বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কাব্যিক মূল্যবোধ

  • সম্পাদকীয়   
  • ১৪ অক্টোবর, ২০২৫ ২২:৩১

কবিতা, কাব্য লেখনী সর্বোচ্চ বোধশক্তি বিশিষ্ট উত্তম চিন্তা ধারণার উৎকৃষ্ট মানের শিল্প সাহিত্যের উপাদান। কাব্যে লেখনীতে কবির প্রাণ উৎসারিত নিবেদন, ভাবনার উৎসর্গের নৈবেদ্য উন্মোচিত প্রকাশিত, উদঘাটিত হয়। তার আত্মবিশ্বাস, আবেগ -অনুভূতি, মূল্যবোধ- দৃষ্টিভঙ্গি। যে মূল্যবোধ, নীতিনৈতিকতা শিষ্টাচার, জ্ঞান তার পরিবার, সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বই-পুস্তকসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অর্জিত। সেই বিশ্বাস, চিন্তা চেতনা, মূল্যবোধেরই পরিস্ফূটন, প্রতিফলন দেখা যায় তার কাব্যে, লেখনীতে।

কবির কাব্য, লেখনী হচ্ছে তার চিন্তা চেতনা, মানসিকতা, দৃষ্টিভঙ্গি, দেশাত্ববোধ ও রাজনৈতিক ভাবনাসহ মানবিক মূল্যবোধের স্বচ্ছ দর্পণ। যেখানে সমাজ জাতির সত্য মিথ্যা, ন্যায়- অন্যায়, সততা- আদর্শ, অসম অনাচার, কুসংস্কার, দুঃশাসন, ধর্মীয় বিশ্বাস, বিপ্লবী চেতনা, দেশ ও মানব প্রেম, রাজনীতি ও অর্থনীতিসহ সমাজের সার্বিক বিষয় সম্পৃক্ত। অবশ্য দ্বৈত চরিত্রের মূল্যবোধহীন ভয়াবহ বতিক্রম আছে যা এখানে আলোচ্য নয়।

কাব্যিক মূল্যবোধ একটি ইতিবাচক ধারাবাহিক জীবনমুখী পরিবর্তনের মূল্যবোধ। কবি যদি তার আত্বার বিশ্বাস, কবির উপলব্ধিতে কাব্য রচনা করেন সমাজ, সংসার, দেশ জাতি, মানবকল্যাণে, মঙ্গলের উদ্দেশ্যে। প্রকৃত কবি নিমগ্ন চাষির মতো মনের মাধুরী মিশিয়ে যতনে শব্দের চাষ কর্ষনে, বাক্য, চরণে, স্তবকে কাব্য নামক মাঠে প্রেম- মানবতা, বিপ্লবী চেতনা ও দেশাত্ববোধ তৈরি করে। সমাজ সংসার দেশ জাতি ও মানবকল্যাণ মানুষের কর্তব্য, দায়বদ্ধতা, সকল অন্যায়, অশুভ অপশক্তি, বঞ্চনা-দুঃশাসনের বিরুদ্ধে অকপটে নির্মম সত্য প্রকাশের দুর্বার দুঃসাহসী প্রতিবাদের বীজ রোপণ করে ।

কবির কাব্যে বাস্তব আলোয় মুক্ত উদার মানবিক মূল্যবোধ সমৃদ্ধ বিশ্বাসের প্রকাশ থাকে যা অন্ধকারে সমাজ সংসারে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে উন্নয়নের গতিপথ পরিবর্তন করে। সকল নেতিবাচক, জীবনবিমূখ মূল্যবোধকে প্রতিহত করে দেশ ও মানবপ্রেমে উজ্জীবিত, ঐক্যবদ্ধ ও অন্যায় দুঃশাসন রোধে বিপ্লবী চেতনায় জাগ্রত করে। ঘুমন্ত অন্ধবিশ্বাসী মানুষকে জাগরণের মাধ্যমে সুন্দর মানবিক সমাজ সভ্যতা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সঠিক পথ দেখায়। যা সমাজ হবে জাত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষের জন্য মঙ্গলময়।

পক্ষান্তরে যে কাব্যের বিষয় বস্তুতে শুধু কবির নিজস্ব অন্ধ বিশ্বাস, অলীক চিন্তা- চেতনা, অযৌক্তিক ভাবনা-যুক্তিহীনবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি, আবেদন, আত্ম-প্রশংসার প্রকাশ হয়। যে কাব্য পাঠে মানুষের চৈতন্য না ফিরে, বোধ সম্বিত না জাগে, আর সেই কাব্যে যদি সমাজের সংসারের সর্বজনীন, শিল্প -সাহিত্য সংস্কৃতি, সভ্যতা, জগৎ সংসারের কল্যাণের বিষয় সম্পৃক্ত না হয়, তাহলে সেই কবিতা কাব্য লেখনী বৃথা চিরকুট কেবল। অর্থাৎ যে লেখনীতে সমাজ পরিবর্তনে মানব কল্যাণে ইতিবাচক বার্তা মূল্যবোধ না থাকে তবে সেই কাব্য লেখনী আবর্জনা মাত্র।

সবশেষে কাব্যে কবিকে শুধু প্রকৃতি প্রাণীকুল জৈবিক , ব্যক্তি স্বার্থে জীবনের প্রেম ভালোবাসার স্তুতিবাক্য সংমিশ্রণ করলে হবে না। কাব্যে সংযোজন করতে হবে জীবনমুখী ইতিবাচক মূল্যবোধ, দেশ ও মানব কল্যাণে প্রকৃত মানব ধর্ম, মানবতার জয়বার্তা- মন্ত্রবানী।

যে কাব্যে অন্ধকার, ভেদাভেদ, বৈষম্য ও অপশক্তি, অপশাসন অনিয়ম অনাচার মোচনে জাগরণী শব্দ বাক্যে, চরণ, স্তবকের ঝংকারে কাব্যিক সৌন্দর্য গুণে মানুষের চেতনাবোধকে জাগ্রত করবে, সেই কাব্য লেখনীই যুগ যুগ ধরে কালজয়ী হবে। সহজবোধ্য, প্রাঞ্জল ইতিবাচক মানবিক মূল্যবোধ সমৃদ্ধ বাস্তব প্রকৃত মানসম্মত কাব্য লেখনীই পরিবার, সমাজ, গোষ্ঠী জাতি তথা সমগ্র পৃথিবীর সকল বিভীষিকা, পাপ পঙ্কিলতা, গ্লানি আধার ঘোচাবে এবং মানুষকে আলোকিত করবে ।

এ বিভাগের আরো খবর