বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘কফিনে শুয়ে’ পর্যটন খাত

  •    
  • ৯ এপ্রিল, ২০২১ ১৮:৫৮

প্রথম দফার লকডাউনে দেশে সবচেয়ে পর্যুদস্ত খাতগুলোর মধ্যে ছিল পর্যটন। দ্বিতীয় দফায় এ খাত আরও ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দেশের পর্যটন শিল্প আবারও অনিশ্চয়তায় পড়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে এরই মধ্যে প্রধান সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারসহ দেশের সকল পর্যটক স্পট বন্ধের ঘোষণায় নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

করোনার প্রথম ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই দ্বিতীয় ঢেউয়ের কবলে পড়ল অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এ খাতটি।

পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ট্যুর অপারেটররা বলছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে।

এ শিল্পের দুদর্শার কথা তুলে ধরে ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি রাফিউজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখন কফিনে শুয়ে আছি, কবরে যাওয়ার অপেক্ষায়।

‘করোনার প্রথম ধাক্কা সামলে ট্যুরিজম খাত কোনো রকম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিল। দ্বিতীয় ঢেউ কফিনে শেষ পেরেক বিদ্ধ করল। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, আমাদের আর কোনো উপায় নেই।’

এদিকে, দেশের পর্যটন শিল্পকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে নতুন আইন করতে যাচ্ছে সরকার। গত ৩ এপ্রিল জাতীয় সংসদে এ সংক্রান্ত বিল উপস্থাপন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।

বিলটির ব্যাপারে আপত্তি জানান জাতীয় পার্টির সাংসদ ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বেসরকারি ট্যুর অপারেটররা দেশের পর্যটন কার্যক্রমকে একটি জায়গায় নিয়ে এসেছে। তাদের কার্যক্রম ব্যহত করতে এ আইনটি করা হচ্ছে।

পরে বিলটি যাচাই-বাছাই করে এক মাসের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।

প্রস্তাবিত আইনের কিছু ধারায় সংশোধনী এনে তা কার্যকর করার দাবি জানিয়েছে টোয়াব।

গত বছর মার্চে দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হ্ওয়ার পর ১৮ মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকে। পাঁচ মাস পর নভেম্বরে সব খুলে দেয়ার পর কিছুটা প্রাণ ফিরতে শুরু করে।

ট্যুরিজম বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, করোনা শুরুর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে পাঁচ লাখের বেশি বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে এসেছিল। করোনাকালে পুরো বছর জুড়ে শূন্য হয়ে পড়ে বিদেশি পর্যটক।

গত বছরের নভেম্বরের পর অভ্যন্তরীণ পর্যটনে কিছুটা চাঙ্গা ভাব দেখা দিলেও করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দ্বিতীয় দফায় লকডাউন শুরু হওয়ায় আবার অনিশ্চয়তা তৈরি হলো এ খাতে।

টোয়াবের সভাপতি রাফিউজ্জামান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত সব খাতের জন্য সরকার প্রণোদনা দিলেও কিছুই পায়নি পর্যটন শিল্প। ব্যাংকগুলো বলেছে, পর্যটন শিল্প ঝুঁকিপূর্ণ। ঋণ দিলে পরিশোধ করতে পারবে না। আমাদেরকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করে না তারা। এ জন্য সুবিধা দেয়া হয়নি।’

তিনি প্রশ্ন করেন, ‘বইমেলা চলতে পারে, বাজারঘাট, যানবাহনসহ সব কিছু চলছে -তাহলে পর্যটনকেন্দ্র কেন বন্ধ থাকবে?’

বাংলাদেশে পর্যটনকে একটি উদীয়মান শিল্প ধরে নেয়া হয়। কয়েক বছর ধরে এ শিল্প হাঁটি হাঁটি, পা পা করে এগোচ্ছে। করোনা ভাইরাসের আকস্মিক প্রাদুর্ভাবে খাতটি প্রায় ধ্বংসের পথে। এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এ খাতটি পুরোপুরি পুনরুদ্ধারে কমপক্ষে তিন বছর সময় লাগবে।

প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়শনের (পাটা) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের গত বছর করা সমীক্ষা অনুযায়ী, করোনার কারণে গত বছর দেশের পর্যটন খাতে ক্ষতি হয় ১০ হাজার কোটি টাকা। তবে টোয়াবের হিসাবে এ ক্ষতির পরিমাণ আরও কম। প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা।

দেশের অর্থনীতিতে পর্যটন খাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বছরে কমপক্ষে ১০ লাখ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যটক পাওয়া গেলে ১ কোটি লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এর সুফল ভোগ করার সুযোগ রয়েছে।

পর্যটন একটি সম্ভাবনাময় খাত হওয়ার পরও জাতীয় বাজেটে তা বরাবর অবহেলিত থেকে যায়। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাজেটে মোট বরাদ্দের ১ শতাংশের কম দেয়া হয় এ খাতে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এটি কমপক্ষে ৪ শতাংশে উন্নীত করার দাবি জানায় টোয়াব।

বিলে সংশোধনের দাবি

প্রস্তাবিত বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইড (নিবন্ধন ও পরিচালন) খসড়া আইনের কিছু ধারায় পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে ট্যুর অপারেটররা।

খসড়া আইনে বিদেশি ট্যুর প্রতিষ্ঠানকে এ দেশে ব্যবসার সুযোগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ বিদেশিদের জন্য পর্যটন ব্যবসা উন্মুক্ত করা হয়েছে।

স্থানীয় ট্যুর অপারেটররা এতে আপত্তি জানিয়ে বলেছে, এ মুহূর্তে বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে ব্যবসার অনুমতি দেয়া হলে অম্ভ্যন্তরীণ পর্যটন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিল থেকে এটি বাদ দেয়ার দাবি জানিয়েছে টোয়াব প্রতিনিধিরা।

এখন শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে যে কেউ প্রতিষ্ঠান খুলে পর্যটন ব্যবসা করতে পারে। নতুন আইনে ট্রাভেল এজেন্সির মতো ট্যুর অপারেটরদেরও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বাধ্যতামূলক নিবন্ধনের বিধান করা হয়েছে।

ট্যুর অপারেটরা বলেছে, নিবন্ধনে তাদের আপত্তি নেই। তবে, এর জন্য যে ফি এবং নবায়ন ফি ধরা হবে, তা যেন সহনীয় হয়।

বর্তমানে জনশক্তি রফতানিকারক সমিতি ‘বায়রা’ ও হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন ‘হাব’-এর সদস্য ছাড়া অন্য কেউ এ ধরনের ব্যবসা করতে পারে না। কিন্ত টোয়াবের সদস্য না হলেও অন্য কেউ ট্যুরিজম ব্যবসা করতে পারে।

ট্যুর অপারটেরদের মত হচ্ছে, যারা পর্যটন ব্যবসা পরিচালনা করতে চাইবে, তাদের অবশ্যই টোয়াবের সদস্য হতে হবে এবং নতুন আইনে এসব বিষয় যুক্ত করতে হবে।

এ বিভাগের আরো খবর