করোনা মহামারির ধকল কাটিয়ে ওঠার আগেই ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে থমকে যাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। এতে বিশ্বব্যাপী দেখা দিয়েছে মন্দার শঙ্কা। এই মন্দা মোকাবিলায় আঞ্চলিক সহযোগিতায় জোর দিচ্ছে বাংলাদেশ।
রোববার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে লিডারশিপ সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন একথা বলেন। দু’দিনব্যাপী এই সামিটের আয়োজন করে ইন্ডিয়ান ওশান রিম বিজনেস ফোরাম (আইওআরবিএফ)।
২৩ সদস্য দেশের জোট ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) আওতাধীন সংগঠন আইওআরবিএফ। বর্তমানে দুটি সংগঠনেই সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার একই ভেন্যুতে আইওআরএ’র মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
আব্দুল মোমেন বলেন, ‘কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি বিস্তৃত এবং অপ্রত্যাশিত স্থবিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি, বেশিরভাগ অঞ্চলে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সংকোচন, ইউক্রেন সংকট এবং কোভিড-১৯ মহামারির চলমান ধাক্কা সামগ্রিক বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলেছে।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০২১ সালের ৬ শতাংশ থেকে চলতি বছরে ৩ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসার পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ। বিশ্বব্যাপী মন্দা আসন্ন হওয়ার এই সময়ে আমাদের আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করা প্রয়োজন।’
লিডারশিপ সামিট থেকে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে তার দিকনির্দেশনা পাওয়ার আশা প্রকাশ করেন ড. মোমেন।
সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহারকে টেকসই উন্নয়নের অন্যতম প্রধান উপাদান হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘সুনীল অর্থনীতিকে অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করে বাংলাদেশ। সুনীল অর্থনীতির সর্বোচ্চ উপকার ঘরে তুলতে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা প্রয়োজন।’
উন্নয়নে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত উপাদানকে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে সুনীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে আঞ্চলিক লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করার কথাও বলেন মন্ত্রী।
সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘বিস্তৃত ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য সম্মিলিতভাবে অনেক কিছু করার রয়েছে।
‘বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগ পেতে আগ্রহী। এজন্য বিনিয়োগ শর্ত অনেক শিথিল করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য বাংলাদেশ বর্তমানে অনেক সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আইওআরএ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যারা চায়, তারা আমাদের এখানে বিশেষ করে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগ করতে পারে।’
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের কেন্দ্র হিসেবে বর্ণনা করে অনুষ্ঠানে আইওআরএ মহাসচিব সালমানি ফারিসি বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতি বর্তমানে বহু চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপায় খুঁজে বের করতে আমাদেরকে একযোগে কাজ করতে হবে।’
লিডারশিপ সামিটের বিষয়ে আইওআরবিএফ সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইওআরবিএফ-এর প্রথম লিডারশিপ সামিট বাংলাদেশে হচ্ছে। এখান থেকে যেসব সিদ্ধান্ত আসবে সেগুলো আমরা কাউন্সিল অফ মিনিস্টার্স ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বৈঠকে তুলে ধরব।
‘বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি, মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে এখানে আলোচনা হচ্ছে। এগুলোর মধ্য থেকে আঞ্চলিকভাবে নীতি নির্ধারণের জন্য কীভাবে কাজ করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করছি আমরা।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সিএসিসিআই-এর সভাপতি সামির মোদী, ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূত জেরেমি ব্রুয়ার, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লা আলী আহমেদ আল হামুদি বক্তব্য দেন।