যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের ক্ষতির পরিমাণ ও ভয়াবহতা ছিল অবর্ণনীয় – এমন মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করে পাকিস্তানিরা বাংলাদেশকে এক ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, তখন সারা দেশের মানুষের হাতে ছিল মাত্র ৪ কোটি টাকা। কোনো বৈদেশিক মুদ্রার মজুতও বাংলাদেশ ব্যাংকে ছিল না।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। এ সভার আয়োজন করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।
অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল জানান, ‘মাত্র ১০ হাজারের মতো নথি দিয়ে শুরু হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সচিবালয়। বঙ্গবন্ধু যেদিন টেলিফোনে কথা বলতে শুরু করেন, সেদিন ঢাকা জেলা থেকে মাত্র তিনটি জেলার সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল।
‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্দেশে আল-বদর সদস্যরা রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের সব টাকা ১৬ ডিসেম্বর সকালে রাস্তায় এনে আগুন দিয়ে ধ্বংস করে ফেলেছিল। এমন একটি বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে দাঁড় করাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।
‘একটি ধ্বংসস্তুপের ছাই থেকে শুরু করেন বঙ্গবন্ধু, তার নেয়া সেসব যুগান্তকারী পদক্ষেপের সুফল বাংলাদেশের মানুষ এখন ভোগ করে চলেছে। যার ভিত্তিভূমির উপর আজ দাঁড়িয়ে আছে দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতি। অর্থাৎ সোনার বাংলা গঠনের মজবুত ভিত বঙ্গবন্ধুর হাতেই তৈরি হয়েছিল।’
১৫ আগস্টকে স্মরণ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশাল হৃদয়ের যে মানুষটিকে কারাগারে বন্দী রেখেও পাকিস্তানি হানাদাররা স্পর্শ করার সাহস দেখাতে পারেনি, স্বাধীন বাংলার মাটিতে নির্মমভাবে সপরিবারে তাঁকে জীবন দিতে হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হারানোর সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে গোটা জাতি।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অতুলনীয় বিশাল ব্যক্তিত্ব। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড, যার নজির ইতিহাসে বিরল। ওই কালরাতে শিশু অন্তঃসত্ত্বা নারীকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন, পাশাপাশি তিনি অতি অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের আর্থিক খাতগুলোর জন্য মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেন।
‘তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছরে তিনি আমাদের আর্থিক খাতের প্রায় প্রতিটি সেক্টরে যে কর্মযজ্ঞ শুরু করেন, তা অকল্পনীয়। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি। বীমা খাতেও বঙ্গবন্ধুর অবদান শুরু থেকেই। এই বীমা খাতকেও সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আমরা শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে সামনে এগিয়ে যাবে।’
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন এফসিএর সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসাবে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন।