বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাকে আরও বেগবান করতে ডি-৮ সদস্য দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
মঙ্গলবার ডি-৮ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বিনিময় ও একসঙ্গে কাজ করার কৌশল নির্ধারণে ঢাকায় শুরু হওয়া উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়িক সংলাপ ও এক্সপোর উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ডি-৮-এর সেক্রেটারি জেনারেল রাষ্ট্রদূত ইসিয়াকা আব্দুল কাদির ইমাম, ডি-৮ সিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম উপস্থিত ছিলেন।
সংস্থাটির রজতজয়ন্তী উপলক্ষে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এই আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক সংলাপ ও এক্সপোর আয়োজন করা হয়।
দুই দিনের এই আয়োজনে বাংলাদেশ, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও তুরস্কের চেম্বারস অব কমার্সের সভাপতি, প্রতিনিধি দল এবং ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নিয়েছেন।
এবারের ফোরাম সংলাপে বাংলাদেশসহ অন্য সদস্য দেশগুলোর মধ্যকার ভ্যালু চেইনের ছয়টি এবং ভ্যালু চেইন ইন্টিগ্রেশনের ১৩টি বৃহৎ ক্ষেত্রের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় বাংলাদেশ ভালো করছে। উৎপাদন, শিল্প, সেবা, কৃষি, রপ্তানি তথা জিডিপি প্রবৃদ্ধি সব দিক থেকে বাংলাদেশ এই করোনা মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেও ভালো অবস্থানে আছে। আরও ভালো করতে চায় বাংলাদেশ। এ জন্য ডি-৮ সদস্য দেশগুলো বাংলাদেশের এই উন্নয়ন ধারায় সম্পৃক্ত হয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পারে, যার মাধ্যমে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা, তথ্য বিনিময় ও সেবা সরবরাহের ক্ষেত্র আরও সহজ হতে পারে।’
বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের কেন্দ্রবিন্দু উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ‘উৎপাদনে এখন বাংলাদেশ বিশ্বের নতুন সম্ভাবনা। প্রতি বছর গড়ে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। করোনাও এই প্রবৃদ্ধিকে দমাতে পারেনি। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণে। বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ অতি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও ধান, শাকসবজি, মাছ ও প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে শীর্ষ দেশের তালিকায় এখন বাংলাদেশের নাম।
‘এখানে ভোক্তা বেশি, চাহিদা বেশি। তাই উৎপাদন এবং আমদানিও বেশি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট সংকটে ডি-৮ সদস্য দেশগুলো বাংলাদেশের এই উন্নয়ন অগ্রগতির অংশীদার হতে সঙ্গে একত্রে কাজ করতে পারে।
‘ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে আছে ডিজিটাল বিপ্লবের বিরাট সম্ভাবনা। এ ক্ষেত্রে সাইবার নিরাপত্তা সরঞ্জাম উপাদান, লজিস্টিকস ও পরিবহন সরঞ্জাম এবং জ্ঞানভিত্তিক সেবা, আইসিটিতে পেশাদার সেবা, অর্থনৈতিক খাতকে প্রযুক্তি সক্ষম করা, রোবোটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই, আইওটি, সাইবার সিকিউরিটিজ, দক্ষতা, গবেষণা ও উন্নয়ন, ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলিউশন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ইন্টারনেপ অফ থিংস, ডেটা অ্যানালিটিক্স, কাজের ভবিষ্যৎ এবং প্রয়োগ-ভিত্তিক দক্ষতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ডি-৮-এর সদস্য দেশগুলোকে আমি একত্রে কাজ করার আহ্বান জানাই।’
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জানান, দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য এগিয়ে চলছে। এতে সরকার সম্ভব সব ধরনের নীতিসহায়তা দিচ্ছে, ভবিষ্যতেও দেবে। তবে ব্যবসার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ ও তার টেকসই করতে মূল ভূমিকা বেসরকারি খাতকেই নিতে হবে। এ জন্য তিনি দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘বৈশ্বিকভাবে এখন যে সংকট শুরু হয়েছে, এই সংকটে একমাত্র সমাধান হলো অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ফোরামভুক্ত দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসা।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ করোনা মহামারির মতো সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সৃষ্ট সংকটও বাংলাদেশ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। ডি-৮ সদস্যভুক্ত দেশগুলোর টেকসই ব্যবসা প্রসারে টেকসই ও শক্তিশালী ভ্যালু চেইন তৈরিতে বি-টু-বি এবং জি-টু-জি ভিত্তিতে যেটা যে ফরম্যাটে দরকার তাই করতে প্রস্তুত সরকার।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে ডি-৮ সদস্য উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগের আহ্বানও জানান।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়িক সংলাপ ডি-৮ সদস্য দেশগুলোর পারস্পরিক বাণিজ্য বিনিয়োগ ও সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও সম্প্রসারিত করবে। তিনি বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতির স্থিতিশীলতার নানা দিক তুলে ধরে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের প্রথম দিন সাধারণ পরিষদে ছয়টি ক্ষেত্রের সম্ভাবনা, সম্ভাব্য রোডম্যাপ ও এর কৌশলগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, যা দ্বিতীয় দিন ডি-৮ মিনিস্ট্রিয়াল পর্যায়ে উপস্থাপন করা হবে।
পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব দেয়া হবে এবং করণীয় ঠিক করা হবে।