পর পর দুই দিন উত্থানের পর পুঁজিবাজারে এক দিনে কোনো কোম্পানির শেয়ারের দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা দুই শতাংশ থেকে বাড়িয়ে পাঁচ শতাংশ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর বাজারে ধসের মধ্যে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে দুই শতাংশ করা হয়। প্রথমে এই বিধানটি ধস ঠেকাতে পারলেও পরে এটিই লেনদেন কমে যাওয়ার একটি কারণ হিসেবে দেখা দেয়।
এই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার বিএসইসির একটি আদেশে নতুন সীমার কথা জানানো হয়। বৃহস্পতিবার থেকে এটি কার্যকর হবে। এতে জানানো হয়, বুধবার সমাপনী দরের ওপর ভিত্তি করে কাল সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ দাম কমতে পারবে।
অবশ্য শেয়ারের দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা আগের মতোই ১০ শতাংশ রাখা আছে।
নতুন এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে বিএসইসির পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি। তবে নতুন নির্দেশনাকে স্বাগত জানিয়েছে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাক আহমেদ সাদেক। বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তিনি।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সুস্থ-স্বাভাবিক বাজারের জন্য এটার প্রয়োজন ছিল। বাজারকে তার স্বাভাবিক চলতে দিতে হবে। জোর করে বা নিয়ম করে শেয়ারের দাম বেশি দিন আটকে রাখা ঠিক নয়। এতে বাজারের স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্ত হয়।
‘আমি মনে করি বিএসইসি ঠিক কাজটিই করেছে। আমি এ সিদ্ধান্ত স্বাগত জানাই। বাজারের এর ভালো ফল বয়ে আনবে।’
পুঁজিবাজারে এক দিনে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা দুই শতাংশ থেকে বাড়িয়ে পাঁচ শতাংশ করে বিএসইসির আদেশ
সাম্প্রতিক সময়ে বাজরে কিছু অদ্ভুদ ও নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে বলেও মনে করেন মোস্তাক আহমেদ। বলেন, ‘তার যথাযথ বিচার হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। যে সব ট্রেডার শূন্য দামে সেল অর্ডার দিয়েছে, বিএসইসি চিহ্নিত করেছে, সাসপেন্ডও করেছে। এখানে অন্য কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি না-সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে।’
‘দুই শতাংশে সীমা যেভাবে বাধা হয়ে উঠে’
মার্চের শুরুতে ব্যাপক দরপতনের মধ্যে গত ৮ মার্চ বিনিয়োগকারীদেরকে রক্ষায় স্থিতিশীলতা তহবিল থেকে এক শ কোটি টাকা বিনিয়োগের নির্দেশের পাশাপাশি দর কমার সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করেছিল কমিশন।
এই নির্দেশ জারির পর দিন ঘুরে দাঁড়ায় পুঁজিবাজার। ১৫৫ পয়েন্ট সূচক বাড়ার দিন ৩৬৫টি কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধি পায়। এর মধ্যে ১৪টি কোম্পানির দর দিনের দাম বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়েছে। সার্কিট ব্রেকারের প্রায় কাছাকাছি বেড়েছে আরও চারটির দর। আরও ১৬টি কোম্পানির দর ৮ শতাংশের বেশি, ১৭টির দর ৭ শতাংশের বেশি, ২২টির দর ৬ শতাংশের বেশি, ২৩টির দর ৫ শতাংশের বেশি, ৪৯টির দর বেড়েছে ৪ শতাংশের বেশি।
- আরও পড়ুন: পতন ঠেকানোর দুই পদক্ষেপে ফিরল প্রাণ
তবে এই উস্থান বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। বিশেষ করে রোজায় এপ্রিলের শুরু থেকে পুঁজিবাজার ক্রমেই নিম্নমুখি হতে থাকে। বহু কোম্পানির শেয়ারগুলো প্রায় প্রতিদিনই দুই শতাংশ করে দর হারাতে থাকে। কিন্তু এই পড়তি দামেও শেয়ার কেনার ক্রেতা পাওয়া যায়নি।
এক পর্যায়ে বাজারের লেনদেন এক হাজার কোটি টাকা থেকে কমে সাত শ কোটির ঘরে, পরে ছয় শ কোটির এরপর পাঁচ শ কোটির ঘরে নামে। বৃহস্পতি ও রোববার তা নামে চার শ কোটি টাকার কমে।
- আরও পড়ুন: সূচক পড়ছেই, লেনদেনের এ কি হাল!
এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের একটি সংগঠন পুঁজিবাজারের আবার ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দর বেঁধে দেয়ার দাবি উঠে, যদিও তা নাকচ করে দেয় বিএসইসি।
এই লেনদেন কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে ‘২ শতাংশের সীমাকে’ দায়ী করেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের একাংশ, যাদের মধ্যে আছেন ডিএসই ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও।
সম্প্রতি তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, মন্দা বাজারে শেয়ারদর ২ শতাংশ কমে যাওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের মনে ধারণা জন্ম হচ্ছে দর আরও কমে যাবে। ফলে এই দামে ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। এতে লোকসান দিয়েও শেয়ার থেকে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ মিলছে না।
আবার ২ শতাংশ কমে পতন কবে থামবে- এটা দেখার জন্য শেয়ারের ক্রেতা না আসায় চাহিদা তৈরি হচ্ছে না। এতে আবার সেই শেয়ারের দর বৃদ্ধির সুযোগও তৈরি হচ্ছে না। আর চাহিদা না বাড়লে শেয়ারদরও বাড়ে না।
শেয়ারের চাহিদা বাড়লে যে দর বাড়ে, সেটি গত দুই দিনে দেখা গেছে। আগের দুই দিন বড় পতনের পর মঙ্গলবার সূচক এক পর্যায়ে ৫৯ পয়েন্ট পড়ে গেলে শেয়ারের ক্রেতা দেখা যায়। এতে বাজার ঘুরে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত ৪৭ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন শেষ হয়। অর্থাৎ দিনের সর্বনিম্ন সূচকের সঙ্গে ১০৮ পয়েন্ট যোগ করে শেষ হয় লেনদেন।
পরের দিন উত্থান ছিল আরও বেশি। ক্রেতারা সক্রিয় হতে শুরু করার পর আর কম দামে শেয়ার ছাড়তে রাজি হচ্ছিল না বিক্রেতারা। এতে অল্প অল্প করে বাড়ে দাম। বেলা শেষে সূচকে ৭৬ পয়েন্ট যোগ হলে বিনিয়োগকারীদের মনের চাপ অনেকটাই কমে।