চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম পোশাকপল্লি। এরই মধ্যে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতিকে (বিজিএমইএ) বরাদ্দ দেওয়া জমিতে শুরু হয়েছে এ পোশাকপল্লি করার প্রক্রিয়া।
পোশাকপল্লি গড়ার জন্য বিজিএমইএকে ৫০০ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। বরাদ্দ দেওয়া জমির মধ্যে ৩২১ একরজুড়ে গড়ে উঠবে শিল্পকারখানা। বাকি জমি বর্জ্য শোধনাগার ও অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ এবং লেকসহ বিভিন্ন পরিষেবা-সুবিধার জন্য ব্যবহার করা হবে। সেখানে মোট ৫৯টি কোম্পানি যাওয়ার কথা রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ৩৭ কোম্পানি যাচ্ছে। অন্য ২২ কোম্পানির সঙ্গে পরে চুক্তি হবে। এই পোশাকপল্লিতে সব মিলিয়ে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের কথা রয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার কোটির সমান।
বিজিএমইএ চট্টগ্রামের পরিচালক মোহাম্মদ আতিক বলেন, ‘পোশাকশিল্পের জন্মস্থান চট্টগ্রাম। এখানে বন্দরের সুবিধা রয়েছে। দেশে উৎপাদিত সব পোশাক রপ্তানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। তাই চট্টগ্রামে পোশাকপল্লি হলে লাভবান হবেন উদ্যোক্তারা।'
মার্চে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সঙ্গে এসব কোম্পানির আলাদা আলাদা জমি লিজ চুক্তি হওয়ার কথা। চুক্তির পরপরই উদ্যোক্তারা শিল্পনগরে কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু করবে।
বিজিএমইএ মুন্সিগঞ্জের বাউশিয়ায় একটি পোশাকপল্লি করতে দুই যুগ ধরে চেষ্টা করে আসছিল। কিন্তু মালিকদের একাংশের অনীহার কারণে পোশাকপল্লির কাজ বেশি দূর এগোয়নি। বাউশিয়ায় পোশাকপল্লি স্থাপনে ব্যর্থ হওয়া বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, রাস্তাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ব্যবসায়ীদের এক বছরের মধ্যে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় সরকার। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে যেতে রাজি হন পোশাকশিল্প মালিকেরা। আর সে কারণে দেশের প্রথম পোশাকপল্লি হতে যাচ্ছে পোশাকশিল্পের জন্মস্থান চট্টগ্রামে।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, ‘বিজিএমইএ মুন্সিগঞ্জের বাউশিয়ায় একটি পোশাকপল্লি গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেখানে তারা করতে পারেনি। আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে জমি-গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানিসহ সব ধরনের সুবিধা দেব। এতে তারা আশ্বস্ত হয়েছে। তাদের জন্য সব পরিষেবা প্রস্তুত। যেহেতু মুনাফা হবে আলাদা, প্লটও হবে আলাদা। তাই সবার সঙ্গে আলাদা আলাদা চুক্তি সই হবে।'
বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের পোশাকপল্লিতে সবচেয়ে বেশি জমি পাচ্ছে ইপিলিয়ন স্টাইল লিমিটেড। এর মধ্যে ইপিলিয়ন ৫ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে।
ইপিলিয়ন স্টাইল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন আল মামুন জানান, তাদের কারখানায় ৭ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে যেতে আগ্রহী অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রাফিকস টেক্সটাইল লিমিটেড, কলম্বিয়া গার্মেন্টস লিমিটেড, ক্লিপটন কটন মিলস লিমিটেড, ভিজুয়াল নিটওয়্যার লিমিটেড, প্যাসিফিক কটন লিমিটেড ইত্যাদি।
এদিকে, বিজিএমইএর এই পোশাকপল্লিকে পরিবেশবান্ধব এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে চায় বেজা। বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর মোট ৩০টি অঞ্চলে বিভক্ত। এর মধ্যে জোন ২-এ ৯৩৯ একর এবং জোন ২ বি-এ ৪৭৪ একরের মাঝখানে পড়েছে বিজিএমইএর পোশাকপল্লি। এই দুটি জোনকেও পুরোপুরি গ্রিন বা সবুজ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশসহ পারিপার্শ্বিক এলাকায় বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান একনেক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৩৪৭ কোটি ২১ লাখ টাকা।
এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। বাকি অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে জোগান দেওয়া হবে।