যুক্তরাষ্ট্রে সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি হয়েছে পূর্বাভাসের তুলনায় কম। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) সুদহার আরো অন্তত দুই দফায় কমানোর সম্ভাবনা বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি হয়েছে পূর্বাভাসের তুলনায় কম। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) সুদহার আরো অন্তত দুই দফায় কমানোর সম্ভাবনা বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার নিয়ে আশাবাদী মনোভাব দেখা যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। এর ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সাপ্তাহিক লেনদেনের শেষদিনে ওয়াল স্ট্রিটের প্রধান শেয়ারবাজার সূচক বেড়ে দাঁড়িয়েছে রেকর্ড উচ্চতায়। খবর এপি।
সাপ্তাহিক লেনদেনের শেষদিন শুক্রবার এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে পৌঁছেছে ৬ হাজার ৭৯১ দশমিক ৬৯ পয়েন্টে, যা চলতি মাসের শুরুতে গড়া রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে। ডাও জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ ৪৭২ পয়েন্ট বা ১ শতাংশ বেড়ে স্থির হয়েছে ৪৭ হাজার ২০৭ দশমিক ১২ পয়েন্টে। আর নাসডাক কম্পোজিট সূচক ১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ২০৪ দশমিক ৮৭ পয়েন্টে। তিনটি সূচকই রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতি তথ্য বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্য আয়ের পরিবারের জন্য কিছুটা স্বস্তিদায়ক। পণ্যের দাম এখনো বেশি হলেও বৃদ্ধির হার কিছুটা কমেছে। এটি ফেডারেল রিজার্ভের জন্যও ইতিবাচক সংকেত। কারণ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন সুদহার কমিয়ে কর্মসংস্থান খাতে নতুন গতি আনতে পারে।
ফেড চলতি বছর প্রথমবারের মতো সুদহার কমিয়েছিল গত মাসে। তবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সংস্থাটি সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। দ্রুত সুদহার কমানো হলে মূল্যস্ফীতি আরো বৃদ্ধির ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু সর্বশেষ মূল্যস্ফীতি তথ্য প্রকাশের পর পুঁজিবাজারে ফেডের ধারাবাহিক সুদহার কমানোর প্রত্যাশা আরো জোরালো হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা ধারণা করছেন, পরবর্তী দুই বৈঠকেই ফেড সুদহার কমবে, যার একটি অনুষ্ঠিত হবে চলতি সপ্তাহে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অ্যানেক্স ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ ব্রায়ান জেকবসেন বলেন, ‘এ মুহূর্তে ফেড কর্মকর্তারা মূল্যস্ফীতির চেয়ে শ্রমবাজার নিয়ে বেশি চিন্তিত। কোনো বড় পরিবর্তন না ঘটলে তাদের মনোভাব এখনই বদলানোর সম্ভাবনা কম।’
এদিকে এপ্রিলের নিম্নমুখী পর্যায় থেকে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক এর মধ্যে বেড়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। দ্রুত এ উত্থান নিয়ে কিছু বিশ্লেষক শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে শেয়ারদর কোম্পানির মুনাফার তুলনায় দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাংক খাতে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ বৃদ্ধির আশঙ্কাও পুঁজিবাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছিল। এমন অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চীনা পণ্যে উচ্চ শুল্ক আরোপের হুমকি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন উদ্বেগ যোগ করেছিল।
সাম্প্রতিক অস্থিরতার পরও শেয়ারবাজার প্রতিবারই ঘুরে দাঁড়িয়ে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ব্যাংকগুলো বলছে, এসব চাপ ছিল বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার ফল, যা পুরো খাতের স্থিতিশীলতায় বড় প্রভাব ফেলবে না। এদিকে চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়ায় ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, বৈঠকটি দুই দেশের বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমনে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।
চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান কোম্পানিগুলোর মুনাফা বিশ্লেষকদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি এসেছে। এ ইতিবাচক ফলাফলও শেয়ারবাজারের উত্থানে ভূমিকা রেখেছে।
ফোর্ড মোটরের শেয়ারদর বেড়েছে ১২ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কোম্পানিটির মুনাফা বিশ্লেষকদের অনুমানের চেয়ে বেশি এসেছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, পুরো বছরের আর্থিক ফলাফল ফেব্রুয়ারিতে ঘোষিত পূর্বাভাসের সর্বোচ্চ সীমার কাছাকাছি রয়েছে।
ইন্টেলের শেয়ারদর বেড়েছে দশমিক ৩ শতাংশ। কোম্পানিটি বিশ্লেষকদের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি মুনাফা করেছে। প্রধান নির্বাহী লিপ–বু ট্যান বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) খাতের দ্রুত সম্প্রসারণ কম্পিউটিংয়ের চাহিদা বাড়াচ্ছে এবং নতুন সুযোগ তৈরি করছে।’
গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের শেয়ারদর বেড়েছে ২ দশমিক ৭ শতাংশ। এআই কোম্পানি অ্যানথ্রপিক জানিয়েছে, তারা গুগলের ক্লাউড প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াচ্ছে, যার পরিমাণ ১০ হাজার কোটি ডলারের বেশি। এতে অ্যালফাবেটের বাজারমূল্য আরো বেড়েছে।
প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বলের মুনাফাও প্রত্যাশার চেয়ে বেশি এসেছে, যদিও কোম্পানির প্রধান নির্বাহী জন মোলার বলেছেন, ‘চলমান ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা ও কঠিন ভোক্তা বাজারের মধ্যেও আমরা স্থিতিশীল থাকতে পেরেছি। এ কারণেই আমাদের শেয়ারদর বেড়েছে দশমিক ৯ শতাংশ।’
সাপ্তাহিক লেনদেনের শেষদিনে ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ার সূচকের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপ ও এশিয়ার শেয়ারবাজারেও সূচক বেড়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার কসপি সূচক বেড়েছে ২ দশমিক ৫ আর জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক বেড়েছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ।
বন্ডবাজারে তেমন কোনো বড় পরিবর্তন হয়নি। ১০ বছর মেয়াদি মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের ইল্ড বৃহস্পতিবারের ৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশে।
এছাড়া শুক্রবার প্রকাশিত মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ জনগণের ভবিষ্যৎ মূল্যস্ফীতি প্রত্যাশা এখনো মিশ্র অবস্থায় রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এ প্রত্যাশাই ভবিষ্যতে বাস্তব মূল্যস্ফীতির গতিপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।