জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে দেশের শীর্ষ ধান ও চাল উৎপাদনকারী জেলা দিনাজপুরে। পাঁচ দিনের ব্যবধানে জেলার পাইকারি বাজারে ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। বাড়তি দামেও বাজারে গুটি স্বর্ণ চালের দেখা পাচ্ছে না ক্রেতা।
বাজারে ধানের সংকটের পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
এদিকে বাজারে ধানের সরবরাহ কম। ধান পাওয়া যা যাচ্ছে তাও ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি বলে মিলমালিকরা জানিয়েছেন।
দিনাজপুরে চালের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার হিসেবে পরিচিত শহরের বাহাদুর বাজার এনএ মার্কেট। এই মার্কেটের কয়েকজন পাইকারি দোকানদার জানান, গত শুক্রবার এই বাজারে ৫০ কেজির এক বস্তা মিনিকেট ৩ হাজার ২০০, আঠাশ ২ হাজার ৬৫০, উনত্রিশ ২ হাজার ৪৫০, সুমন স্বর্ণ ২ হাজার ৩৫০, গুটি স্বর্ণ ১ হাজার ৮৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
পাঁচ দিনের ব্যবধানে বুধবার এই বাজারে ৫০ কেজির এক বস্তা মিনিকেট ৩ হাজার ৪৫০ টাকা, আঠাশ ২ হাজার ৯০০, উনত্রিশ ২ হাজার ৬৫০, সুমন স্বর্ণ ২ হাজার ৬২০, গুটি স্বর্ণ ২ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দাম বাড়া গুটি স্বর্ণ চাল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না বলে ক্রেতারা অভিযোগ করেছেন।
দক্ষিণ বালুয়াডাঙ্গার বাসিন্দা জরিনা বেগম বলেন, ‘চাল কিনতে বাজারে এসে জানতে পারলাম, ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে। আমি তো টাকা হিসাব করে নিয়ে আসছি। এখন চাল কীভাবে কিনব। সমস্যা হবে শুধু আমার মতো গরিবের। এভাবে চালের দাম বাড়তে থাকলে আমাদের মরণ ছাড়া উপায় নাই।’
এনজিও কর্মী নাজমা বানু বলেন, ‘আমি গত জুনে ৫০ কেজির এক বস্তা চাল কিনেছিলাম ২৭০০ টাকায়। আজ চাল কিনতে আসছি। দোকানদাররা সেই চাল বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা বেশি চাচ্ছে। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে চলা খুব কঠিন হয়ে পড়তেছে। আমি একটি এনজিওতে চাকরি করি। চালের দাম বাড়লে তো আর আমার বেতন বাড়ে না। আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে।’
শহরের পাগলার মোড় এলাকার দিনমজুর রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমি দিনমজুর হিসেবে কাজ করি। দিনে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পাই, সেটা দিয়ে চাল ও শাকসবজি কিনতে শেষ হয়ে যায়। ছয়জনের পরিবারে দিনে তিন বেলা খেতে তিন কেজি চাল প্রয়োজন। চাল কিনতে প্রায় ২০০ টাকা খরচ হয়ে যায়। বাকি টাকা শাকসবজি কিনে শেষ হয়। মাসে এক দিনও ভালো তরকারি খেতে পারি না। এভাবে চালসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের দাম বাড়লে ভবিষ্যতে মরা ছাড়া উপায় থাকবে না।’
এনএ মার্কেটের রণজিৎ চাল ঘরের স্বত্বাধিকারী রণজিৎ সাহা বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে মিলগেটে চালের দাম বেশি নেয়া হচ্ছে। কারণ হিসেবে মিল থেকে জানানো হচ্ছে, বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ধান নেই। যেসব ধান পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি বেড়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে মিলের উৎপাদন কম হচ্ছে। উৎপাদন এবং মিল থেকে বাজারে চাল সরবরাহে পরিবহন খরচ বেড়েছে।’
পাইকারি চাল বিক্রেতা কৃষ্ণ চন্দ্র শীল বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এ কারণে অনেক ক্রেতার সঙ্গে ঝগড়াও লেগে যাচ্ছে। বাজারে দাম বাড়ার কারণে ক্রেতার অভাব দেখা গিয়েছে। ক্রেতা চালের দাম শুনেই চলে যাচ্ছে।’
বাংলাদেশ অটো, মেজর ও হাসকিং মিল মালিক সমিতির সহসভাপতি ও পাটোয়ারী বিজনেস হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সহিদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন বাজার পরিস্থিতি জানান নিউজবাংলাকে। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি বিদ্যুতের লোডশেডিং বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পাশাপাশি বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ধান নেই। ধান বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। বিদ্যুতের কারণে ধান থেকে চালে রূপান্তর কম হচ্ছে। পাশাপাশি চাল পরিবহনের জন্য পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। এসব কারণে বাজারে চালের দাম বেড়েছে।’