টানা মূল্য পতনের ধারা থেকে অবশেষে বের হয়ে এলো পুঁজিবাজারে বাজার মূলধনের দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা ব্যাংকিং খাত। দর বৃদ্ধির হার খুব বেশি না হলেও সিংহভাগ শেয়ারের দর বৃদ্ধিই এই খাতের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি তৈরি করেছে।
বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ব্যাংক ও বিমায় ভর করে বাড়ল মূল্য সূচক। আগের দিনের তুলনায় লেনদেনও বেড়েছে ৪০ শতাংশ।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণায় সীমা বেঁধে দেয়ার পর আর্থিক খাতের প্রায় সব কটি শেয়ারেরই দর হারিয়েছে।
আগের দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক সিদ্ধান্তে জানায়, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যত মুনাফাই করুক না কেন, তারা শেয়ারধারীদের সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি দেড় টাকার বেশি লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে না। আর যাদের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের বেশি, তারা কোনো লভ্যাংশই দিতে পারবে না।
এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকিং খাতে লভ্যাংশ ঘোষণায় লাগাম টানে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেদিন জানায়, ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদে আর সমপরিমাণ বোনাস লভ্যাংশ হিসেবে দিতে পারবে। শর্তভেদে কোনো কোনো ব্যাংক সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিতে পারবে।
এই ঘোষণার পর ব্যাংক খাতে টানা দরপতন হয়েছে। বাজার বাড়ুক বা কমুক, এই খাতে বেশির ভাগ শেয়ারের দর কমেছে।
প্রায় প্রতিটি ব্যাংকের শেয়ার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ দর হারানোর পর অবশেষে থামল সেই পতন।
তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে বেড়েছে ২৩টি ব্যাংকের শেয়ারের দর। কমেছে পাঁচটির আর পাল্টায়নি দুটির দর।
আবার আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ ঘোষণায় লাগাম টেনে নেয়ার পর এই খাতের ২২টি কোম্পানির মধ্যে দর হারিয়েছে ১৬টি, পাঁচটি অপরিবর্তিত আছে। একটির দর বেড়েছে সামান্য।
এই খাতের আরও একটি কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত হলেও সেটি অবসায়নের সিদ্ধান্ত হওয়ায় স্থগিত আছে লেনদেন।
লভ্যাংশ ঘোষণার মৌসুমে বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তে নাখোশ বিনিয়োগকারীরা। তারা বলছেন, পুঁজিবাজারে এমনিই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার দর খুব বেশি ওঠা-নামা করে না। লভ্যাংশ দেয়ার সময় হলে বিনিয়োগকারীরা এসব শেয়ারের প্রতি আগ্রহী হন। কিন্তু এমন সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের লভ্যাংশের সীমা নির্ধারণ করে দেয়াটা বাজারের জন্য নেতিবাচক হয়েছে।
- আরও পড়ুন: ব্যাংকের শেয়ার: উত্থানেও নেই, নেই পতনেও
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা কাম্য নয়। তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য প্রভিশন সংরক্ষণের নির্দেশ দিতে পারে, বিনিয়োগের ক্ষেত্র চিহ্নিত করে দিতে পারে। কিন্ত কোনো কোম্পানির সামর্থ্য আছে, তাকে লভ্যাংশ দেয়া থেকে বিরত করে ফান্ডামেন্টাল ধরে রাখার কোনো মানে নেই।’
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিএসইসিকেও এগুলোর দিকে নজর দিতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
লেনদেন
সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে সূচক কমলেও পরে বেশির ভাগ শেয়ারের দর বাড়ায় সূচক বাড়ে।
দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩০ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪১৬ পয়েন্টে।
এ নিয়ে টানা পাঁচ দিন পতনের পর সূচক বাড়ল দুই দিন। আগের দিনও ৬৭ পয়েন্ট সূচক বেড়েছিল।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস সূচক ৫ দশমিক ১৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২২৫ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৯ দশমিক ৪২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৫ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ৩৪৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৬৮টির, কমেছে ৬৩টির, পাল্টায়নি ১১৫টির।
লেনদেন হয়েছে মোট ৭৪৬ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৫৩০ কোটি টাকা। এ হিসেবে এক দিনের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ২১৬ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে-সিএসই বৃহস্পতিবার ৬০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৬৫০ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ২২০টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৯৫টির, কমেছে ৬৪টির, পাল্টায়নি ৬১টির। মোট লেনদেন হয়েছে ২৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
খাতভিত্তিক লেনদেন
বৃহস্পতিবার খাতভিত্তিক লেনদেনে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে ছিল বিমা খাত।
এই খাতের ৪৯টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৪৪টির। পাল্টায়নি তিনটির। আর কমেছে দুটির দর।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ২১ কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৫টির, কমেছে দুটির। অপরিবর্তিত আছে চারটির।
প্রকৌশল খাতেও বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে। ৪২টি কোম্পানির মধ্যে বেড়েছে ২২টির, কমেছে তিনটির, অপরিবর্তিত আছে ১৭টির দর।
লেনদেনে ঘুরেফিরে চার কোম্পানি
পুঁজিবাজারে দিনের লেনদেনে ঘুরেফিরেই আসছে চার কোম্পানি। বেক্সিমকো লিমিটেড, রবি, লংকাবাংলা ফিন্যান্স ও বেট বাংলাদেশ-বিএটিবিসি।
লেনদেনের শীর্ষে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড। এদিন কোম্পানিটির ১ কোটি ৪৪ লাখ ৩৯ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১২৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকায়।
রবির ১ কোটি ৩৩ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫৮ কোটি ৪১ লাখ টাকায়।
লংকাবাংলা ফিন্যান্সের ১ কোটি ৪৫ লাখ ৮৬ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫১ কোটি ১৯ লাখ টাকায়।
বেট বাংলাদেশ-বিএটিবিসির ২ লাখ ৭১ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪১ কোটি ৩৯ লাখ টাকায়।
এই চার কোম্পানির মোট ২৭৪ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে, যার মোট লেনদেনের প্রায় ৩৬ শতাংশ।
এ ছাড়া এ তালিকায় ছিল সামিট পাওয়ার, লাফার্জ হোলসিম, ওরিয়ন ফার্মা, বেক্সিমকো ফার্মা।
আগ্রহ ও অনাগ্রহের কোম্পানি
বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে-ডিএসই দর বৃদ্ধির দিক দিয়ে শীর্ষে ছিল আরামিট সিমেন্ট, যার দর বেড়েছে ৯.৯৫ শতাংশ।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৯.৮৭ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ওরিয়ন ফার্মার দর বেড়েছে ৯.৮০ শতাংশ।
নতুন তালিকাভুক্ত ই পাওয়ার জেনারেশনের ৯.৭৭ শতাংশ, ভ্যানগার্ড এএমএল রূপালী ব্যাংক ব্যালেন্স ফান্ডের দর বেড়েছে ৯.৩০ শতাংশ।
এছাড়া সামিট পাওয়ারের ৭.৪৮ শতাংশ, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের ৬.৬৯ শতাংশ দর বেড়েছে।
দরপতনের দিক দিয়ে বৃহস্পতিবার শীর্ষে ছিল প্রাইম লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স লিমিটেড, যার দর কমেছে ৫.৫৫ শতাংশ। সিএনএ টেক্সটাইলের দর কমেছে ৫ শতাংশ। আইডিএলসি’র দর কমেছে ৪.৭৩ শতাংশ।
সবচেয়ে বেশি দরপতন হওয়া ১০টি কোম্পানির মধ্যে ছয়টিই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের।