করোনাসহ নানা কারণে ধস নেমেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) আয়ে। ফলে কমেছে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশও।
২০১৯-২০ অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য তিন শতাংশ নগদ লভ্যাংশের ঘোষণা দিয়েছে ডিএসই-এর পরিচালনা পর্ষদ। সোমবার দেশের প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জটির পরিচালনা পর্ষদ এই সিদ্ধান্ত নেয়।
আগের অর্থবছরে স্টক এক্সচেঞ্জটির শেয়ারহোল্ডররা পাঁচ শতাংশ হারে লভ্যাংশ পেয়েছিলেন।
ডিএসই-এর নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এবার স্টক এক্সচেঞ্জটির প্রকৃত আয় হয়েছে মাত্র ২৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ৭০ কোটি টাকা কম। আয় কমার হার প্রায় ৭২ শতাংশ।
এই হিসাবে ডিএসইর শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৫ পয়সা, আগের বছর যা ৫৪ পয়সা ছিল।
শুধু আয়ই নয়, শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্যও (এনএভি) কমেছে ডিএসই-এর। আগের বছর এনএভি ১০ টাকা ৬৫ পয়সা থাকলেও, এবার নেমে এসেছে ১০ টাকা ৩০ পয়সায়।
করোনায় স্টক এক্সচেঞ্জের আয় কমে যাওয়ায় এবার লভ্যাংশ কমেছে বলে জানান ডিএসই-এর একাধিক পরিচালক।
ডিএসই-এর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, লকডাউনে দু মাসের বেশি লেনদেন বন্ধ ছিল। ফলে কোনো আয় ছিল না, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে লভ্যাংশে।
এছাড়া স্থায়ী আমানত বা এফডিআরের সুদ হার কমাতে ডিএসই-এর আয় কমেছে বলে জানান তিনি।
বিভিন্ন ব্যাংকে সাড়ে ৬শ কোটি টাকার বেশি এফডিআর রয়েছে ডিএসই-এর। বন্ডে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ১০০ কোটি টাকার মতো। সিডিবিএলে বিনিয়োগ ৮১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আর বন্ডে স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ প্রায় ১০ কোটি টাকা।
এছাড়া ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্টের জন্য নতুন কোম্পানি সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিসিবিএল) ৪৫ শতাংশ মালিকানায় ১৩৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে ডিএসই-এর।
২০১৩ সালে ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হয়। এতে স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যরা বনে যান শেয়ারহোল্ডার। ফলে তারা স্টক এক্সচেঞ্জের আয় থেকে লভ্যাংশ পাওয়ার যোগ্য হন।
এর আগে স্টক এক্সচেঞ্জ আয় করলেও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সদস্যদের লভ্যাংশ পাওয়ার সুযোগ ছিল না।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় ডিএসই। পরের ২ অর্থবছরও একই হারে লভ্যাংশ দেয়া হয়।
কিন্তু এর পর থেকেই কমতে থাকে লভ্যাংশ। ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেয়া হয় মাত্র পাঁচ শতাংশ লভ্যাংশ।
এ দুবছর শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে ডিএসই-এর ব্যয় হয় ৯০ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এবার আয় হয়েছে তার চেয়ে অনেক কম। তাই লভ্যাংশ দিতে হয়েছে মুনাফার স্থিতি থেকে।
এর আগে গত জুনে আয়-ব্যয় পর্যালোচনায় পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে ডিএসই। অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের রাশ টানতে দায়িত্ব দেয়া হয় কমিটিকে। কিন্তু সেই কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের কোনো খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।