার প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানটি খাদ্যপণ্যসহ অন্যান্য পণ্য নিয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি তৈরি করে থাকে।
আগস্টের শেষ দিকে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানসহ সরকারের বেশ কয়েকজন নীতিনির্ধারক।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সে সময় মন্ত্রী বলেন, অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার জায়গা এখন অতিমাত্রায় মূল্যস্ফীতি। যদিও আমি মনে করি এ মাসে তা কমে আসবে। তবে মন্ত্রী সাহস করে হাসিমুখে যে কথাটি বলেছিলেন মাস শেষে হয়েছে ঠিক তার উল্টো। মূল্যস্ফীতি কমার পরিবর্তে আগস্ট মাসে আরও বেড়েছে।
আগস্ট মাস শেষে বিবিএসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, আগের দুই মাসে সামান্য কমার পর আবারও ১০ শতাংশ ছুঁই ছুঁই করছে মূল্যস্ফীতি। আগস্টে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। জুলাই মাসে তা ছিল ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
রোববার প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, খাদ্যপণ্যে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। তার আগের মাস জুলাইয়ে তা ছিল ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
কারও কারও ধারণা, গ্রামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কিছুটা কম। তবে বিবিএসের সবশেষ প্রতিবেদন তাদের বক্তব্যকে অসার প্রমাণ করে।
গ্রামাঞ্চলে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৭১ শতাংশ। অর্থাৎ গ্রামাঞ্চলে ২০২২ সালের আগস্টে যে খাদ্যপণ্য কিনতে ১০০ টাকা গুনতে হতো, তা ২০২৩ সালের আগস্টে এসে দাঁড়িয়েছে ১১২ টাকা ৭১ পয়সা।
অবশ্য খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। জুলাই মাসে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ, আগস্টে যা কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। তবে সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে খাদ্যপণ্যে প্রায় তিন শতাংশ মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি। এটা নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে।
মূল্যস্ফীতির বাড়তি হারকে অর্থনীতি বিশ্লেষকরা করের মতোই বোঝা মনে করেন। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে যার কোনো আয় বাড়েনি তার জন্যও এখন বাড়তি প্রায় ১৩ শতাংশ খরচ করতে হচ্ছে শুধু খাদ্যপণ্য কিনতে।
সার্বিক মূল্যস্ফীতি নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ডলারের সংকট মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিচ্ছে। বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাও এজন্য দায়ী।’
তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন, সরকারি হিসাবের চেয়ে বাস্তবে মূল্যস্ফীতির পরিমাণ আরও বেশি।
এ অবস্থায় সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে এই সময়ে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রি বাড়িয়ে দেয়ার পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ। বলেন, ‘সরকারকে মাথায় রাখতে হবে একটা বিশাল জনগোষ্ঠী এখনও দরিদ্র, তাদের জন্য খাদ্য কেনা এখন বড় দায় হয়ে পড়েছে। তাই এসব মানুষের কথা ভেবে মূল্যস্ফীতি কমানোর বিকল্প নেই।’