করোনাভাইরাস মহামারির এই সংকটের সময়ে সেবা খাতসহ অন্যান্য খাতে কর্মসংস্থান কমলেও কৃষি খাতে বেড়েছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, মহামারিকালে কৃষিতে কর্মসংস্থান বেড়েছে ১৮ শতাংশ।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার কারণে বেসরকারি খাতে ৬২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। তারা গড়ে ৯৫ দিনের মতো কাজ পাননি। পরে তাদের অনেকেই কাজ পেয়েছেন। তবে আয় কমেছে। এর পরিমাণ গড়ে ১২ শতাংশ। করোনার কারণে সেবা খাতে চাকরি কমেছে। আর কৃষিতে কর্মসংস্থান বেড়েছে ১৮ শতাংশের বেশি।
মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের আগে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ১৬ জেলার ২ হাজার ৬০০ খানার (পরিবার) ওপর জরিপ চালিয়ে এই তথ্য পেয়েছে সিপিডি।
প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানের জন্য কী আছে – শীর্ষক সংলাপে এই গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান।
কৃষি খাতে কর্মসংস্থান কেন বেড়েছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৌফিকুল ইসলাম ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোভিডকালে রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় শহরের অনেকেরই চাকরি চলে যাওয়ায় তারা গ্রামে ফিরে গিয়ে কৃষি কাজে সম্পৃক্ত হয়েছে। কেউ নিজের জমিতে চাষাবাদ করছেন। অনেকে অন্যের জমি লিজ নিয়ে আবাদ করছেন। আবার অনেকে দিনমজুরির কাজে যোগ দিয়েছেন।’
সে কারণেই সেবাসহ অন্যান্য খাতে কর্মসংস্থান কমলেও কৃষিতে বেড়েছে বলে জানান তিনি।
সিপিডি ও অক্সফাম আয়োজিত এই সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
সংসদে বাজেট আলোচনা এক ধরনের ‘নাটক’
সংলাপে অংশ নিয়ে সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনাকে ‘নাটক’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, বাজেট আলোচনা এক ধরনের নাটক। সাংসদেরা নিজেদের এলাকার প্রকল্প নিয়ে কথা বলেন। প্ল্যাকার্ড নিয়ে সাংসদ সংসদে কথা বলেন। বাজেট আলোচনায় একজন সাংসদের জন্য গড়ে ১০ মিনিট সময় দেওয়ার কোনো মানে নেই।
বক্তব্যের একপর্যায়ে রেহমান সোবহান অনুষ্ঠানে উপস্থিত সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন ও অধ্যাপক আলী আশরাফকে প্রশ্ন করেন, তারা সংসদে বাজেট আলোচনায় কত মিনিট সময় পান? এ সময় রাশেদ খান মেনন জানান, ১০ মিনিটের মতো সময় পান।
বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করা রেহমান সোবহান বলেন, সামাজিক সুরক্ষার আওতায় অভীষ্ট মানুষেরা বাদ পড়ে যাচ্ছে, অন্যরা ঢুকে পড়ছে। আর কোভিডকালে নতুন গরিব বেড়েছে। নতুন গরিব ও পুরোনো গরিব—এই দারিদ্র্যের পরিসংখ্যান এক ধরনের ধূম্রজাল সৃষ্টি করে। মানুষ কতটা ঝুঁকিতে আছে, সেটাই বড় বিবেচ্য বিষয়।
গরিব মানুষ ও দরিদ্রপ্রবণ এলাকা বিবেচনায় গরিব মানুষের জন্য বিমা সুরক্ষা নিশ্চিত করার তাগিদ দেন তিনি।
রেহমান সোবহানের বক্তব্যের পর সংসদ সদস্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘বাজেট নাটক কি না, জানি না। একটি স্টেজ থাকে, সেখানে গিয়ে আমরা হাজির হই। বাজেট নিয়ে সংসদে আলোচনা অর্থহীন। আলোচনা করতে হয় বলেই করি। ১০ মিনিট সময় বরাদ্দ থাকলে কী হয়, একটি পয়েন্ট আলোচনা করতেই ১০ মিনিট চলে যায়। প্রান্তিক মানুষের কথা বাজেটে না এলে বাজেট অর্থহীন।’
তিনি বলেন, বাজেট অনেকটা আমলানির্ভর হয়ে গেছে।
সাবেক ডেপুটি স্পিকার সংসদ সদস্য আলী আশরাফ বলেন, তৃণমূলের সঙ্গে আলোচনা করেই বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা উচিত।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্পর্কে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এ কর্মসূচিতে শুভংকরের ফাঁকি আছে। বরাদ্দের চেয়ে বেশি দেখানো হয়; যত টাকা পাওয়ার কথা, তা দেওয়া হয় না এবং প্রকৃত সুবিধাভোগীরা ভাতা পান না।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ পরামর্শ দেন, করোনার সময় যেসব প্রতিষ্ঠান কোনো কর্মী ছাটাই করবে না, তারা আড়াই শতাংশ কর ছাড় পাবে। আর যারা ১০ শতাংশ নতুন কর্মী নিয়োগ দেবে, তারা আরও কর ছাড় পাবে। সেই ব্যবস্থা করা গেলে কর্মসংস্থানে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক লায়লা আশরাফুন বলেন, মানুষের চাহিদা অনুযায়ী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নিতে হবে।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আশিকুর রহমান বলেন, এ দেশের সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোয় শহরের গরিবদের উপেক্ষা করা হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। আরও বক্তব্য দেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের বরিশাল শাখার নেত্রী মণীষা চক্রবর্তীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।