২০১১ সালের ১৩ আগস্ট। ‘কাগজের ফুল’ সিনেমার লোকেশন দেখে মাইক্রোবাসে ফিরছিলেন নির্মাতা তারেক মাসুদ ও তার সঙ্গীরা। পথে মানিকগঞ্জের ঘিওরে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তারেক, সাংবাদিক ও সিনেমাটোগ্রাফার মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন।
সেই ট্র্যাজেডিতে নির্মাতার সঙ্গে মৃত্যু হয়েছিল চলচ্চিত্রটিরও। ১১ বছর পর তাতে প্রাণ ফেরানোর ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন তারেকের নির্মাতা স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ।
আরও পড়ুন: সেই বাসচালক জামিরের মৃত্যুর ২ বছরেও ঘূর্ণিজাল, জীবন সংশয়ে স্ত্রী
সড়কে তারেকের নিহত হওয়ার বার্ষিকীর এক দিন আগে শুক্রবার রাজধানীর কাঁটাবনে পাঠক সমাবেশে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ ইচ্ছার কথা জানান।
মুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির আয়োজনে তারেক মাসুদের ‘চলচ্চিত্রযাত্রা’ বইয়ের পাঠ পর্যালোচনা শেষে ক্যাথরিনকে প্রশ্ন করা হয় ‘কাগজের ফুল’ নিয়ে। জবাবে তিনি জানান, এই প্রশ্নটা তাকে হাজারবার শুনতে হয়েছে।
ক্যাথরিন বলেন, “আমাদের সবারই স্বপ্ন ছিল ‘কাগজের ফুল’ সিনেমাটা। তখন কাজটা শুরুই হয়নি; আমরা শুধু স্ক্রিপ্টটা লিখেছিলাম। প্রি-প্রোডাকশনের কাজ এগিয়েছিল; লোকেশনগুলো দেখা হচ্ছিল।”
১১ বছর আগের স্মৃতিচারণা করে তার সঙ্গে বর্তমানের তুলনা করেন নির্মাতা ক্যাথরিন। তিনি বলেন, ‘১১ বছর আগে সিনেমার যে বাজেট ছিল, তখন সেটা আমাদের কাছে বিশাল পাহাড়। আমরা মনে করতাম এত বড় বাজেটের সিনেমা কী করে সম্ভব বাংলাদেশে। মনে হয় বাংলাদেশ তো অনেক এগিয়েছে চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে। ভালো ভালো কাজ হচ্ছে। এখন হয়তো সম্ভাবনা আছে এই কাজটা আবার নতুন করে শুরু করার।
‘আমার ইচ্ছা আছে। আমার সঙ্গে এবং আশপাশের মানুষ যারা আছেন, তারা যদি আগ্রহী থাকেন, তাদেরও এই দায়িত্বে অংশগ্রহণ করতে হবে। এই দেশের মাটিতে, এই জগতে যতদিন থাকি, সেটা অবশ্যই আমার ইচ্ছা কাজটা শেষ করার।’
বাইরে থেকে অনেকেই ব্যক্তি ক্যাথরিন মাসুদকে বুঝতে পারছিলেন না বলে জানান নির্মাতা। তিনি বলেন, ‘২০১১ সালের দুর্ঘটনার পর একজন মানুষের ওপর কী চাপটা পড়তে পারে। এক বছরের বাচ্চা আমার হাতে। আমার ওপর যে কী চাপ ছিল, সেটা কেউ বুঝতে পারেনি। আমিও বিষয়টি নিয়ে রাগারাগি করিনি।’
তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীর ও ক্যাথরিন একসঙ্গে কাজ করে আসছিলেন। দুজনকে হারিয়ে আরও দিশাহারা হয়ে পড়েন ক্যাথরিন।
তিনি বলেন, “মিশুকও যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলেও হয়তো ‘কাগজের ফুল’ সিনেমাটি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া যেত।
“বছরের পর বছর, আস্তে আস্তে একটা টিম পরিণত হয়। তারেক, মিশুক আর আমি কাজ শুরু করেছিলাম ‘আদম সুরত’ দিয়ে। ৩০ বছরের সম্পর্ক। এক মুহূর্তের মধ্যে সেই ৩০ বছরের সম্পর্ক নিঃশেষ হয়ে গেল।”
দুর্ঘটনায় নিহত নির্মাতাকে নিয়ে নানা ধরনের কাজ করেছেন ক্যাথরিন। তারেক মাসুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, বই ও ডিভিডি প্রকাশের মতো কাজের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
ক্যাথরিন বলেন, ‘হয়তো আমরা কেউই ভাবতে পারি না যে, ক্রিয়েটিভ পার্টনার তাদের লাইফ পার্টনার হারানোর পরে এত বড় একটা দায়িত্ব কীভাবে সামলায়। তারপরও কিন্তু আমি এগিয়ে গিয়েছি, চেষ্টা করেছি।’
চার বছর পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় এসেছেন ক্যাথরিন মাসুদ। শনিবার সারা দিন তিনি কাটাবেন ফরিদপুরে তারেক মাসুদের গ্রামের বাড়িতে।