বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ধানের বিপরীতে চালের উৎপাদনও কম এবার

  •    
  • ৩ জুন, ২০২২ ১৮:০৫

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুশান্ত কুমার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে ধান থেকে চাল কম হতে পারে। এবার আগেভাগেই কৃষককে ধান কাটতে হয়েছে। এ কারণে কোনো কোনো এলাকায় ধান একেবারে পরিপুষ্ট হয়নি। সেখান থেকে কিছুটা চাল কম হতে পারে।’

দাম বৃদ্ধি নিয়ে নানা আলোচনা, অভিযান, বৈঠকের মধ্যে এবার ধানের বিপরীতে চালের উৎপাদন কম পাওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

কুষ্টিয়ায় বিভিন্ন চালকলে উৎপাদনের তথ্য বলছে, এবার ৪০ কেজি ধানের বিপরীতে চাল পাওয়া যাচ্ছে ২৪ কেজি বা তার আশপাশে। অন্যান্য বছর এই চাল পাওয়া যেত ২৬ কেজি বা তার চেয়ে বেশি।

প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে মিলমালিকরা অবশ্য দাবি করছেন, প্রতি মণের বিপরীতে চালের উৎপাদন আরও কম, সেটি ২২ থেকে সাড়ে ২২ কেজি।

বিশ্বজুড়ে পণ্যমূল্য ও জ্বালানির দরে যে ঊর্ধ্বগতি, তার প্রভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে বাংলাদেশেও। এর মধ্যে ধানের প্রধান মৌসুম বোরো ফসল ওঠার পর চালের দামও দিয়েছে লাফ।

এবার হাওরে আগাম বন্যা আর অতিবৃষ্টিতে কিছু ফসলহানি হলেও সরকারের হিসাবে উৎপাদন চাহিদার সমান্তরালেই আছে। তাই চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ দেখছে না প্রশাসন। তার পরও দাম বেড়ে যাওয়ার পর চালকল, গুদাম ও বাজারে চলছে প্রশাসনের অভিযান।

ঢাকায় চাল সরবরাহের অন্যতম উৎস কুষ্টিয়ায় মিলমালিকদের সঙ্গে বৈঠকও করেছে স্থানীয় প্রশাসন। চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে কী কারণ থাকতে পারে, তা বোঝার চেষ্টা করছেন কর্মকর্তারা।

সেই বৈঠকের সূত্রে ধান ও চালের উৎপাদন খরচ কত, পরিবহন খরচ কত, এই খাতে কী কী সমস্যা রয়েছে, সেগুলো উঠে এসেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুশান্ত কুমার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে ধান থেকে চাল কম হতে পারে। এবার আগেভাগেই কৃষককে ধান কাটতে হয়েছে। এ কারণে কোনো কোনো এলাকায় ধান একেবারে পরিপুষ্ট হয়নি। সেখান থেকে কিছুটা চাল কম হতে পারে। কারণ মিলে দিলে অপরিপুষ্ট ধানের চাল ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

‘জাত ভেদে ধান থেকে চালের পরিমাণ কম হওয়ার কারণ হতে পারে। কোনো কোনো জাতে এক মণে ২৬-২৭ কেজি চাল পাওয়া যায়। আবার কোনো জাতে তার থেকে কম পাওয়া যায়।’

মিলমালিকের মুনাফা কত

এবার কুষ্টিয়ার মিলমালিকরা মিনিকেট ধান কিনেছেন গড়ে ১ হাজার ৪৫০ টাকা মণ দরে। দূরের হাট থেকে এসব ধান কুষ্টিয়ার মিলে আনতে খরচ পড়েছে মণপ্রতি ৫০ টাকা।

অটো ড্রায়ার মিলে প্রতি মণ ধান থেকে চাল উৎপাদনে শ্রমিক, বিদ্যুৎ বিলসহ খরচ হয় গড়ে ৯০ টাকা। নিজের মিল নেই যাদের তাদের কাছ থেকে অটোমিলের ভাড়া নেয়া হচ্ছে মণপ্রতি ১০০ থেকে ১১০ টাকা।

চাল পরিবহনের জন্য বস্তা কেনা হচ্ছে ৬২ টাকায়। সব মিলিয়ে খরচ পড়ছে ১ হাজার ৬৫২ টাকা।

ধান খারাপ হওয়ায় ৪০ কেজি থেকে এ বছর গড়ে ২৪ কেজি চাল হচ্ছে। যদিও বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে মিলমালিক জয়নাল আবেদিন, আব্দুল খালেক ও আব্দুস সামাদ বলেন, মণে এবার ২২-২৩ কেজি চাল পাওয়া যাচ্ছে।

কিন্তু খাজানগরে বিভিন্ন মিলমালিক, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে গড়ে ২৪ কেজি চাল হচ্ছে এবার। অন্য বছর হতো ২৬ কেজিরও বেশি। বাকি সাড়ে সাত কেজি তুষ হচ্ছে।

প্রতি কেজি ৭ টাকা হিসাবে এই তুষ বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা ৫০ পয়সায়। পাঁচ কেজি পাওয়া যাচ্ছে পলিশ কুঁড়া, যা বিক্রি হচ্ছে ১২৮ টাকায়। দুই কেজি খুদ ও কালো মাছি দানা চাল বিক্রি থেকে আসছে ৫৬ টাকা আর দেড় কেজি তুষ মিশ্রিত ধুলা বিক্রি হচ্ছে ২ টাকায়।

সব মিলিয়ে চাল ছাড়াও এসব বিক্রি করে মিলমালিকের আসছে ২৩৮ দশমিক ৫ টাকা। এই হিসাবে এক মণ ধান থেকে চালের উৎপাদন খরচ দাঁড়াচ্ছে ১ হাজার ৪১৩ টাকা ৫০ পয়সা।

মণে ২৪ কেজি চালের হিসাবে প্রতি কেজি মিনিকেটের উৎপাদন খরচ পড়ছে ৫৮ টাকা ৯০ টাকা।

কুষ্টিয়ার খাজানগরে মিলগেটে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) মিনিকেট চাল ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ কেজির হিসাবে পড়ে ৬৪ টাকা। এই হিসাবে মিলমালিকদের প্রতি কেজিতে লাভ থাকছে ৫ টাকা ১০ পয়সা।

চাল ঢাকায় নিতে প্রতি বস্তায় খরচ পড়ে ৫০ টাকা, যা কেজির হিসাবে পড়ে ১ টাকা।

প্রতিদিন গড়ে কুষ্টিয়ার বড় অটোমেটিক মিল থেকে চার ট্রাক চাল যায় ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায়। রশিদসহ অতি বড় আকারের মিল থেকে যায় ১০ ট্রাকেরও বেশি। এক ট্রাকে চাল থাকে ১৩ টন। চার ট্রাকে চাল থাকে ৫২ হাজার কেজি। গড়ে ৫ টাকা করে লাভ থাকলেও দিনে আসে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

মিলমালিকদের নেতা আব্দুর রশিদ বলেন, লাভের হিসাব যেমন আছে, তেমনি লোকসানও হয়। অনেক মিলমালিক দেউলিয়া হয়ে গেছেন। ব্যাংক থেকে নেয়া টাকার ইন্টারেস্টের কথা হিসাব করতে হবে। তা ছাড়া সরকারকে ট্যাক্স দেয়া লাগে। আর চাল বাকিতে নিয়ে অনেক পাইকার টাকা পরিশোধ করেন না।’

অটোমেটিক পদ্ধতির বাইরে খাজানগরে সনাতন পদ্ধতিতে চাল উৎপাদন হয়। এ প্রক্রিয়ায় গ্যাস ও তুষ জ্বালিয়ে প্রথমে ধান সেদ্ধ করা হয়। তারপর খোলা চাতালে শুকানো হয়। পরে ভাঙানো হয় হাসকিং মিলে। এখান থেকে চাল বাছাই করতে নিয়ে যাওয়া হয় কালার সর্টার মেশিনে।

এই প্রক্রিয়ায় গেলে কেজিপ্রতি আরও ৫০ পয়সা খরচ বেশি পড়ে। এই প্রক্রিয়ার মিলমালিক বা ব্যবসায়ীদের লাভ থাকে ৪ টাকার ওপরে।

খাজানগরের মিলমালিক শরীফুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, মফিজুল ইসলাম, ব্যবসায়ী মো. হান্নান, নুরুল হোসেন, আমিরুল ইসলাম ও মো. ইউনুসের কাছ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

অনেকেই জানিয়েছেন, মিনিকেট চাল তৈরিতে মিনিকেট ধানের সঙ্গে কিছু জাতের সরু ধান মেশানো হয়। এগুলোর দাম মণে ১০০ টাকা কম থাকে। সেই হিসাব করলে লাভের অঙ্ক আরও বাড়ে।

কুষ্টিয়ার খুচরা বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৭ টাকা কেজি দরে।

দাম কমতে শুরু করেছে

সারা দেশে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসনের অভিযানের পর থেকে ধানের দাম কমতে শুরু করেছে। নওগাঁ ও যশোরের বাজারে মণে ১০০ টাকা করে কমেছে।

বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযান শুরুর পর মিলমালিকরা ধান কিনছেন না। প্রশাসনের নির্দেশনা মোতাবেক যে ধান কেনা আছে তা মাড়াই করে বিক্রি করা হচ্ছে। চালের নতুন অর্ডারও আসছে না।’

কুষ্টিয়া পৌর বাজারের চাল বিক্রির বড় দোকান মেসার্স মা স্টোরের মালিক আহম্মদ মনজুরুল হক রিপন বলেন, ‘চাল চাইলে তাৎক্ষণিক পাওয়া যাচ্ছে না। আজ অর্ডার দিলে কমপক্ষে পাঁচ দিন পর চাল দিতে পারবে বলে বলছে মিল থেকে।’

এ বিভাগের আরো খবর