বাংলাদেশের শিক্ষার বেহাল অবস্থার প্রতি শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক এবং শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের হতাশায় গোটা দেশের জনগণ উদ্বিগ্ন। ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উচ্ছৃঙ্খলতা, অব্যবস্থা, অনিয়ম, মব ভায়োলেন্স, বিভিন্ন দাবি আদায়ের হুংকার, লেখাপড়ার প্রতি অনিচ্ছার প্রবণতা লক্ষণীয়। তারপর ধীরে ধীরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মের পথে যাওয়ার চেষ্টা করলেও গুণগত শিক্ষার মান বাড়ানো যাচ্ছে না। আমরা জানি শিক্ষা হলো- এমন একটি পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে জ্ঞান, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। জন্মের পর থেকে একটি শিশুকে বড় হওয়া পর্যন্ত, তার সার্বিক বিকাশ থেকে শুরু করে সমাজের একজন সৃষ্টিশীল এবং প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যম হচ্ছে শিক্ষা। এ জন্যই সমাজ-বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে সকল মহান ব্যক্তিরাই বলে গেছেন শিক্ষাজাতি গঠন করে এবং শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষা জাতির- চরিত্র গঠন করে। আর শিক্ষাঙ্গন হলো-সেই প্রতিষ্ঠান, যেখানে জ্ঞান, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করার স্থান। শিক্ষাঙ্গন, যেখানে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলতে সক্ষম এবং চরিত্র গঠন ও সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে প্রকৃত মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে থাকে। তাই শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন একে অপরের পরিপূরক। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটিকে ভাবা অসম্ভব। ফলে শিক্ষার এবং শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ সব সময় থাকতে হবে সর্বাধিক উত্তম। অথচ ব্যাথিত হই যখন দেখি রাজধানীর ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ বা আইডিয়াল কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে অহরহ বিবেধ-সংঘর্ষ। যা কারও জন্য কাম্য নয়। জোড়পূর্বক সচিবালয়ে প্রবেশ করা- শিক্ষার্থীদের কাজ নয়। ইতোমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভদ্রতা, শ্রদ্ধা, সম্মান, ভালোবাসা এবং মানবতার পরিবর্তে হিংসা, বিদ্ধেষ, অহংকার, অহমিকা, মবের দৌরাত্ম্য, অপমান, অপদস্ত, মারামারি, অভদ্রতা ইত্যাদির আর্বিভাবে দেশ ও দেশের মানুষ আতঙ্কিত ও হতাশ। কেউ কী বলতে পারবে আমাদের এই ছোট্ট বাংলাদেশে শিক্ষার এবং শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ সর্বাধিক উত্তম? না কখনোই না বরং দিন দিন খারাপের দিকে। সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ বড় ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে দাড়িয়েছে যা কখনোই কাম্য ছিল না। এতে করে মারাত্মকভাবে কলুষিত হচ্ছে শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ। এতে সচেতন মহল আতঙ্কিত । শিক্ষাঙ্গনে যেভাবে লেখাপড়ার পরিবর্তে চাঁদাবাজি বা মব ভায়োলেন্স ঢোকেছে তাতে এক শ্রেণির ছাত্র সমাজ জড়িত হয়ে পড়েছে তাতে গোটা শিক্ষার্থীরা দেশের বাইরে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে। তাদের বক্তব্য এদেশে উচ্চশিক্ষার তেমন পরিবেশ বা শিক্ষার গুণগত মানের অভাব দেখা দিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এক প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া, অনৈতিক অর্থ আদায়, শিক্ষাঙ্গনে হুমকি, তাণ্ডব কিছুই বাদ নেই। এমন কী শিক্ষাঙ্গনে পুলিশের প্রবেশ বা শিক্ষার্থীদের অযৌক্তিক দাবির বিরুদ্ধে পুলিশকে লাঠিপেটা করতে দেখা যায়। অনেক শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষক-ছাত্রীর সঙ্গে এমন সব কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িত করছে তাতে লজ্জায় অভিভাবক সমাজ ক্ষুব্ধ। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সকল প্রকার অনিয়ম ও উচ্ছৃঙ্খলতা দূর করে শিক্ষাঙ্গনে সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলতে সচেষ্ট হওয়ার জন্য দেশের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী