চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বিভিন্ন পেশায় কাজ হারানো ৩৩ লাখ ৩৯ হাজার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে এ সহায়তা দেয়া হবে।
পরিবার প্রতি আড়াই হাজার টাকা করে সব মিলে ৮৩৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ ১৪ লাখ ৯৭ হাজার পরিবারের কাছে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ সহায়তা বিতরণ করবে ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’, যা মোট পরিবারের ৪৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
গত বছর কোভিডের শুরুর দিকে ঈদের আগেও একইভাবে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে ৩৪ লাখ ছয় হাজার দরিদ্রকে ‘প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার’ দেয়া হয়।
ওইবার ‘নগদ’ ১২ লাখ ৯০ হাজার পরিবরকে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা দিয়েছিল।
এ ছাড়া বিকাশের মাধ্যমে ১০ লাখ ৫৪ হাজার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে, যা মোট পরিবারের ৩১ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
গত বছর বিকাশ ৯ লাখ ৩০ হাজার পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর বিতরণ করেছিল।
ডাচ বাংলা ব্যাংকের এমএফএস সেবা রকেট এবার সাত লাখ ৮৮ হাজার পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা পৌঁছে দেবে। গতবার তাদের অংক ছিল সাত লাখ ৬ হাজার।
গতবার ‘শিওরক্যাশ’ চার লাখ ৮০ হাজার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দিলেও এবার তাদের সেবা বন্ধ। ফলে শিওরক্যাশের গ্রাহককে এবার বাকি তিন অপারেটর মধ্যে ভাগ করে করে দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এক্ষেত্রে শিওক্যাশের চার লাখ ৮০ হাজার গ্রাহকের অর্ধেকটা দেয়া হয়েছে ‘নগদ’কে, ৩০ শতাংশ বিকাশকে এবং ২০ শতাংশ রকেটকে।
গ্রাহক তার মোবাইলে আড়াই হাজার টাকা ক্যাশ-আউটের খরব পেয়ে যাবেন। ফলে গ্রাহকের বাড়তি কোনো খরচ হবে না।
প্রত্যেক এমএফএস অপারেটরের ক্যাশ-আউটের অর্থ যোগ করে সুবিধাভোগীকে পাঠাবে। তবে এর বিপরীতে অপারেটরগুলো সরকারের কাছ থেকে প্রতি হাজারে ৬ টাকা হিসেবে আড়াই হাজার টাকা পাঠাতে ১৫ টাকা করে পাবে। ফলে বাড়তি যেটা লাগবে সেটা সংশ্লিষ্ট অপারেটরকে দিতে হবে বলে জানা গেছে।
গতাবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্তদের জিটুপি পদ্ধতিতে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এবারও প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়ে এই ভাতা বিতরণ করা হবে।
‘নগদ’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, ‘নগদ’-এর সেবার প্রতি আস্থা রেখে, সেবায় সন্তুষ্ঠু হয়েই এবারও ‘নগদ’-কে সবচেয়ে বড় অংশটি বিতরণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সব নিয়ম মেনে স্বচ্ছতার সঙ্গে সরকারের দেয়া তালিকা অনুযায়ী সকল সুবিধাভোগীকে সরকারি সহায়তা পৌঁছে দেয়া হবে।
‘কোভিডের এ সময়ে উন্নত বিশ্বও যেখানে বেশি ট্যাক্স দেয় ব্যক্তিদেরকে বেশি সুবিধা দিয়েছে, সেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী দরিদ্র এবং কাজ হারানো মানুষের পাশে দাঁড়াতেই সবচেয়ে বেশি উদ্যোগী। এখানেই আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতা। তা ছাড়া ডিজিটাল সেবার প্রতিও তার বাড়তি আগ্রহের কারণে এখন ঘরে বসেই মোবাইল ফোনে সরকারের অনুদান পেতে পারছেন তারা।’
তিনি জানান, ‘নগদ’ সব সময়েই বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করে। সেই ধারাবাহিকতা এক্ষেত্রেও বজায় থাকবে।
কোভিডে কাজ হারানো পরিবারের পাশাপাশি ৪ এপ্রিল সংঘটিত ঝড়ো হাওয়া, শিলাবৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড়ে দেশের ৩৬টি জেলার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের পাঁচ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিষয়টি বিবেচেনার সুপারিশ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
এ বাবদ ৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন। কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা (নাম, জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর ও মোবাইল নম্বর) প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে।