তুমুল আলোচিত রেহানা মরিয়ম নূর সিনেমা মুক্তির পর অনেক দিন পর্যন্ত ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন সিনেমা হলে পাওয়া গেছে সিনেমাটির অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধনকে।
সিনেমা হলে তিনি নিজে দর্শকদের সঙ্গে সিনেমা দেখেছেন, কথা বলেছেন, জেনেছেন তাদের অনুভূতির কথা।
কেমন ছিল দর্শকদের অনুভূতি? রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানিয়েছেন সেসব অনুভূতির কথা।
আরও জানিয়েছেন তার নতুন সিনেমা, চরিত্র নিয়ে। যতটুকু আগামী তিনি দেখতে পাচ্ছেন, ততটুকু কেমন, জানিয়েছেন সেটিও।
আপনাকে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন সিনেমা হলে দর্শকদের সঙ্গে দেখা গেছে। তাদের প্রতিক্রিয়া কেমন?
আমার কাছে মনে হয়েছে, যারা আসলে মিডিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন এই রকম মানুষের প্রতিক্রিয়া আমাকে অনেক বেশি কানেক্ট করতে পেরেছে। চট্টগ্রামে আমি যখন গিয়েছি ওখানকার দর্শকদের প্রতিক্রিয়া অন্য রকম ছিল।
ওখানে একটা মেয়ে আমাকে একটা চিঠি দিয়েছে। ও চিঠিতে কী লিখেছে সেটা বলতে মানা করেছে। কিন্তু ও যখন আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছিল, তখন আমি বুঝতে পারছিলাম ওর কত কষ্ট হচ্ছে এবং অনেক সাধারণ দর্শক পেয়েছি যারা সরাসরি কানেক্ট করতে পেরেছেন রেহানাকে, ইমুকে; যে মেয়েটা ভিকটিম তার সঙ্গে।
মেয়েরা নানান ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হন, আমরা অধিকাংশ সময়েই এটা ডিনাই করি; সামাজিক প্রেক্ষাপটে আমরা ডিনাই করতে শিখে যাই এবং মনে হয় যেন ভালো মেয়েদের সাথে তো এটা একেবারেই হয় না।
তো যখন আমরা আমাদেরকে মানে দর্শকরা নিজেকে স্ক্রিনে দেখতে পারছেন, তখন খুব তাড়াতাড়ি রিলেট করতে পারছেন; এটা আমাকে ভীষণভাবে ছুঁয়ে গেছে। আনন্দ দিয়েছে বলব না, আমি জানি এটা কত কষ্টের। এই সাফোকেশন আমাকে দুমড়ে-মুচড়ে দেয়।
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আমি অনেক পুরুষকে দেখেছি যারা আমাকে বলেছেন সিনেমাটা তাদের কীভাবে ছুঁয়ে গেছে। এটাও খুব জরুরি, নারীর অধিকারের কথা নারী শুধু নিজেই বলবেন কেন। এটা পুরুষেরও বলতে হবে। সেই জায়গা থেকে যখন পুরুষরা এসে বলেন তারা কীভাবে রিলেট করেছেন, সেটাও আমাকে আসলে ছুঁয়ে যায়।
কারা কানেক্ট করতে পারছেন না।
আমি কাউকে পার্সোনালি অ্যাটাক করার জন্য বলছি না। আমার কাছে মনে হয়েছে অনেকে সিনেমা হলে গিয়েছেন শুধু সমালোচনা করার জন্য, সেই দলটা খুবই কম।
তবে আমি অনেক গঠনমূলক সমালোচনা পেয়েছি, যেটা আমাকে একটা ভালোলাগা দিয়েছে। একটা সিনেমার কাজই এটা যে এটা নিয়ে আলোচনা হবে, সমালোচনা হবে, সেটা নিয়ে মানুষের মতপার্থক্য হবে। তারা বিভিন্নভাবে একটা সিনকে চিন্তা করতে পারবে। ওই জায়গাটা আমার কাছে মনে হয় রেহানা মরিয়ম নূর খুব সফলভাবে করতে পেরেছে।
টিভি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুললে এখন প্রায়ই আপনাকে দেখা যায়। টাকা ভালোই কামাচ্ছেন।
(হাসি) হ্যাঁ, এটাই মনে হচ্ছে সবার। আমি জীবনে অনেক আনসার্টেইনিটির মধ্যে ছিলাম।
আমার এখনও মনে আছে, ২০১৪ সালে যখন আমার বাচ্চার বাবা আমাকে আর বাচ্চাকে রেখে চলে যায় আমার বাবার বাসায়, তখন আমার বাচ্চাকে সানবীমস স্কুলে ভর্তি করাতে হবে। ভর্তি করানোর সময় চেকে টাকার পরিমাণ লেখার পর আমার অ্যাকাউন্টে আর ৪-৫ হাজার টাকা ছিল।
ওই জায়গা থেকে অবশ্যই আমার আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে এবং সেটার জন্য আমি অবশ্যই গ্রেটফুল।
নতুন সিনেমায় অভিনয় করতে যাচ্ছেন, সেটা সম্পর্কে জানতে চাই।
যে সিনেমাটা করতে যাচ্ছি সেটাতে আমার চরিত্রটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। এটা খুব জরুরি, আমি যখন ভিশাল ভরদ্বাজের সঙ্গে কাজ করেছি, সেখানেও সবচেয়ে বেশি আনন্দের ছিল, যে চরিত্রটা করতে যাচ্ছি সেটা ভালো লাগছে কি না।
সেই জায়গা থেকে সাদিকের (নতুন সিনেমার পরিচালক) গল্পটা মেইল প্রোটাগনিস্ট ঘারানার কিন্তু আমার যে চরিত্র সেটা আমাকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছে।
আমার মেয়ে বলে যে মা তুমি একটা বাচ্চাদের সিনেমা করো। তুমি যখন যে সিনেমা করো তখন ওই চরিত্রটা হয়ে যাও।
আপনাকে ভক্তরা আইটেম নাম্বারে দেখতে চাইলে কী করবেন?
আমি যদি এই বয়সে এসে নাচ শিখতে পারি আমি ডেফিনেটলি করতে চাই কিন্তু আমি আমার জীবনে কখনও নাচ-গান-কবিতা-অভিনয় কিছু শিখিনি। নাচ এবং গান কিন্তু অভিনয়ের মতো না।
আমি যা না কিন্তু সেটা যদি এক্সপ্লোর করতে পারি, আমি সেটা করতে চাই। এখন আমি চ্যালেঞ্জ নিতে চাই।
অনেক কাজ করছেন, আগামীর কতটা দেখতে পান?
আমার জীবনটা আগামী ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি। এর পরে আমার জীবনের আর কোনো প্ল্যান নাই। এরপর আমি ডান। এর পরে কী করব জানি না। আমি খুব বেশি দূর পর্যন্ত জীবনকে দেখতে চাই না। আমি বর্তমানটাকে এনজয় করতে চাই।
আমরা শুধু শিখি ফিউচারের কথা চিন্তা করে বর্তমানকে নষ্ট করব, অতীতের কথা চিন্তা করে বর্তমানকে নষ্ট করব। এই শিক্ষা থেকে বের হওয়ার চেষ্টায় আমি আছি। সেই চেষ্টায় আমার ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জীবন দেখতে পাচ্ছি।
৬ জানুয়ারি শুরু হবে ৩৩তম পাম স্প্রিংস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। সেখানে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে রেহানা মরিয়ম নূর। যাচ্ছেন সেখানে?
হ্যাঁ, ৩ জানুয়ারি আমি, নির্বাহী প্রযোজক এহসানুল হক বাবু উৎসবে যোগ দিতে যাচ্ছি। সেখানে আছেন আমাদের আরেক সহপ্রযোজক রাজিব মহাজন। তিনিও আমাদের সঙ্গে উৎসবে থাকবেন।