বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা হওয়ার কারণ দেখি না: দেবপ্রিয়

  •    
  • ৯ মে, ২০২২ ১৯:৪৬

‘শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা করা অযৌক্তিক। আমি বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা করতে চাই না। আমি এমন পরিস্থিতি হওয়ার কারণ দেখি না।’

শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনা হতে পারে না বলে মনে করেন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। বলেছেন, বাংলাদেশের এমন পরিস্থিতিতে পড়ার কোনো কারণ তিনি দেখেন না।

বৈদেশিক ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছে বলেও মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তবে আগামী তিন থেকে চার বছর পর স্বস্তির জায়গা আর থাকবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে সাবধান হওয়ার জায়গা আছে।

সোমবার গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে এক অনলাইন আলাপচারিতায় এ কথা বলেন সরকারের অর্থনৈতিক নীতির কট্টর সমালোচক এই অর্থনীতিবিদ।

বাংলাদেশের পরিণতিও শ্রীলঙ্কার মতো হবে কি না, তা নিয়ে নানা লেখা ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বিরোধী দলের নেতারাও বক্তৃতায় তুলে ধরছেন প্রসঙ্গটি।

পর্যটননির্ভর শ্রীলঙ্কান সরকারের রাজস্ব আয়ের খাত পর্যটনে ধস নেমেছে করোনার দুই বছরে। পর্যটকদের ভ্রমণ বন্ধ থাকায় কার্যত এ খাত থেকে দেশটির আয় হয়নি। কিন্তু পর্যটক আকৃষ্ট করতে গ্রহণ করা নানা প্রকল্পে আগে নেয়া বিপুল বিদেশি ঋণের কিস্তি ঠিকই পরিশোধ করতে হচ্ছে।

শিল্প উৎপাদনে ধস নেমেছে, রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সও পৌঁছেছে তলানিতে। পাশাপাশি কর ও ভ্যাট কমানো, কৃষিতে রাসায়নিকের ব্যবহার শূন্যতে নামিয়ে আনার কারণে উৎপাদনের ঘাটতি, সব মিলিয়ে কিছু ভুল পরিকল্পনা আর পদক্ষেপের কারণে এমন দশায় পৌঁছেছে দেশটি।

জনগণের নাগরিক সুযোগ সুবিধা কমে যাওয়ার পর দেশটিতে ক্ষোভ চরমে। টানা বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। তার এই সিদ্ধান্তের পর বিরোধীদের হামলায় একজন এমপির মৃত্যু হয়েছে।

শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি বাংলাদেশে হতে পারে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা করা অযৌক্তিক। আমি বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা করতে চাই না। আমি এমন পরিস্থিতি হওয়ার কারণ দেখি না।’

তবে শ্রীলঙ্কা থেকে শিক্ষা নেয়া যেতে পারে বলে মনে করেন সিপিডির ফেলো। বলেন, ‘একেকটি দেশ একেক রকমভাবে বিকশিত হয়। বাংলাদেশকে তার দায়দেনা নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখতে হবে এবং সরকারের ইতোমধ্যে যে সমস্ত নীতি বা আইন রয়েছে, সে অনুযায়ী সঠিক বিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

সতর্ক থাকতে হবে

সাম্প্রতিক সময়ে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, বিনিময়হার বেড়ে যাওয়ার চাপ এবং দেশ শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও নেপালের আর্থিক সংকট বিবেচনায় দায়দেনা নিয়ে আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলেও মনে করেন দেবপ্রিয়। বলেন, ‘দায়দেনা নিয়ে শ্রীলঙ্কা বড় সংকটে পড়েছে। এর পরিণতিতে সেখানে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে। পাকিস্তান ও নেপালেও প্রায় একই অবস্থা চলছে। বাংলাদেশকে বিষয়টি সতর্ক পর্যালোচনার মধ্যে রাখতে হবে।’

ঋণ পরিশোধের বর্তমান স্বস্তিদায়ক অবস্থাকে 'সবুজ' আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে তা 'হলুদ' হতে পারে এবং অস্বস্তি তৈরি হতে পারে। কিছু প্রকল্পে উচ্চ মূল্যের ঋণ পরিশোধের সময়সূচি এগিয়ে আসছে। বিশ্বব্যাংক, জাপানসহ প্রথাগতভাবে যারা কম সুদে ঋণ দিত, তারাও এখন তুলনামূলক বেশি সুদ নিচ্ছে। সুতরাং স্বস্তির জায়গাটা কমে আসছে।

সরকারের দায়দেনা কত

মূল প্রবন্ধে সরকারের দায়দেনা বৃদ্ধির হারও তুলে ধরেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় দায়দেনা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) চেয়ে বাড়ছে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশে মাথাপিছু দায়দেনা অর্থাৎ ঋণের পরিমাণ ৪৩২ ডলার । ঋণ হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ার তুলনায় কম হলেও ২০১৮ সালের পর থেকে দেশি ও বিদেশি ঋণের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।

আইএমএফ’র সূত্র অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরের সার্বিকভাবে জিডিপি অনুপাতে সরকারি দায়দেনা ৪৪ দশমিক ১০ শতাংশ। এর মধ্যে গত এক দশকে অভ্যন্তরীণ দেনা বৃদ্ধি হার প্রায় ৫৪ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ দায়দেনা ৬৯ বিলিয়ন ডলার। ২০১৩ সালের পরে এই বৃদ্ধি হার ১৫ থেকে ১৯ শতাংশ হারে বাড়ছে।

অন্যদিকে বৈদেশিক দায়দেনার পরিমাণ ৬০ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক দায়দেনা ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ১৪ শতাংশ এবং ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৭ থেকে ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ঋণ পরিস্থিতির ক্ষেত্রে পাঁচটি ঝুঁকির কথা বলেন তিনি। এর একটি হলো বিনিময় হারের ঝুঁকি। বাংলাদেশে এ ঝুঁকি বাড়ছে। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদের হারের ঝুঁকি বাড়ছে। বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হারের ঝুঁকিও কিছুটা বাড়ছে। অন্যদিকে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। আর প্রকল্প থেকে অর্থনৈতিক লাভ কতটুকু হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ঋণের সুদ পরিশোধের বিষয়ে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ২০০৬ সালে বৈদেশিক সুদ পরিশোধে ব্যয় হতো ৩৮ দশমিক ৯১ শতাংশ ও অভ্যন্তরীণ ৬১ দশমিক ০৯ শতাংশ। ২০২১ সালে এসে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় ৬৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ৩২ দশমিক ৩৫ শতাংশ ।

তিন বিষয়ে নজর দেয়ার আহ্বান

ঋণের চাপ চাপলাতে সরকারকে তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানান দেবপ্রিয় । এগুলো হলো: কর আহরণ বাড়ানোর মাধ্যমে আর্থিক সংহতিকরণ, বহিস্থ খাতের বর্তমান চাপ মোকাবিলায় সুরক্ষা দেয়া এবং দায়দেনা পরিস্থিতির সামগ্রিক, স্বচ্ছ এবং নিয়মিত তদারকির ব্যবস্থা।

সরকারি দায়দেনার সঙ্গে নির্বাচনের একটি সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য । তিনি বলেন, ‘ব্যক্তি খাত বিদেশ থেকে টাকা নিয়েছে ১৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন। এটা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা জিডিপির ৫ শতাংশ। তারা যদি ঠিকমতো ঋণ পরিশোধ না করে তাহলে দেশের জন্য অশনিসংকেত হতে পারে।’

গ্লোবাল ইন্ট্রিগ্রিটির রেফারেন্স দিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে ও পরের বছরে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচারের পরিমাণ বেড়ে যায়। গণতান্ত্রিক অস্থিতিশীলতা ও আস্থার সংকট দেখা দিলে এ ধরনের প্রবণতা বেড়ে যায়।

এ বিভাগের আরো খবর