জলবায়ু ও নদীর ভালোবাসার টানে জনপ্রিয় ৭টি ব্যান্ড নিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে ‘নদী রকস্’। মঙ্গলবার ভার্চুয়াল সভায় এ ভিন্নধর্মী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়।
চিরকুট ব্যান্ডের ভোকাল শারমিন সুলতানা সুমির ভাবনায় ‘নদী রকস্- জলবায়ু বাঁচাতে চলো নদীর কাছে যাই’ স্লোগানে দেশে প্রথমবারের মতো নদী আর সংগীতকে এক করে এ উদ্যোগ হাতে নিয়েছে সল্ট ক্রিয়েটিভস।
এতে অংশগ্রহণ করবে ব্যান্ড আর্ক, ক্রিপটিক ফেইট, আরবোভাইরাস, চিরকুট, বাংলা ফাইভ, এফ মাইনর ও স্মুচেস।
উদ্যোগটিকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছে সুইজারল্যান্ড দূতাবাস এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। জলবায়ু ও নদী রক্ষায় সচেতনতা তৈরি করতে এবং তরুণ প্রজন্মকে নদী সম্পর্কে সচেতন করতে দেশের সব নদীর নামে এক দিন একটি করে গান থাকবে- এমন লক্ষ্য নিয়েই উদ্যোগটি হাতে নেয়া হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সুইজারল্যান্ড দূতাবাস বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাথালি শুয়ার্ড, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ইউএনডিপি বাংলাদেশের রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ সুদীপ্ত মুখার্জী, স্কয়ার গ্রুপের ডিরেক্টর অঞ্জন চৌধুরী, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, ফ্রেন্ডশিপের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক রুনা খান, ‘নদী রকস্’ উদ্যোগের ইনিশিয়েটর ও সল্ট ক্রিয়েটিভস অ্যান্ড ইভেন্টস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর শারমিন সুলতানা সুমি।
শারমিন সুলতানা সুমি বলেন, ‘প্রথম সিজনে দেশের ৭টি জনপ্রিয় ব্যান্ড দেশের ৭টি নদী পদ্মা, কুশিয়ারা, সাঙ্গু, চিত্রা, পশুর, ডাহুক ও বুড়িগঙ্গা নিয়ে তৈরি করবে ৭টি গান এবং সেই নদীগুলোতেই চিত্রায়ণ হবে গানগুলোর মিউজিক ভিডিও। পরবর্তী সময়ে এই ব্যান্ডগুলো নিয়ে রাজধানীসহ সারা দেশে নদী রকস্ মেগা কনসার্টসহ নদীগুলোকে ঘিরে বিভিন্ন রকম ক্রিয়েটিভ পরিকল্পনা রয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আগের তুলনায় মানুষের মধ্যে নদীর প্রতি ভালোবাসা অনেকটাই কমে গেছে। অথচ এই নদীকে ঘিরে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থান; ও সৌর্ন্দয বৃদ্ধি করে এবং নদী আমাদের দেশের পরিচয়ও বহন করে থাকে।’
দেশের মধ্যে ১৩২০টি নদী থাকলেও বর্তমানে হারাতে হারাতে ৭২০টিতে পৌঁছেছে। নদী সম্পর্কে তরুণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জাগ্রত করতে হবে। তার জন্য সংগীত একটি বড় মাধ্যম হতে পারে। তাই নদী বাঁচাতে নদী রকস্-এর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন (এমপি) বলেন, ‘আগের মতো নদীর বর্তমান অবস্থা নেই। অনেক নদীই আজ হারাতে বসেছে। তাছাড়া প্রতিনিয়তই আমাদের অসচেতনতার কারণে বর্জ্য ও কলকারখানার পানি দিয়ে নদীকে দূষণ করছি। সেই দূষণকে রক্ষা করতে নদী রকস্ উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি শুয়ার্ড বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও বাংলাদেশের সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের কূটনৈতিক সম্পর্ক খুবই ভালো। বাংলাদেশর ঐতিহ্য রক্ষায় আমরা সব সময় পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের নদীকে বাঁচাতে এবং তরুণ প্রজন্মকে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে উৎসাহী করতে নদী রকস্ের সঙ্গে কাজ করছি।’
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘জলবায়ু ও নদী আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। এই নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে সভ্যতা ও জীবনের পথ চলা। কিন্তু আমাদের এই নদী ও জলবায়ুকে যদি আমরা রক্ষা করতে না পারি, তাহলে আজ ও আগামীর প্রজন্ম কীভাবে একটি বসবাসযোগ্য পৃথিবী পাবে। তাই সংগীতের শক্তিতে জলবায়ু ও নদী বাঁচাতে আসুন নদী রকসে্র মাধ্যমে আমরা একসঙ্গে কাজ করি।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকাসহ বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলো নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। কিন্তু শহরের যান্ত্রিক বর্জ্য বুকে ধারণ করে সেই নদীগুলোরই আজ বেহাল দশা। শুধু কর্তৃপক্ষ ও নীতিনির্ধারকরাই নয়, নদী ও জলবায়ু রক্ষায় সর্বস্তরের মানুষ, প্রতিষ্ঠান ও গোষ্ঠীকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
গত বছর ডিসেম্বর মাস থেকে নদী রকস্-এর আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয়েছে এবং পরবর্তী ৮ মাস ধরে এর কাজ চলবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।