জুম চাষ আর সংসারের সব কাজ শেষ করে চাদর বুনতে বসেন লালসিম বম। খুব বেশি বাড়তি সময় না পেলেও কোমর তাঁতে চাদর বুনে তিনি মাসে আয় করেন ৫ থেকে ৯ হাজার টাকা। এতে সংসারের খরচ জোগানোর পাশাপাশি নিজের টুকটাক শখও মেটানো যায়।
শুধু লালসিমই নন, কোমর তাঁত বুনে তার মতো ভাগ্য ফিরিয়েছেন বান্দরবানের অনেক বম নারী।
বান্দরবানের পাহাড়ে ১১টি জাতিগোষ্ঠীর বাস। এসব গোষ্ঠীর নারী সদস্যরা প্রায় সবাই কম-বেশি কোমর তাঁত বোনেন। বেশির ভাগই এই কাজ করেন অবাণিজ্যিকভাবে; নিজের প্রয়োজন মেটাতে। শুধু বম সম্প্রদায়ের নারীরাই তাদের ঐতিহ্য ধরে রেখে বাণিজ্যিকভাবে কোমর তাঁত বুনে আয়ের পথ বেছে নিয়েছেন।
বান্দরবান সদরের পার্শ্ববর্তী পর্যটনকেন্দ্র শৈলপ্রপাত এলাকার লাইমি পাড়া ও ফারুকপাড়ায় মূলত বম জাতিগোষ্ঠীর বাস। নিজেদের চাহিদা পূরণ করে তারা কোমর তাঁত ব্যবহার করে পর্যটকদের জন্য চাদর ও শীতের পোশাক বোনেন।
কখন-কীভাবে তৈরি হয় কাপড়
কোমর তাত নিয়ে ফারুকপাড়ার লালসিম বম নিউজবাংলাকে জানান, তাদের প্রত্যেক ঘরে কেউ না কেউ কোমর তাঁতে সারা বছর কাপড় বোনেন। শীতের সময় তারা এ কাজটি বেশি সময় নিয়ে করেন। কারণ, নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত জুমচাষের কাজ থাকে না। এ সময় বাজার থেকে বিভিন্ন রঙের সুতা কিনে কোমর তাঁতের মাধ্যমে শীতের কাপড় তৈরি করেন।
লালসিম জানান, একটি বড় চাদর বানাতে দুই দিন লাগে। তুলা লাগে দুই কেজি। দেড় কেজি তুলাতে এক দিনে একটা ছোট চাদর বানানো সম্ভব। ফুল তোলা বা অন্য ডিজাইনের চাদর হলে কয়েক দিন সময় লেগে যায়। এসব চাদর পাইকাররা কিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রির জন্য নিয়ে যান।
বম নারীদের বোনা চাদর
লালসিমের প্রতিবেশী আসিয়াম বম বলেন, পাইকারি দরে প্রতিটি বড় চাদর ৭০০ টাকা। আর ছোট চাদর ২০০ টাকা।
পর্যটন স্পট শৈলপ্রপাতে কয়েকজন খুচরা বিক্রেতার সঙ্গে কথা হয়।
তারা জানান, পর্যটকদের কেন্দ্র করেই তাদের ব্যবসা। বিভিন্ন জায়গা থেকে মানভেদে হাতের তৈরি চাদর সংগ্রহ করে তারা বিক্রি করেন। বড় চাদরে ৩০ থেকে ৪০ টাকা আর ছোট মাফলারে লাভ হয় ১০ থেকে ১৫ টাকা।
চাদরের পাশাপাশি আরও কিছু জিনিস (যেমন: ফতুয়া, থামি, ছাতা) তারা বিক্রি করেন।
ফারুকপাড়ার গির্জায় বাইবেল পাঠকারী সংকিম বম বলেন, ‘আমার গ্রামে প্রায় ২০০ বেশি পরিবার আছে। গ্রামের নারী-পুরুষরা মূলত কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু বম নারীরা তাঁতে চাদর বুনে দীর্ঘদিন ধরে বাড়তি আয় করে আসছে।’
পর্যটকদের কাছে চাদর বিক্রি করছেন নারীরা।
কোমর তাঁত বুনে বম নারীদের বাড়তি আয়কে ইতিবাচক বলে মনে করছেন জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা আতিয়া চৌধুরী।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বম সম্প্রদায়ের নারীরা খুবই পরিশ্রমী। এমন উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারিভাবে সহজ শর্তে ঋণ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।’
জেলা যুব উন্নয়ন দপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ হাছান আলী বলেন, ‘বম সম্প্রদায়ের অনেক তরুণী তাঁতে চাদর বোনেন। তাদের জন্য সরকার যুব ঋণ ব্যবস্থা করে রেখেছে। কেউ যদি যুব ঋণ নিতে চায় তাদের জন্য যুব উন্নয়ন বান্দরবান শাখা সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করবে।’