ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লভ্যাংশের সীমা বেঁধে দেয়া আদেশ পরিবর্তনের অনুরোধ পর্যালোচনার কথা জানালেও সিদ্ধান্ত জানাচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রস্তাব যাওয়ার খবরে মঙ্গলবার উত্থান হলেও সিদ্ধান্ত ঝুলে থাকায় বুধবার এই খাতে দেখা গেছে স্থবিরতা। একই পরিস্থিতি আর্থিক খাতে।
অন্যদিকে লোকসানি ও বন্ধ একের পর এক প্রতিষ্ঠানের পর্ষদ পুনর্গঠন করে চলেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এই খবরে এখন লোকসানি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ তুঙ্গে। প্রায় প্রতিদিনই এক দিনে সর্বোচ্চ পরিমাণ বাড়ছে বেশ কিছু লোকসানি প্রতিষ্ঠানের দর।
আগামীতে জেড ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলো চালু হলে ভালো লভ্যাংশ দেবে এমন গুজবে দাম বাড়িয়ে হলেও শেয়ার কিনছেন বিনিয়োগকারীরা।
দুর্বল কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধন কম হওয়ায় সেগুলোর দর বৃদ্ধিতেও সূচকে প্রভাব পড়ে কম। কিন্তু ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো বড় মূলধনী কোম্পানির শেয়ারের দর কমলে সূচকে বেশ প্রভাব পড়ে।
এই পরিস্থিতিতে ১৩১টি কোম্পানির দর বৃদ্ধি আর এর চেয়ে কমসংখ্যক ১২৬টির দর পতনের পরও সূচক পড়ে গেছে পুঁজিবাজারে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লভ্যাংশের সীমা বেঁধে দেয়া আদেশ পাল্টাতে অনুরোধের পর সিদ্ধান্ত এখনও জানায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক খাতে ৩০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম কমেছে ৯টির। ছয়টির দর আগের দিনের মতোই আছে। বাকি ১৫টির দর বেড়েছে।
আর্থিক খাতে ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর কমেছে ১৩টির, পাল্টায়নি সাতটির। বাকি তিনটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর বেড়েছে।
বিমা খাত সে তুলনায় ছিল চাঙা। ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৯টিরই দর বেড়েছে। কমেছে পাঁচটির। সমসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের দর আগের মতোই আছে।
জেড ক্যাটাগরির দৌরাত্ম্য
বিপুল পরিমাণ লোকসান দেয়া বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের দর বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। ৪ টাকার শেয়ার এক দিনে সর্বোচ্চ পরিমাণ বাড়ার সুযোগ ছিল ৪০ পয়সা। বেড়েছেও তা।
এমারেল্ড অয়েল কোম্পানির নতুন পর্ষদ পুনর্গনের পর এই কোম্পানিটির শেয়ার দরও ছুঁয়েছে এক দিন বাড়ার প্রান্তসীমা।
শেয়ার দর ১২ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩ টাকা ৩০ পয়সা। বৃদ্ধির হার ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ।
সিঅ্যান্ডিএ টেক্সটাইল লিমিটেডেরও দর পরপর তিন দিন ছুঁয়েছে দর বৃদ্ধির প্রান্তসীমা। শেয়ার দর ২ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২ টাকা ৬০ পয়সা।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে। ৪ টাকা ৭০ পয়সার শেয়ারের দর বেড়ে হয়েছে ৫ টাকা ১০ পয়সা।
বিশ্লেষক মত
দুর্বল শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের ঝোঁকার বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের–বিএমবিএ সভাপতি ছায়েদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যারা জেড ক্যাটাগরির কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছেন তারা জেনেশুনে ঝুঁকি নিচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘বিএসইসি একটি পর্যায় থেকে লোকসানি ও বন্ধ কোম্পানিগুলো চালু করার সম্ভাবনা যাচাইয়ে পর্ষদ পুনর্গঠন করছে। এটাকে আগামীতে শেয়ারের দর বাড়বে ভেবে যারা বিনিয়োগ করছেন তারা একদিকে নিজের বিনিয়োগ ঝুঁকিতে ফেলছেন, অপরদিকে লোকসানের পথে হাঁটছেন।’
বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আ ন ম আতাউল্লাহ নাঈম বলেন, ‘বিএসইসি যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটা অবশ্যই প্রশংসনীয়। কোম্পানিগুলো চালু হোক সেটা আমরা সবাই চাই। কিন্তু এটা সময়সাপেক্ষ বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘জেড ক্যাটাগরির শেয়ার আজ কেনার ১০ দিন পর বিক্রির উপযুক্ত হবে। এখন শেয়ারের দর বাড়ছে, ফলে যাদের হাতে বেশিসংখ্যক শেয়ার আছে, তারা সেগুলো বিক্রি করে বের হয়ে যাচ্ছেন। আর সেগুলো কিনছেন গুজবে পড়া বিনিয়োগকারীরা।
‘এখন যারা শেয়ার কিনছেন, তাদের বিক্রির সময় তখন আর দর পাবেন না। ফলে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগের আগে অবশ্যই ভেবে বিনিয়োগ করা উচিত।’
সূচক ও লেনদেন
বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে-ডিএসই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২০ দশমিক ১৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৮৮ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস সূচক ৩ দশমিক ১০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৪২ পয়েন্টে।
বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র। বেশির ভাগ শেয়ারের দর বাড়লেও কমেছে সূচক।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ১৫ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ০৯২ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ৩৫৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৩১টির, দর কমেছে ১২৬টির, দর পাল্টায়নি ৯৯টির।
লেনদেন হয়েছে ৭৭৫ কোটি টাকা। আগের দিন সোমবার লেনদেন হয়েছিল ৮৩৩ কোটি টাকা। ফলে এই সময়ে লেনদেন কমেছে ৫৮ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে-সিএসই প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৬৮ দশমিক ৩১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৯২৮ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ২৪০টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৮৭টির, কমেছে ৯৬টির, পাল্টায়নি ৫৭টির।
লেনদেন হয়েছে ৩২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
লেনদেনে এগিয়ে যেসব কোম্পানি
৩ হাজার কোটি টাকার সুকুক বন্ড ছাড়ার খবরে চাঙা ছিল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিবিধ খাতের কোম্পানির বেক্সিমকো লিমিটেড। সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে এই কোম্পানির।
কোম্পানিটির ১ কোটি ৭০ লাখ ২০ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৪৫ কোটি টাকায়। তবে আগের দিনের তুলনায় এক টাকা ৪০ পয়সা দাম কমেছে। আগের দিন দাম ৮৫ টাকা ৪০ পয়সা হলেও এখন তা দাঁড়িয়েছে ৮৪ টাকা।
তারপরেই ছিল রবি আজিয়াটা, যার ১ কোটি ৪৪ লাখ ৯৪ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকায়।
প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দামও বেড়েছে। ৪৬ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৯ টাকা ২০ পয়সা।
বেক্সিমকো ফার্মার ২৪ লাখ ৫২ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকায়।
দাম কমেছে এই কোম্পানিরও। ১৯৪ টাকা ১০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৮৮ টাকা ৪০ পয়সা।
লংকাবাংলা ফিন্যান্সের ১ কোটি ৩ লাখ ১৬ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৬ কোটি ২৯ লাখ টাকায়।
দর হারিয়েছে এই কোম্পানিও। ৩৫ টাকা ৮০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৩৪ টাকা ৩০ পয়সা।
সবচেয়ে বেশি লেনদেনের তালিকায় ছিল লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ, সামিট পাওয়ার, জিবিবি পাওয়ার।
আগ্রহ ও অনাগ্রহের কোম্পানি
বুধবার ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে দুটি কোম্পানির। বিআইএফসি ও ইনফরমেশন সার্ভিস লিমিটেডের শেয়ার দর বাড়ার হার ১০ শতাংশ।
ফাইনফুডের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
নতুন শেয়ার ইজেনারেশন লিমিটেডের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এ নিয়ে টানা সপ্তম দিনের মতো সর্বোচ্চ পরিমাণ বাড়ল এই কোম্পানির শেয়ার দর।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের শেয়ার দর বেড়েছে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ।
এছাড়া এ তালিকায় ছিল সাফকো স্পিনিং, রবি, আনলিমা ইয়ার্ড ।
দরপতনের দিক দিয়ে শীর্ষে ছিল রূপালী ব্যাংক, যার দর কমেছে ৫.৭৪ শতাংশ বা এক টাকা ২০ পয়সা।
শ্যামপুর সুগারের দাম কমেছে দুই টাকা ২০ পয়সা বা ৪.৮৬ শতাংশ।
ম্যাকসনস স্পিনিং, সাইফ পাওয়ারটেক, লংকা বাংলা ফিন্যান্স এবং জিবিবি পাওয়ারও আছে সর্বাধিক দর হারানোর তালিকায়।