সিংহভাগ শেয়ার হাতবদলের পর নোভারটিস (বাংলাদেশ) লিমিটেড পরিবর্তিত নামে নেভিয়ান লাইফসায়েন্স পিএলসি হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে। নতুন নামেও লাইসেন্সিং চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে নোভারটিসের বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ অব্যাহত রাখবে নেভিয়ান।লাইসেন্সি হিসেবে নোভারটিস ব্র্যান্ডের ওষুধ নেভিয়ানের ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টে উৎপাদন শুরু হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল ঢাকার একটি হোটেলে নেভিয়ান উৎপাদিত নোভারটিসের প্রথম ব্র্যান্ড ‘গ্যালভস মেট’ -এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের চেয়ারম্যান জনাব মোঃ ফজলুর রহমান, নেভিয়ানের অন্যতম উদ্যোক্তা ও পরিচালক এবং রেডিয়েন্ট ফার্মার চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, স্বাস্থ্য সচিব মোঃ সাইদুর রহমান, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রাজিল দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব কমিশন লিওনার্দো ডি অলিভেইরা জানুজ্জি সহ ওষুধ শিল্পখাত, সরকার ও আর্থিক খাতের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ। অনুষ্ঠানে বক্তারা শেয়ার হস্তান্তরের পরও নোভারটিসের গবেষণাধর্মী ওষুধগুলোর প্রাপ্যতা বাংলাদেশের রোগীদের জন্য অব্যাহত রাখায় সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির সাথে নেভিয়ানের এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। লাইসেন্সিং চুক্তির আওতায় নোভারটিসের উৎপাদন ও মাননিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হুবহু অনুসরণ করতে হবে নেভিয়ানকে। একই উপাদানে, একই প্রক্রিয়ায় ও একই দক্ষ জনবল দিয়ে একই ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টে উৎপাদন হবে বিধায় নোভারটিসের ওষুধের গুণগত মানের কোনরকম পরিবর্তন হবে না বলে নিশ্চিত করেন নেভিয়ানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুসাওয়াত শামস জাহেদী। নেভিয়ানের অন্যতম উদ্যোক্তা ও পরিচালক এবং রেডিয়েন্ট ফার্মার চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী বলেন, “উদ্ভাবনী ওষুধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থার আধুনিকায়নে নোভারটিসের শেকড় ২৫০ বছরেরও অধিক সময় জুড়ে বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত হয়েছে। বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশের রোগী ও চিকিৎসকদের কাছেও নোভারটিসের ওষুধগুলো আস্থার পরিপূরক হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে নোভারটিস শেয়ার হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিলে, আস্থার সেই জায়গাটিতে শূন্যতা পূরণ করতেই নেভিয়ানের এই যাত্রা।” অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সচিব মোঃ সাইদুর রহমান বলেন, “নেভিয়ানের ব্যানারে নোভারটিসের ওষুধ উৎপাদন শুধু একটি করপোরেট বা ব্যবসায়িক মাইলফলক নয়, বরং এটি বাংলাদেশে ওষুধশিল্পের আত্মনির্ভরতার পথে এক শক্তিশালী অগ্রযাত্রা, যা এ দেশের মানুষকে আরও নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।” উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালে বিসিআইসি’র সাথে যৌথ উদ্যোগ হিসেবে যাত্রা শুরু করে সিবা গেইগি বাংলাদেশ লি., যা ১৯৯৬ সালে বিশ্বব্যাপী স্যান্ডোজ নামে আরেক সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ফার্মা কোম্পানির সাথে একীভূতকরণের ফলশ্রুতিতে নোভারটিস (বাংলাদেশ) লিমিটেড নামে আত্মপ্রকাশ করে। প্রতিষ্ঠানটির মূল শেয়ারহোল্ডার নোভারটিস এজি বাংলাদেশে এর শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলে তা অধিগ্রহণে এগিয়ে আসে দেশের আরেক শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক রেডিয়েন্ট।সিংহভাগ মালিকানার পরিবর্তন হলেও প্রতিষ্ঠানটিতে বিসিআইসি'র শেয়ারহোল্ডিং অপরিবর্তিতই থাকছে। এছাড়াও, প্রতিষ্ঠানটির নাম বদল হলেও আন্ডারলাইসেন্সি হিসেবে বাংলাদেশে নোভারটিসের সব ওষুধের উৎপাদন নেভিয়ানে অব্যাহত থাকবে। এর পাশাপাশি, নোভারটিসের নতুন আবিষ্কৃত ওষুধগুলোর আমদানিকারক হিসেবেও বাংলাদেশে কাজ করবে নেভিয়ান।টঙ্গীতে অবস্থিত ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন গুড ম্যানুফ্যাকচারিং সনদপ্রাপ্ত কারখানা থেকে নেভিয়ান সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান স্যান্ডোজের আওতাভুক্ত ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে ওষুধ রপ্তানির প্রক্রিয়ায় চুক্তিভিত্তিক উৎপাদক হিসেবে যুক্ত রয়েছে। ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশসহ বায়োটেকনোলজির মত অত্যাধুনিক ওষুধপ্রযুক্তিতে বিনিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন নেভিয়ানের উদ্যোক্তারা।
দেশে নোভারটিসের ওষুধ উৎপাদন শুরু করল নেভিয়ান
এ বিভাগের আরো খবর/p>