বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাজেট নিয়ে গোপনীয়তা কেন

  •    
  • ১৬ মে, ২০২১ ০৮:৩৩

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, বাজেটের গোপনীয়তা রক্ষা করার বিষয়টি চলে আসছে প্রথাগতভাবে। গোপন রাখার ব্যাপারে কোনো আইন নেই। অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, বাজেট গোপন রাখার প্রয়োজন নেই।

বাংলাদেশে সাধারণত জুনের প্রথম সপ্তাহে বাজেট ঘোষণা করা হয়। ৩০ জুন তা জাতীয় সংসদে পাস হয়। কার্যকর হয় ১ জুলাই থেকে।

বাজেট এলেই অর্থনৈতিক প্রতিবেদকদের মধ্যে, বিশেষত যারা বাজেটবিষয়ক প্রতিবেদন করেন, তাদের মধ্যে টেনশন বাড়ে। কারণ, কার আগে কে ব্রেকিং প্রতিবেদন দিতে পারেন, তা নিয়ে প্রতিযোগিতা চলে।

যে প্রতিবেদক আগেভাগে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস করতে পারেন, তিনি কৃতিত্বের দাবি রাখেন। অফিস কর্তৃপক্ষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতাও বাড়ে।

তথ্য জানার অধিকার সবার রয়েছে। তবে এটা এখনও কাগজকলমে।

আমাদের দেশে গণমাধ্যমে ‍যারা প্রতিনিয়ত সংবাদ পরিবেশন করেন, নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে তথ্য সংগ্রহ করে তাদের প্রতিবেদন করতে হয়। বাজটবিষয়ক তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সেটা আরও বেশি সত্য।

কিন্তু জাতীয় বাজেট প্রণয়ন নিয়ে এই আড়াল কেন? বাজেট কি গোপন দলিল? সরকারি নীতিনির্ধারক মহলের কাছ থেকে এর পরিষ্কার কোনো জবাব পাওয়া যায় না। তবে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে এ নিয়ে তর্ক রয়েছে।

বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, বাজেটের গোপনীয়তা রক্ষা করার বিষয়টি চলে আসছে প্রথাগতভাবে। এর জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই যে, বাজেটের বিষয়বস্তু গোপন রাখতে হবে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বাজেট গোপন রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। জনগণের জন্যই বাজেট। সুতরাং এতে যেসব পরিবর্তন আসবে, আগেভাগে জানিয়ে দেয়া উচিত। এতে করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে এবং জনগণ উপকৃত হবে।

সাবেক অর্থসচিব ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান রচিত ‘বাংলাদেশে বাজেট: অর্থনীতি ও রাজনীতি’ গ্রন্থে বাজেট নিয়ে গোপনীয়তার রীতি ব্যাখা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘যদি কোনো ব্যবসায়ী আগে থেকে জানেন যে, নতুন বাজেটে কর বা শুল্ক বাড়বে কিংবা কমবে তাহলে ওই ব্যবসায়ী তার জ্ঞান ব্যবহার করে রাতারাতি বড়লোক হয়ে যেতে পারেন। কাজেই সংসদে বাজেট পেশ করার আগে বাজেটের প্রস্তাবাবলি গোপন রাখতে হবে। যে অর্থমন্ত্রী তার বাজেটের গোপনীয়তা রক্ষা করতে পারবেন না, তার পক্ষে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়।’

বাজেট ফাঁস হওয়ায় ব্রিটেনের এক অর্থমন্ত্রীকে যে বিপদে পড়তে হয়েছিল, সে কথাটিও এই অর্থনীতিবিদ তার বইতে তুলে ধরেন।

আকবর আলি খান উল্লেখ করেন, অধ্যাপক হিউ ডালটন ১৯৪৭ সালে যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। তিনি ব্রিফকেসে বাজেট নিয়ে যখন সংসদে ঢুকছিলেন, তখন সাংবাদিকরা শুল্ক-করবিষয়ক কিছু প্রশ্ন করলে তিনি জবাব দেন।

এ খবর সংবাদমাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ হয়ে যায়।

অর্থমন্ত্রী ডালটন যখন সংসদে তার বাজেট বক্ততা পড়ছিলেন, তখন পত্রিকার কপি সংসদে উপস্থিত এমপিদের হাতে হাতে। বাজেট ফাঁস হয়ে গেছে, এমন অভিযোগে বিরোধী দল হইচই শুরু করে।

ডালটন তার ভুল স্বীকার করে পদত্যাগ করেন।

আকবর আলি আরও বলেন, অনেক দেশে ঘোষণার আগের সপ্তাহে বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত কর্মকর্তাদের একটি হোটেলে বদ্ধ অবস্থায় রাখা হতো, যাতে কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারে।

তবে গত ২০০ বছরে বাজেট প্রণয়ন ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।

এ বিষয়ে আকবর আলি খান বলেন, ‘অনেক দেশে সংসদে এখন শুল্ক-কর প্রস্তাব গোপন থাকে না। এসব প্রস্তাব নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা হয়। দর-কষাকষি করা হয় এবং আপস করা হয়।’

কিন্তু বাংলাদেশে এখনও অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে বাজেট নথি তৈরি করা হয়। এমনকি সংসদেও কোনো আলোচনা করা হয় না। কিছু ক্ষেত্রে অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হলেও তার প্রতিফলন দেখা যায় না বাজেটে।

বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়া এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত এবং আমলানির্ভর বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

তবে বাজেট নিয়ে কাজ করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এমন সাবেক কর্মকর্তারা মনে করেন, শুধু শুল্কবিষয়ক প্রস্তাবগুলো গোপন রাখা উচিত। এর বাইরে বাকি সবকিছু অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। এতে করে করদাতা ও বিনিয়োগকারী উভয়ই উপকৃত হবেন।

বাজেট গোপন রাখা উচিত নয় বলে মনে করেন গবেষণা সংস্থা পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ও আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ড. আহসান এইচ মনসুর।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে করনীতি নিয়ে নাটক করা হয়। গোপনীয়তা একটি ভুল নীতি, বর্তমান যুগে যার কোনো প্রয়োজন নেই।’

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সংসদে বাজেট উপস্থাপন করার পর জনপ্রতিনিধিদের কাছে মতামতের জন্য দেয়া হয়। তারা মতামত দেয়ার পর আলাদা বাজেটবিষয়ক সাব কমিটি সংশোধন করে। এই সাব কমিটি অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে বাজেট চূড়ান্ত করে। সেখানে সরকারের কোনো ভূমিকা থাকে না।

এনবিআরের সাবেক সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, শুল্কবিষয়ক প্রস্তাবগুলো গোপন রাখতে হবে। এই তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে ব্যবসায়ীদের আগে থেকে এলসি খুলে মালামাল আমদানির মাধ্যমে মজুত করে ফায়দা নেওয়ার সুযোগ থাকে। এর বাইরে বাকি সব বিষয় আগেভাগে জানালে কোনো ক্ষতি হবে না; বরং লোকে লাভবান হবে।

এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বাজেটে কর কাঠামোর বিষয়ে আগাম ঘোষণা থাকলে একজন বিনিয়োগকারীর পক্ষে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ পরিকল্পনা নেয়া সহজ হবে। এমন নীতি হলে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারাও উপকৃত হবেন।

এ বিভাগের আরো খবর