সরু চালের অন্যতম বৃহৎ মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে মিলমালিক ও মজুতদারদের স্বেচ্ছাচার এখনও থামেনি বলে অভিযোগ করেছেন ভোক্তা ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। তারা আরও বেশি করে চাল মজুত করছেন বলে অভিযোগ করছেন তারা।
সোমবার চালের দাম এবং সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেউ অবৈধভাবে চাল মজুত করলে ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আনুষ্ঠানিকভাবে পেলে তারা অভিযান শুরু করবেন।
এদিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ব্রিফিংয়ে জানান, ভোজ্যতেলের পর এবার চালের বাজারেও জোরদার অভিযানে নামছে সরকার।
এর মধ্যেই কুষ্টিয়ায় মিল থেকে ৬৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে মিনিকেট চাল, যা খুচরা বাজারে ৬৬ টাকা।
খাদ্য বিভাগ বলছে, লিখিত নির্দেশনা এলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর ভোক্তারা বলছেন, মনিটরিং ও অভিযান জোরদার করা হলে বাজার স্বাভাবিক হতে পারে।
চালের বাজারে অভিযান পরিচালনায় সরকারপ্রধানের নির্দেশের পর লিখিত নির্দেশনার অপেক্ষা করছেন কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী।
তিনি মঙ্গলবার দুপুরে বলেন, ‘সোমবার খাদ্যমন্ত্রী খুলনা ও বরিশাল বিভাগের খাদ্য বিভাগ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি সমন্বিত নির্দেশনা আসবে। আমরা সেই নির্দেশনা পেলেই সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে কাজ শুরু করব।
‘মিলগুলোর মজুত পর্যবেক্ষণের জন্য আমাদের পাঁচটি মনিটরিং টিম কাজ করছে। তারা মিলগুলোর মজুত এবং ধান কেনা ও চাল বেচার দর যাচাই করছে। আমরা এখনও অস্বাভাবিক কিছু পাইনি।’
কুষ্টিয়া পৌর বাজারের খুচরা বিক্রেতারা জানান, এখনও একই দামে চাল বিক্রি করছেন মিলমালিকরা।
নিউ স্বপন স্টোরের মো. স্বপন জানান, তারা এখনও ৫০ কেজি চালের বস্তা ৩২০০ টাকায় বেচছেন। তারপরও চাল লাইন দিয়ে কিনতে হচ্ছে। মিলে আজ অর্ডার দিলে চার-পাঁচ দিন পর চাল দিচ্ছেন তারা। এ কারণে খুচরা বাজারে সরু চালের দামে কোনো প্রভাব পড়েনি।
চালের দাম নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
বাজার করতে আসা আকমল হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশ দিয়েছেন, সে অনুয়ায়ী অভিযান চালালে ভালো কিছু হতে পারে। মিলমালিকরাই দাম বাড়ান। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে আমরা কম দামে চাল পাব।’
রেজাউল হক বলেন, ‘কৃষকের ধান নষ্ট হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এত দাম অস্বাভাবিক। সরকারের উচিত আমদানির ঘোষণা দেয়া। তা হলেই মিলমালিকরা কম দামে বেচতে বাধ্য হবেন।’
কুষ্টিয়া চেম্বারের সাবেক পরিচালক আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘চাল ব্যবসায়ীরা আমাদেরই লোক। তাদের আহ্বান জানাব, দেশের মানুষের কথা চিন্তা করার।’
অতি মুনাফা করে মানুষ না ঠকানোর আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা শোনার পরপরই অভিযান শুরু করা উচিত ছিল, আর কোনো অপেক্ষার দরকার নেই। কুষ্টিয়ায় বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যাদের, তারা ঠিকমতো কাজ করেন না।’বাংলাদেশ অটো রাইচ মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘ধানের অতিরিক্ত দাম হওয়ায় চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এখন মিনিকেট ধান কিনতে হচ্ছে ১৫০০ টাকা মণ।’
তিনি বলেন, ‘মিলমালিকদের কোনো সিন্ডিকেট নেই। তাদের কাছে অতিরিক্ত মজুতও নেই।’
ব্যবসায়ীরা জানান, কুষ্টিয়ার খাজানগর দেশের সরু ধান-চালের বৃহত্তম মোকাম। এখানে ৪৫০টি মিল আছে, এর মধ্যে ৫৫টি বড় অটোমেটিক মিল। এখান থেকে সারা দেশে সরু চাল সরবরাহ করা হয়।