বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পুঁজিবাজার ধসের কারণ ছিল বিনিয়োগ শিক্ষার অভাব

  •    
  • ৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ১৮:০৭

অতীতে পুঁজিবাজার ধসের মূল কারণ ছিল বিনিয়োগ শিক্ষার অভাব। তাই পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত ছাড়াও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ ধরনের শিক্ষাকে অনলাইনভিত্তিক করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

অতীতে পুঁজিবাজার ধসের মূল কারণ ছিল বিনিয়োগ শিক্ষার অভাব। তাই পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত ছাড়াও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ ধরনের শিক্ষাকে অনলাইনভিত্তিক করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) অর্থসূচক ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপো-২০২৩ এর এক সেমিনারে বক্তারা বিনিয়োগ শিক্ষা বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সেমিনারের বিষয় ছিল ‘বিনিয়োগ শিক্ষা ও পুঁজিবাজার’।

অর্থ ও বাণিজ্য বিষয়ক নিউজ পোর্টাল অর্থসূচক ডট কম পঞ্চমবারের মতো এই মেলার আয়োজন করেছে। বৃহস্পতিবার তিন দিনব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

শুক্রবারের সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম সাদিকুল ইসলাম।

সেশন চেয়ার ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাকাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটসের (বিএএসএম) মহাপরিচালক (ডিজি) তৌফিক আহমেদ চৌধুরী। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএএসএমের ফ্যাকাল্টি রিজভী আহমেদ।

অপরদিকে প্যানেল আলোচক ছিলেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুল আলম, গ্রীণ ডেল্টা সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওয়াফী শফিক মেহনাজ খান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন।

সেমিনারে কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিনিয়োগ শিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে অনেক গ্যাপ রয়েছে। তবে আস্থার ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি নেই। অভাব ও আস্থার ঘাটতি থাকলে বর্তমানেও অনেক বিনিয়োগ আসতো না। ব্যাংকগুলোতেও এখন নতুন নতুন প্রজেক্টের অফার আসে। সবাই একসঙ্গে কাজ করলে দেশের পুঁজিবাজার ও অর্থনীতি এগিয়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিনিয়োগ শিক্ষাকে অর্থায়ন শিক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। এই শিক্ষা বয়স ও সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ ধরনের শিক্ষাকে অনলাইনভিত্তিক করা উচিত।’

‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই শিক্ষার পদ্ধতি সঠিকভাবে এগিয়ে দেয়া উচিত। তাদের পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। করোনার সময় স্কুল-কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইন হয়েছিল। সেরকমভাবে বিনিয়োগ শিক্ষাকেও অনলাইন করানো উচিত। এ ছাড়া তথ্যের প্রবাহ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

সেমিনারে অধ্যাপক এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিনিয়োগ শিক্ষার অভাব সবখানে আছে। দেশের অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো যেন টাকা নিয়ে পালাতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পুঁজিবাজারের স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। কারণ এসব কোম্পানিতে শেয়ার কারসারজির পরিমাণ বেশি হয়।’

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বিএএসএমের ফ্যাকাল্টি রিজভী আহমেদ বলেন, ‘বিনিয়োগ শিক্ষা নিয়ে যারা চিন্তা করেছে, তারাই লাভবান হয়েছে। অতীতের পুঁজিবাজার ধসের মূল কারণ ছিল বিনিয়োগ শিক্ষার অভাব।’

তিনি আরও বলেন, ‘মূল্যস্ফীতিসহ অন্যান্য বিষয়ের প্রভাব পুঁজিবাজারে কীভাবে পড়ে সেটাও জানতে হবে। বিনিয়োগ শিক্ষার অনেক উপকারিতা রয়েছে। মূল্যস্ফীতি হলে পুঁজিবাজারে কী ধরনের প্রভাব পড়ে এ বিষয়ে জানতে হবে। উন্নত দেশে বিনিয়োগ শিক্ষা নিয়ে জানাশোনা লোকজনই পুঁজিবাজারে আসে। যে সব দেশের মানুষ গণিতে ভালো তারা বিনিয়োগ শিক্ষা বেশি বুঝে।’

রিজভী আহমেদ আরও বলেন, ‘জমানো সব টাকা দিয়ে শেয়ার কেনা উচিত না। প্রতি মাসে অল্প করে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা উচিত। এভাবে বিনিয়োগ করলে প্রাপ্ত শিক্ষা পুঁজিবাজারে কাজে লাগানো যাবে।’

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আলম বলেন, ‘বিনিয়োগ শিক্ষার ধারণা থাকলে নিজেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা সম্ভব। আর যদি কেউ রিস্ক নিতে না চায়, তাহলে মিউচ্যুয়াল ফান্ড, বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারে। এছাড়া কিছু না বুঝলে তখন কোনো প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নেয়া যায়।’

তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের পাশাপাশি পুঁজিবাজার থেকেও অর্থ সংগ্রহ করা যায়। সে বিষয়ে অনেকেই জানেন না। বর্তমানে অনেক কিছুই ডিজিটালাইজড হয়েছে। আগামীতে যাদের বাজার সম্পর্কে ধারণা থাকবে, তারাই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে।’

গ্রীন ডেল্টা সিকিউরিটিজের এমডি ওয়াফী শফিক মিনহাজ খান, ‘এই খাত স্রোতের সঙ্গে চলছে। অধিকাংশ মানুষের শিক্ষার প্রয়োজন হচ্ছে না। ব্রোকারেজ হাউজগুলো আইটেম দিতে না পারলে তারা খারাপ হয়ে যায়। কারণ বিনিয়োগকারীরা আগেই এভাবে শিখে আসছে। তাই তারা এরকম আচরণ করছে।’তিনি বলেন, ‘এই অবস্থা থেকে উত্তরণে বিনিয়োগ শিক্ষার প্রয়োজন। বিএসইসি, ডিএসই ও সিএসসই একসঙ্গে কাজ করছে। এছাড়া বিএএসএম আমাদের অনেক কোর্সের অফার করছে।’

ওয়াফী শফিক মিনহাজ খান বলেন, ‘পাশের দেশ ভারতে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অনেক জনপ্রিয়তা। সেই তুলনায় আমরা এগোতে পারিনি। আমরা সবাই একসঙ্গে মিলে ইন্টারেস্টিং পদ্ধতিতে বিনিয়োগ শিক্ষা দিতে পারলে অনেক ভালো হবে। অন্য মানুষের কথা শুনেই বিনিয়োগ করা উচিত না। এ ধরনের সেমিনারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এটি নিয়ে কাজ করা উচিত।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আল- আমিন বলেন, ‘শেয়ার কারসাজির সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও জড়িত থাকেন। তাই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ শিক্ষা থাকাটা খুবই দরকার। এক্ষেত্রে বর্তমানে বিএসইসি বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এরপরেও অনলাইন মিডিয়াগুলোতে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি সপ্তাহে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতে পারে। এ ছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা একসঙ্গে মিলে কাজ করলে এসব সমস্যার সমাধান হবে।’

এবারের এক্সপোতে বিএসইসি, সিডিবিএল, বিআইসিএম, বিএএসএম, আইসিএবি, আইসিএমএবি, আইসিএসবি, ব্রোকারহাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক, লিস্টেড কোম্পানি, সম্পদ ব্যবস্থাপনাসহ ৩৫টির বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। তিন দিনের এক্সপোতে উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠানের বাইরে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর চারটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।

এসব সেমিনারে বিএসইসি, ডিএসই ও সিএসইর শীর্ষ কর্মকর্তা, খ্যাতনামা স্টক ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংকার, অ্যাসেট ম্যানেজার, শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্ট, চার্টার্ড ফিন্যান্সিয়াল এনালিস্টরা অংশ নেবেন।

এ বিভাগের আরো খবর