প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের (রেমিট্যান্স) ওপর ভর করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। রোববার পর্যন্ত রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৫০ কোটি (৩৯.৫০ বিলিয়ন) ডলার। এই রিজার্ভ দিয়ে দেশের দশ মাসের আমদানি দায় মেটানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম।
চলতি মাসের মধ্যেই রিজার্ভ ৪ হাজার কোটি ডলার ছাড়াবে বলে আশা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
প্রবাসী আয়ের পাশাপাশি রফতানি আয় এবং বিদেশি ঋণ সহায়তা রিজার্ভের অবস্থান শক্তিশালী করতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। ফলে করোনার মধ্যেও বৈদেশিক মুদ্রার নতুন উচ্চতা ছুঁলো।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, রিজার্ভ বাড়ার প্রধান কারণ প্রবাসী আয়। সেপ্টেম্বরে ২১৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে, যা একক মাস হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এক মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যানস আসে গত জুলাইতে, যার পরিমাণ ছিল ২৫৯ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক মো সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২ শতাংশ প্রণোদনা চালু করার পর থেকেই রেমিট্যান্স বাড়ছে।
চলতি বছরের মে মাসে করোনার মধ্যে যখন আমদানি-রফতানি একেবারে শূন্যের কোঠায় নেমে আসে, তখনও রেমিট্যান্স প্রবাহ ভালো থাকায় রিজার্ভ তিন হাজার ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়।
পলিসি রিসার্স ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, করোনার মধ্যে দেশে ফিরে আসতে হবে আশঙ্কায় প্রবাসীদের অনেকে সঞ্চয় ভেঙে দেশে পাঠিয়েছে।
তাছাড়া আমদানি ব্যয় কম থাকায় দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলার উদ্বৃত্ত থাকছে। এগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিনে নিয়ে রিজার্ভে যোগ করছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ২৬৭ কোটি ডলার কিনেছে।
এছাড়া করোনা ভাইরাসের প্রভাব মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগি সংস্থা থেকেও কিছু কিছু অর্থ আসতে শুরু করেছে। তবে তা এখনও উল্লেখযোগ্য নয় বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
গত বছরের ৪ অক্টোবর রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ২৪৩ কোটি ডলার।
এদিকে বর্ধিত রিজার্ভের একটি অংশ লাভজনক প্রকল্পে বিনিয়োগের একটি উদ্যোগ নেয়া হলেও এখন পর্যন্ত তা শুরু হয়নি।
এ নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দেশের সামগ্রিক বৈদেশিক বাণিজ্যের অবস্থান ভালো থাকায় বিদেশি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশকে ইতিবাচকভাবে দেখছে। এখন যদি রিজার্ভ থেকে বিনিয়োগ করতে গিয়ে ফলপ্রসূ না হয়, তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে।