সয়াবিন তেলের দর লিটারে ১৪ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয়ার চার দিন পরও বাজারে নতুন দামের তেলের দেখা না মিললেও চিনির দাম বাড়ানোর পর দিনেই এসে গেছে বর্ধিত দরের চিনি।
কোনো পণ্যের দাম কমানোর ঘোষণা আসার পর তা বাস্তবায়নে গড়িমসি আর দাম বাড়ানোর ঘোষণা এলে সঙ্গে সঙ্গে কার্যকরের যে চিত্রটি এর আগে বহুবার দেখা গিয়েছে, তা এবার একসঙ্গে দেখা গেল দুটি ভিন্ন পণ্যের ক্ষেত্রে।
গত সোমবার ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সমিতি বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে কোম্পানি মালিকদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা আর খোলা তেলের দাম লিটারে কমবে ১৭ টাকা।
বিবৃতিতে স্পষ্ট করেই জানিয়ে দেয়া হয়, নতুন দাম কার্যকর হবে পরদিন থেকে।
তবে এই ঘোষণার পর পেরিয়ে গেছে আরও চারটি দিন। এখনও আগের দর ১৯২ টাকা লিটার হিসেবেই সয়াবিন তেল কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। ব্যবসায়ীদের অযুহাত, নতুন দামের তেল বাজারে আসতে কয়দিন সময় লাগবে।
সয়াবিন তেলের দাম কমানোর ঘোষণা বাস্তবায়নে গড়িমসির মধ্যে সরকার চিনি কেজিতে ৬ টাকা বাড়িয়ে বিক্রির অনুমতি দেয় বৃহস্পতিবার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খোলা চিনি ৯০ টাকা আর প্যাকেটজাত চিনির দর হবে ৯৫ টাকা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত জানানোর বাজারে বর্ধিত দরের চিনি আসতে সময় লাগেনি এতটুকু। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, বেঁধে দেয়া দরের চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি।
শুক্রবার রাজধানী কারওয়ান বাজারসহ অন্য বাজার ঘুরে এমনটাই জানা গেছে।
কারওয়ানবাজারের বিক্রেতা ওমর ফারুক জানান, তিনি সয়াবিন তেলের এক লিটার বোতল ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায় এবং দুই লিটারের বোতল ৩৮০ টাকা ও পাঁচ লিটার তেলের বোতল ৯৪০ টাকায় বিক্রি করছেন।
দাম তো ১৭৪ টাকা হওয়ার কথা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দাম কমালেই তো আর সঙ্গে সঙ্গে সেই মাল বাজারে চলে আসে না। আরও কিছুদিন সময় লাগবে। আমরা কম দামে পেলে অবশ্যই কম দামে বিক্রি করব।’
ক্রেতা হাবিব রহমান বলেন, ‘দাম কমিয়েছে কাগজে-কলমে, বাস্তবে তো দেখছি না। বাজার মনিটরিং কোথায় করা হচ্ছে? আমার প্রশ্ন হলো- বাজার মনিটরিং কি শুধু খুচরা বাজারে করতে হবে? কোম্পানি, ডিলার, পাইকাররা কী দামে বিক্রি করছে, সেটা কে দেখবে?’
দুই-এক জায়গায় অবশ্য নতুন দামে তেল বিক্রি হয়েছে। এমনটাই জানান কাঞ্চনপুর হাজি স্টোরের মিজানুর রহমান। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সয়াবিন পাঁচ লিটারের বোতলটা নতুন দামে পেয়েছি। ৮৮০ টাকায় বিক্রি করছি।’
দাম বাড়ানোর পর দিন এই বাজারে চিনির প্যাকেটের গায়ে কেজিপ্রতি দর ৯৫ টাকা ছাপা থাকা দেখার পর এটা স্পষ্ট হলো যে, নতুন দরের পণ্য বাজারে আসতে সাত দিন সময় লাগার বিষয়টি সঠিক নয় এতটুকু।
আর খোলা চিনির যে সর্বোচ্চ ৯০ টাকা বেঁধে দেয়া হয়েছে, সে দরে বিক্রি হচ্ছে না। কোথাও দাম রাখা হচ্ছে ৯২ টাকা, কোথাও ৯৩ টাকা।
বেশি দাম রাখার কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতারা যে যুক্তি দেন, সেটি হলো, প্রতি কেজি কিনতে হয় ৮৭ টাকায়। খুচরা বিক্রি করতে গেলে কেজিতে প্রায় ১০ গ্রাম করে ঘাটতি যায়। তাই বেশি রাখতে হচ্ছে।
হামিদ স্টোরের মো. হামিদ বলেন, ‘কিনতেই হচ্ছে ৯০ টাকায়। তাহলে কয় টাকায় বিক্রি করব?’
আরেক বিক্রেতা মিজানুর রহমান বলেন, ‘গত সপ্তাহের চেয়ে বস্তাপ্রতি চিনির দাম আরও বেড়েছে। ৪ হাজার ৪০০ টাকা ও প্রতি কেজি চিনি মেপে বিক্রি করার সময় যে ঘাটতি যায়, তাতে খরচ পড়ে যায় ৮৮ বা ৮৯ টাকা। তাই বেশি দামে বিক্রি না করে উপায় থাকে না।’
চিনি কিনতে আসা ক্রেতা শিহাবুল ইসলাম বলেন, ‘আগে থেকেই তো বেশি দামে কিনছি। কমল আর কই? গত সপ্তাহেও এরকমই দাম ছিল, এখন দুই টাকার মতো বেশি দিতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘যখন দাম কমায় সঙ্গে সঙ্গে তা কার্যকর করা হয় না। আর যখন বাড়ানোর ঘোষণা আসে, তখন নির্ধারিত সময় থেকেই তা কর্যকর করা হয়। এসব ঠিক করবে কে?’
মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত দরের চেয়ে কম দামেই বিক্রি হচ্ছে পাম তেল। এর আগে যখন ১৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয় তখনও ১৬ থেকে ১৮ টাকা কমে পাম বিক্রি হয়েছে ১১৫ থেকে ১১৭ টাকায়।
বর্তমানে এক লিটার পাম তেলের দাম ১২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন নির্ধারিত দামের চেয়েও ৮ থেকে ১০ টাকা কমে পাওয়া যাচ্ছে এই তেল।
বিক্রেতা মামা-ভাগিনা স্টোরের আবু বক্কর বলেন, ‘প্রতি লিটার পাম তেল বিক্রি করছি ১১৫ টাকায়। কেজির হিসাবে ১২৫ টাকায়।’
কম দামে তেল না পাওয়া গেলেও বেশি দামে চিনি বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের সহকারী পরিচালক (মেট্রো) মাগফুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ব্যবসায়ীদের মধ্যে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের প্রবণতা রয়েছে। আমাদের একাধিক ইউনিট বাজার মনিটরিং বা অভিযান অব্যাহত রেখেছে। নির্ধারিত মূল্য কার্যকর করতে কাজ করা হচ্ছে।’