বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বয়স্ক ও বিধবা ভাতায় আরও ১২ লাখ

  •    
  • ১৫ মে, ২০২১ ০৮:০৬

এখন বয়স্ক ও বিধবা ভাতা মাসিক ৫০০ টাকা। নতুন বাজেটে ভাতার অঙ্ক অপরিবর্তিত রেখে শুধু সুবিধাভোগীদের সংখ্যা বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

করোনাভাইরাস মহামারিতে আরও বেশি গরিব মানুষকে সামাজিক সুরক্ষা দেবে সরকার। এ জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বয়স্ক ও বিধবা ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। তবে অপরিবর্তিত থাকছে ভাতার অঙ্ক।

অর্থ ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নতুন বাজেটে অতিরিক্ত সাড়ে ১২ লাখ বয়স্ক ও বিধবা ভাতাভোগীকে নতুন করে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনা হচ্ছে।

এর মধ্যে বয়স্ক ভাতায় যুক্ত হচ্ছে ৮ লাখ ২৬ হাজার জন। অবশিষ্ট ৪ লাখ ২৪ হাজার জন পাবেন বিধবা ভাতা।

এখন বয়স্ক ও বিধবা ভাতা মাসিক ৫০০ টাকা। নতুন বাজেটে ভাতার অঙ্ক অপরিবর্তিত রেখে শুধু সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। নিয়ম অনুযাযী, বর্তমানে ৬৫ বছর ও বেশি বয়সী ব্যক্তিরা মাসিক ভাতা পান।

বয়স্ক, বিধবাসহ বর্তমানে আট ধরনের মাসিক ভাতা চালু রয়েছে, যা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালনা করে।

এসব ভাতার বিপরীতে বর্তমানে উপকার বা সুফলভোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯১ লাখ ৫০ হাজার।

আগামী বাজেটে নতুন করে আরও সাড়ে ১২ লাখ যুক্ত হচ্ছে। ফলে সুবিধাভোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১ কোটি ৪ লাখে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, এবারের বাজেটে ১৫০টি উপজেলার শতভাগ যোগ্যদের, অর্থাৎ যারা ভাতা পাওয়ার সামর্থ্য রাখে, তাদের সবাইকে আওতায় আনা হচ্ছে।

বর্তমানে ওইসব উপজেলায় ৪৬ শতাংশ যোগ্য ব্যক্তি বয়স্ক ও বিধবা ভাতা পাচ্ছেন। যে অর্থবছরটি শেষ হতে যাচ্ছে, তাতে ১১২টি উপজেলার শতভাগ যোগ্যদের ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। এর ফলে দেশের ২৬২ উপজেলার যোগ্য সবাইকে ভাতার আওতায় আনতে সক্ষম হলো সরকার।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে পর্যায়ক্রমে সব উপজেলার যোগ্য সবাইকে ভাতার আওতায় আনা। সে অনুযায়ী কাজ করছে সরকার।

বর্তমানে সারা দেশে ৪৯২টি উপজেলা রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্যে ২৫০ উপজেলায় তুলনামূলকভাবে দরিদ্র লোকের সংখ্যা বেশি। বেশির ভাগই গাইবান্ধা, নীলফামারী, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের। কিছু উপজেলা আছে ময়মনসিংহ ও জামালপুর জেলায়। এসব এলাকাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার।

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় এখন পর্যন্ত বয়স্ক, বিধবা সুবিধাভোগীর সংখ্যাই সর্বাধিক। মোট ভাতাভোগীর ৭৬ শতাংশই এই দুই শ্রেণির।

এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কর্মসূচি হচ্ছে বয়স্ক ভাতা। এই সংখ্যা বর্তমানে ৪৯ লাখ। তার পর রয়েছে বিধবা ভাতা, যার সংখ্যা সাড়ে ২০ লাখ।

এ ছাড়া অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতার সংখ্যা আড়াই লাখ। তবে অসচ্ছল প্রতিবন্ধীর ভাতার অঙ্ক একটু বেশি। এদের মাসিক ভাতা ৭৫০ টাকা।

একই সঙ্গে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী পরিবারের সদস্যদের জন্য শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে বৃত্তিও দেয়া হয়। এর পরিমাণ সর্বনিম্ন ৭৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০০ টাকা।

আবার সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগণ ও চা-শ্রমিকদের জন্য এককালীন ভাতা দেয় সরকার।

এ ছাড়া দুস্থ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভাতা রয়েছে। তারা প্রত্যেকে মাসিক ১২ হাজার টাকা করে ভাতা পান। দুই ঈদে দুটি বোনাস ও বৈশাখী ভাতাও পান তারা। প্রায় ২ লাখ মুক্তিযোদ্ধা এই সুবিধা পাচ্ছেন।

এর বাইরে যুদ্ধাহত, খেতাবপ্রাপ্ত ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের স্বজনরা সর্বনিম্ন ২৫ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পান। এদের সংখ্যা ১২ হাজার।

তবে নতুন বাজেটে এসব ভাতার বিষয়ে কোনো পরিবর্তন আসছে না এবং সুবিধাভোগীর সংখ্যাও বাড়ছে না বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

এদিকে মাসিক ভাতার বাইরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে গরিব জনগণকে সামাজিক সুরক্ষা দিচ্ছে সরকার।

এর বাইরে রয়েছে মাতৃত্বকালীন ভাতা, যা নিয়ন্ত্রণ করে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ ভাতার অঙ্ক মাসিক ৮০০ টাকা। বর্তমানে প্রায় ৮ লাখ দুস্থ নারী এই সুবিধা ভোগ করছেন।

বর্তমানে সমাজকল্যাণ, ত্রাণ-দুর্যোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ ২২ মন্ত্রণালয় ও সংস্থা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ১৩০টি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পেনশন সুবিধা এক ধরনের সামাজিক কর্মসূচি। আবার রেশনিং, কাজের বিনিময়ে খাদ্য, জেনারেল রিলিফ, শিক্ষাবৃত্তি, কম দামে গরিবদের চাল দেয়া, ভিজিডি, ভিজিএফের মতো কর্মসূচির মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষা দেওয়া হয়।

এসব কর্মসূচি নির্ধারিত মন্ত্রণালয়গুলোর মাধ্যমে বাস্তবায়ন হচ্ছে। তবে জনপ্রিয় ও বড় কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন করছে সমাজসেবা অধিদপ্তর।

বর্তমানে মোট বাজেটের ১৩ শতাংশ ও জিডিপির আড়াই শতাংশ সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় করা হয়।

চলতি অর্থবছরে এ খাতে মোট ৯৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

করোনায় আরও বেশি গরিব মানুষকে সুরক্ষা দিতে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ আরও বাড়িয়ে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি প্রথম চালু করা হয়। এরপর থেকে কর্মসূচি সম্প্রসারণ করে তা অব্যাহত রাখা হয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে দুর্নীতির কারণে আশানুরূপ সুফল মিলছে না।

সরকারি গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসের সাবেক জ্যেষ্ঠ পরিচালক ড. জায়েদ বখত প্রকৃত যোগ্যদের এ সুবিধার আওতায় আনার পরামর্শ দেন।

তবে ইতিবাচক দিক হচ্ছে বর্তমানে মোবাইল ব্যাকিংয়ের মাধ্যমে সরাসরি সুবিধাভোগীদের কাছে ভাতার টাকা চলে যাচ্ছে।

এ ছাড়া যারা সত্যিকার অর্থে সরকারি ভাতা পাওয়ার যোগ্য তাদের বাছাই করতে একটি তথ্য ভান্ডার স্থাপন করেছে সরকার।

এসব উদ্যোগের ফলে এ খাতে দুর্নীতি অনেক কমে যাবে বলে আশা করছে সরকার।

এ বিভাগের আরো খবর