অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, উন্নয়নে বিশ্ব স্বীকৃতি হচ্ছে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ। তিনি বলেন, ‘এই উত্তরণ হবে বাংলাদেশের জন্য একটি গৌরব ও সম্মানের বিষয়, যা পরিমাপযোগ্য নয়।’
শনিবার ‘টেকসই উত্তরণে বেসরকারি খাতের কার্যকর অংশীদারিত্ব’ শীর্ষক একটি অনলাইন কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত থেকে উত্তরণ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলার সফল বাস্তবায়ন। একই সঙ্গে এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছে তারই স্বীকৃতি।’
উত্তরণ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাড়তি প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা ও পর্যালোচনা করতে কর্মশালাটি আয়োজন করা হয়। সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এ কর্মশালা আয়োজন করে।
এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার। কর্মশালায় সম্মানিত অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআইর সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি বিষয়ক) এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ-সংক্রান্ত জাতীয় টাস্ক ফোর্সের সভাপতি মিজ জুয়েনা আজিজ। বিষয়ের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইআরডি সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পৃথিবীতে যখনই অর্থনৈতিক সংকট এসেছে, সব সংকটের সময়ই বাংলাদেশ খুব দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আগামীতে স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উত্তরণপরবর্তী সময়ের পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গেও বাংলাদেশ খাপ খাইয়ে এগিয়ে যাবে।’
এ জন্য তিনি দেশের বেসরকারি খাতের গবেষণা ও উন্নয়নের সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর আরও বেশি নজর দেয়ার আহ্বান জানান।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, উত্তরণপরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা হ্রাস পাবে। এ জন্য বাংলাদেশকে এখন থেকেই প্রস্তুত হতে হবে। এখন থেকেই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের প্রচেষ্টা শুরু করতে হবে।
ইআরডি সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন তার উপস্থাপনায় বলেন, সরকার জাতিসংঘের কাছে কোভিড-১৯ এর ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং সহজভাবে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের লক্ষ্যে উত্তরণপূর্ববর্তী স্বাভাবিক তিন বছরের জায়গায় বাংলাদেশ আরও দুই বছর বর্ধিত সময়সহ পাঁচ বছর প্রস্তুতিকাল চেয়েছে। তিনি জানান, সরকার আসন্ন সময়ে বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিবিড় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ মসৃণ ও টেকসই করার লক্ষ্যে একটি ক্রান্তিকালীন কৌশল প্রস্তুত করবে।
অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার উত্তরণপরবর্তী সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার লক্ষ্যে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। একই সঙ্গে তিনি রপ্তানির নতুন বাজার অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় প্রণোদনা প্রদান, স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া এবং ব্যবসা সহজীকরণ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নীতকরণের ওপর জোর দেন।
বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন জানান, সরকার ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম ক্রান্তিকালীন যে কৌশল সরকার প্রণয়ণ করতে যাচ্ছে, সেখানে বেসরকারি খাতের সক্রিয় অংশগ্রহণ রাখার পরামর্শ দেন। তিনি উত্তরণের প্রেক্ষাপটে বেসরকারি খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে এক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
বাংলাদেশ ২০১৮ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত সিডিপির সর্বশেষ ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় প্রথমবারের মতো স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হয়েছিল। জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী, কোনো দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সুপারিশ লাভ করে।
সিডিপির সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, আসন্ন ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় বাংলাদেশ পুনরায় উত্তরণের মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তিন থেকে পাঁচ বছরের প্রস্তুতিমূলক সময় শেষে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসবে।