বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাজেটে বিশাল ঘাটতি, সুদ পরিশোধে চাপ বাড়ছে

  •    
  • ১৩ মে, ২০২১ ২১:৩৭

সরকারি ব্যয় নির্বাহের জন্য ঋণের ওপর বেশি নির্ভরশীল হতে হচ্ছে সরকারকে। বাজেটের বড় একটি অংশ ব্যয় হয় ঋণের সুদ পরিশোধে। এতে করে চাপ বাড়ছে সরকারের। ঋণের সুদ বাবদ ব্যয় এখন বাজেটের সর্বোচ্চ একক খাত।

সরকারের আয় কম। ব্যয় বেশি। ফলে এবারও বেশি ঋণ করে বিশাল ঘাটতি বাজেট করতে যাচ্ছে সরকার। আর এই ধারের বড় একটি অংশ আসছে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে।

বিদ্যমান আর্থিক ব্যবস্থাপনা ২০০৯ আইনানুযায়ী, জিডিপির পাঁচ শতাংশ ঘাটতি ধরে বাজেট তৈরির কথা উল্লেখ আছে এবং সে অনুযায়ী এতদিন বাজেট প্রণয়ন করে আসছে সরকার।

কিন্তু করোনাকালীন এ নিয়মের ব্যতয় ঘটিয়ে বাজেট করছে সরকার। যে অর্থবছরটি শেষ হতে যাচ্ছে, তাতে ঘাটতি ধরা হয়েছে (আয় ও ব্যয়ের পার্থক্য) ১ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ছয় শতাংশের কাছাকাছি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি আরও বেশি প্রাক্কলনের প্রস্তাব করা হচ্ছে। এর পরিমাণ হতে পারে ২ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬ শতাংশ।

বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, করোনাকালে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বেশি খরচের লক্ষ্য নিয়ে বিশাল ঘাটতি বাজেট করা হচ্ছে।

নতুন বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মোট ধার বা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৯৩ হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সংগ্রহ করে ঘাটতি মেটানো হবে।

যে অর্থবছরটি শেষ হতে যাচ্ছে, তাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা।

বাজেট ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশি উৎস থেকে অর্থের যোগান দেয় সরকার। আবার অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ঋণ নেয়া হয়।

আগামী অর্থবছরের সম্ভাব্য বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার কোটি টকা।

সুদ পরিশোধে চাপ বাড়বে

রাজস্ব আয় কমে যাওয়ায় সরকারি ব্যয় নির্বাহের জন্য ঋণের উপর বেশি নির্ভরশীল হতে হচ্ছে সরকারকে। যে কারণে বাজেটের বড় একটি অংশ ব্যয় হয় ঋণের সুদ পরিশোধে।

এতে করে চাপ বাড়ছে সরকারের। পরিসংখ্যানে বলে, সুদ বাবদ ব্যয় এখন বাজেটের সর্বোচ্চ একক খাত।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত নভেম্বর পর্যন্ত সরকারের মোট ব্যয় হয় ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু সুদ পরিশোধে খরচ হয় ২৪ হাজার কোটি টাকা।

অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে মোট ব্যয়ের ২৭ শতাংশ ব্যাংক ঋণ, সঞ্চয়পত্র ও বিদেশি ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধে চলে গেছে। এর মধ্যে বেশি সুদ গুণতে হয়েছে সঞ্চয়পত্রে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, আগামী বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে প্রায় ২১ শতাংশ বেশি।

অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, ঋণের বোঝা ক্রমশ বাড়ায় বিপুল অঙ্কের সুদ গুণতে হচ্ছে সরকারকে। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণে দুর্বলতার কারণেই বাজেট ঘাটতি পূরণে ঋণ নিতে হচ্ছে সরকারকে।

আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উচ্চ প্রবৃদ্ধির জন্য দরকার প্রচুর বিনিয়োগ। এর জন্য অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে যে পরিমাণ অর্থ জোগান দেয়ার প্রয়োজন, তা জোগান নিশ্চিত করতে পারছে না সরকার। সে জন্যই ঋণ নিতে বাধ্য হয়।’

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক গবেষণা পরিচালক, অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সম্পদ আহরণের সুযোগ কম। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে নমনীয় শর্তে ঋণ নিলে তা হবে অর্থনীতির জন্য ভালো।’

ব্যাংক থেকে ঋণ কমলেও, বাড়ছে সঞ্চয়পত্রে

বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক ব্যাংক দুই উপায়ে ঋণ নেয় সরকার। তবে বর্তমানে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ গ্রহণ কমলেও বেড়েছে সঞ্চয়পত্রে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়, তা থেকে দুই থেকে তিন গুণ বেশি নেয়া হয়। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নেয়ার লক্ষ্য প্রাক্কলন করে ২০ হাজার কোটি টাকা।

অথচ, আলোচ্য অর্থবছরের পাঁচ মাসেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ নেয়া হয়। রাজস্ব আদায় কমে হওয়ায় ঋণ বেশি নিতে হচ্ছে বলে জানান অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

এর ফলে মাত্রাতিরিক্ত সুদ গুণতে হচ্ছে সরকারকে। সাধারণত সঞ্চয়পত্রে সুদহার ব্যাংক ঋণের চেয়ে বেশি।

তবে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়ার প্রবণতা কিছুটা কমলেও আগের ঋণ পরিশোধ করায় বর্তমানে এ খাতে পুঞ্জিভূত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা, যার বিপরীতে নিয়মিত সুদ দিতে হচ্ছে সরকারকে।

গত অর্থবছর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৭২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার।

বিদেশি ঋণ সস্তা

বর্তমানে বাংলাদেশে বিদেশি ঋণ বাড়ছে। করোনাকালে গত অর্থবছরে প্রায় ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটি ডলার বিদেশি ঋণ পাওয়া গেছে, যা এযাবত কালের মধ্যে সর্বোচ্চ।

আগে সরকার গড়ে বছরে ৩ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেত। সরকার আশা করছে, এবার ৯ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ পাওয়া যাবে।

বিদেশি ঋণের সুদ হার নমনীয় হওয়ায় এটি বেশি করে সংগ্রহের পরামর্শ দেন অর্থনীতিবিদরা। যে পরিমাণ ঋণ জমেছে তার বিপরীতে বছরে গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি ডলার সুদ পরিশোধ করতে হয় সরকারকে। তবে একথাও সত্যি বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বেড়েছে। এ কারণে ঋণের পরিমাণও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘দেশীয় উৎস থেকে নেয়া ঋণের সুদের হার অনেক বেশি – গড়ে ১১ থেকে সাড়ে ১২ শতাংশ। আর বিদেশি ঋণের জন্য মাত্র ১ থেকে দেড় শতাংশ হারে সুদ দিতে হয়। অর্থাৎ দেশীয় ঋণের খরচ অনেক বেশি। এ কারণেই সুদ অনেক বেড়ে যায়।’

সক্ষমতা বেড়েছে

ইআরডির কর্মকর্তারা বলেন, ঋণ পরিশোধের সক্ষমতার জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়িয়েছে বাংলাদেশ। দেশের ক্রেডিট রেটিংও ভালো।

আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস, মুডিস এবং ফিচ রেটিংসের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক ভালো, যাকে স্থিতিশীল ইকোনমি হিসেবে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাগুলো। কোনো দেশকে ঋণ দেওয়া কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ, তারই মূল্যায়ন ক্রেডিট রেটিং।

ইআরডির এক কর্মকর্তা বলেন, বিদেশি ঋণ একদিকে বাড়ছে, অন্যদিকে বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতাও কয়েক গুণ বেড়েছে। বাংলাদেশ কখনও খেলাপি হয় নি। ঋণ পরিশোধে সক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে উন্নয়ন সহযোগীরা ঋণ দিতে আগ্রহী।

এ বিভাগের আরো খবর