পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস ধীরে ধীরে তুলে দেয়া হবে- এটাই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সিদ্ধান্ত। তবে সেটি একবারে নয়, ধাপে ধাপে করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
শিগগিরই আরও ৩০ থেকে ৩২টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয় হবে জানালেও সেগুলো কোনগুলো, তা জানাতে চাননি তিনি। তবে এই কোম্পানিগুলো ফ্লোর প্রাইসেও সেভাবে লেনদেন হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
নিউজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘এখন হয়তো ৩০ থেকে ৩২টা আছে। আমরা এখন এটি নিয়ে খুবই সিরিয়াসলি চিন্তা করছি। খুব শিগগির আমরা বাকি যে ৩০-৩২টা কোম্পানি আছে, সেগুলোও উঠিয়ে দেব। তাহলে বছর ধরে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের যে টাকা আটকে আছে, তারা হয়তো লেনদেনে আসবে।’
এভাবে পর্যায়ক্রমে সবগুলোর ফ্লোর প্রাইসই তুলে দেয়া হবে বলেও জানান শিবলী রুবাইয়াত।
ধাপে ধাপে করার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘যদি একসঙ্গে করতে যাই, তাহলে বাজারের সূচক ও লেনদেনে প্রভাব পড়বে। এ জন্য আমরা একটা একটা করে করব। তারপর একটা সময় পর আমরা পুরোটাই উঠিয়ে দেব।’
গত বছর করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ার পর শেয়ার দরে ধস ঠেকাতে এই ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্য বেঁধে দেয়া হয়। এর মধ্যে ৬৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া হয় গত ৭ এপ্রিল।
- আরও পড়ুন: ফ্লোর প্রাইসে লাভ নেই: রকিবুর রহমান
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেও এবার ঝুঁকি নিয়েও ফ্লোর প্রাইস তোলার কারণ, সর্বনিম্ন দামেও এই শেয়ারগুলোর লেনদেন হচ্ছিল না বললেই চলে।
প্রথম দিনই আতঙ্কে এসব কোম্পানি ব্যাপকভাবে দর হারালেও পরে বিএসইসি কিছুটা স্বস্তি দেয় বিনিয়োগকারীদের। তারা জানান, এসব কোম্পানির শেয়ার দিনে ১০ শতাংশ দর বাড়তে পারবে, কিন্তু কমতে পারবে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ।
শুরুতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষুব্ধ হলেও প্রায় দুই মাস পর ফ্লোর তোলার মূল্যায়ন করলে বেশ কিছু ইতিবাচক প্রভাবও লক্ষ করা যায়। যেসব কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হতো না বললেই চলে, সেগুলো এখন প্রতিদিনই বিপুল পরিমাণ লেনদেন হচ্ছে। এতে বিনিয়োগকারীদের আটকে থাকা টাকা সচল হচ্ছে। এক কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে তারা অন্য কোম্পানির শেয়ার কিনতে পারছেন।
আবার আগের ফ্লোর প্রাইস ছাড়িয়ে দাম বেড়েছে প্রায় অর্ধেক কোম্পানির। আরও বহু কোম্পানির শেয়ার দর ফ্লোরের আশপাশেই আছে। যেকোনো একটি ভালো দিনেই সেগুলো আগের ফ্লোর প্রাইস ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এই অভিজ্ঞতার পর পুঁজিবাজারকেন্দ্রিক ফেসবুক পেজগুলোতেও বিনিয়োগকারীরা ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার পক্ষে কথা বলছেন কেউ কেউ। আবার এর বিরোধিতাও করছেন অনেকে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান জানান, তাদের কাছেও এমন দাবি জানানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে বিনিয়োগকারী এসোসিয়েশনেরও চিঠি এসেছে। তারাও অনুরোধ করেছেন ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেয়ার জন্য।’
সর্বোচ্চ ২ শতাংশ কমার বিধান চালু থাকবে
ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া ৬৬ কোম্পানির দর দিনে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ কমতে পারবে বলে যে সুবিধা দেয়া হয়েছে, সেটি আরও কিছু দিন চালু থাকবে বলেও জানান বিএসইসির চেয়ারম্যান। নতুন যেগুলোর ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হবে, সেগুলোর ক্ষেত্রে প্রথম দিন থেকেই এই বিধানই চালু থাকবে।
বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘এ সুবিধা কিছুদিন থাকুক। এগুলো যদি উঠিয়ে দেই…এক দিনে যদি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তাহলে সূচক ও মার্কেটে ওপর এর প্রভাব পড়বে।’
কেন ফ্লোর প্রত্যাহার
বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, পুঁজিবাজারবিষয়ক বৈশ্বিক জোট ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশন- আইওএসসিওর সদস্য বাংলাদেশ। সেই জোট এই সিদ্ধান্তকে বাজারে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে। আর এ কারণে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে র্যাংকিং কমে যাবে।
গত ৭ এপ্রিল ৬৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া হয়যেসব কোম্পানির লেনদেন নেই বললেই চলে
গত ২১ ফেব্রুয়ারির পর ফ্লোর প্রাইসে এক দিনে সর্বোচ্চ ৩২১টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের। অর্থাৎ বেঁধে দেয়া সর্বনিম্ন দামকে যৌক্তিক মনে করছেন না বিনিয়োগকারীরা।
এই খাতেরই মুন্নু সিরামিকেরও একই অবস্থা। গত ২২ মার্চের পর এক দিনে সর্বোচ্চ ২ হাজার ১৯৩টি শেয়ার হাতবদল হয় গত ৩১ মে। কোনো কোনো দিন একটিও শেয়ার লেনদেন হয়নি।
একইভাবে প্রকৌশল খাতের এটলাস, বিডি অটোকার, ইস্টার্ন কেবল, কে অ্যান্ড কিউ, মুন্নু অ্যাগ্রো, ন্যাশনাল টিউব, রেনউইক যগেশ্বর, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের জেমিনি সি ফুড, ন্যাশনাল টি কোম্পানি, পাট খাতের নর্দার্ন জুট, বিবিধ খাতের এসকেট্রিমস, ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোহিনূর কেমিক্যালসসহ আরও কিছু কোম্পানি আছে, যেগুলোর লেনদেন হয় না বললেই চলে।